CGW 2022: কমনওয়লথে সোনার খোঁজে নামতে চলেছেন দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করা সাহসী পপি হাজারিকা
Commonwealth Games 2022: অসমের ২৩ বছরের পপি হাজারিকা (Popy Hazarika) ভারতকে আসন্ন বার্মিংহ্যাম কমনওয়েলথে গেমসে সোনা দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে রয়েছেন।
নয়াদিল্লি: অসমের ২৩ বছরের পপি হাজারিকা (Popy Hazarika) ভারতকে আসন্ন বার্মিংহ্যাম কমনওয়েলথে গেমসে (Commonwealth Games 2022) সোনা দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে রয়েছেন। পপি হলেন এক মহিলা ভারোত্তলক। এ বারের কমনওয়েলথে সোনা জেতার অন্যতম দাবিদার তিনি। অসম পুলিশে যোগ দেওয়ার জন্য একটা সময় ভারোত্তলন করাই ছেড়ে দেবেন ভেবেছিলেন পপি। কিন্তু সেই পপিই এ বার দেশকে সোনা দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। টোকিও অলিম্পিকে মীরাবাঈ চানু রুপো পাওয়ার পর থেকে ভারতের ভারোত্তলকদের নিয়ে একটা আলাদা উত্তেজনা দেখা গিয়েছে। চরম দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে বর্তমানে বিশ্বমঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়েছেন পপি। মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবাকে হারান পপি। তাঁর বাবা গাড়ির চালক ছিলেন। সেই গাড়ি পরিষ্কার করতে গিয়ে ইলেকট্রিক শক পেয়ে মারা যান পপির বাবা। পপিরা চার বোন। তার মধ্যে পপি সব থেকে ছোট। বাবা মারা যাওয়ার পর পপির মা মেয়েদের মানুষ করার জন্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তিনি জানতেন, মেয়েরা লেখাপড়া করে উন্নতি করতে পারলে তবেই তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
পপির মা দীপ্তি বলেন, “যখন আমার স্বামী মারা যায়, আমি জানতাম আমার পরিবারের জন্য আমার কী করা দরকার। একটা স্কুলে আমি অস্থায়ী রাঁধুনি হিসেবে যোগ দিই। সেখানে প্রতি মাসে আমাকে ২,৫০০ হাজার টাকা দেওয়া হত। এর পাশাপাশি ধানক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করেও দিনে ১৫০-২০০ টাকা রোজগার করতাম আমি। যাতে আমি আমার মেয়েদের খেয়াল রাখতে পারি। তবে আমি যা যা করেছি, অন্য মা-বাবা থাকলেও তারা এটাই করত।”
একটা সময় মায়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ভারোত্তলন বন্ধ করে দেওয়ার কথা মাথায় এসেছিল পপির। তাঁর বান্ধবী ও রুমমেট ডিম্পি দত্ত তাঁকে বোঝায় ভারোত্তলন না ছাড়ার ব্যাপারে। পপি এ বিষয়ে বলেন, “ট্রেনিং করে করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমি আমার মায়ের জন্য কিছু করতে চাইছিলাম। তার জন্যই আমি অসম পুলিশের নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেখে সেখানে চেষ্টা করব ভেবেছিলাম। তবে আমার বান্ধবী ডিম্পি ও আমার কোচ আমার সঙ্গে বসে ভালোত্তলন কেরিয়ার নিয়ে আলোচনা করে। এবং তখন আমি ভাবতে থাকি এতগুলো বছর ধরে আমি মাকে পাশে পেয়েছি, ফলে আমি এভাবে মাঝপথ থেকে ভারোত্তলন ছেড়ে দিতে পারি না।” ব্যস এর পর ফের মনোযোগ সহকারে ভারোত্তলন প্রশিক্ষণ চালু হয় পপির।
গোলাঘাটের স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার হস্টেলে বান্ধবী ডিম্পির সঙ্গে থাকতেন পপি। কোচ দুলজিৎ বড়ুয়ার কাছে ট্রেনিং নিতেন পপি। ১২ জন বাচ্চার সঙ্গে একসঙ্গে ট্রেনিং করত পপি। সকালে ৩ ঘণ্টা ও সন্ধ্যেতে ৩ ঘণ্টা করে অনুশীলন করত পপি। সেখান থেকে গোলাঘাটের ট্যালেন্ট হান্ট স্কিম থেকে সাই ট্রেনিং সেন্টারে অনুশীলন করার সুযোগ পান পপি এবং তাঁর বান্ধবী।
পপি ২০১৬ সালে তেজপুরে রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। নাগপুরে জুনিয়র ন্যাশানালসে রুপোও জিতেছিলেন। ২০২০ সালে কলকাতায় সিনিয়র ন্যাশানালসে ২০২ কেজি ওজন তুলে রুপো পেয়েছিলেন পপি। এরপর পাতিয়ালায় হওয়া সিনিয়র ন্যাশানালসে ৫৯ কেজি বিভাগে ১৮৯ কেজি তুলে রুপো পেয়েছিলেন পপি। সেই বছরই ওড়িশায় তিনি ১৮৯ কেজি তুলে সোনা জিতেছিলেন। এরপর তিনি ২০২১ সালে তাসখণ্ডে হওয়া কমনওয়েলথ ওয়েটলিফ্টিং চ্যাম্পিয়নশিপে ১৮৯ কেজি তুলে রুপো পান। চলতি বছরে সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশানালসে ৬১কেজি বিভাগে সোনা জেতেন পপি। ছন্দেই রয়েছেন তিনি। যার ফলে আসন্ন কমনওয়েলথে তাঁর পদক জয়ের সম্ভবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।