Neeraj Chopra: নীরজ=নজির! অল্পেতে খুশি হয় দামোদর শেঠ কি? রয়েছে কলকাতা কানেকশনও…

Paris Olympics 2024: অল্পেতে খুশি হওয়ার পাত্র নন নীরজ। চোটের সঙ্গে লড়াই, নিজের সঙ্গেও। অলিম্পিকের সময় যত এগিয়ে আসে, তাঁর অস্বস্তিও বাড়ছিল। কোভিডের কারণে ২০২০ সালের অলিম্পিক এক বছর পিছিয়ে যায়। এটাই যেন শাপে বর হয়ে দাঁড়ায় নীরজের জন্য। ফিট হয়ে ওঠেন। পুরোদমে প্রস্তুতি সারেন। টোকিও অলিম্পিকে ৮৭.৫৮ মিটার জ্যাভলিন ছুড়ে অলিম্পিকে সোনার পদক।

Neeraj Chopra: নীরজ=নজির! অল্পেতে খুশি হয় দামোদর শেঠ কি? রয়েছে কলকাতা কানেকশনও...
Image Credit source: INSTAGRAM
Follow Us:
| Updated on: Jul 22, 2024 | 7:46 PM

অল্পেতে খুশি হয়…। নীরজ চোপড়ার সঙ্গে এই লাইনের কী অর্থ? এর দুটো কারণ। দামোদর শেঠ এবং অল্পেতে খুশি না হওয়া। এই দুটি বিষয় ছিল বলেই ভারতীয় ক্রীড়া এক সোনার ছেলে পেয়েছে। গোলমেলে লাগছে! আমরা মুখে যতই বলি, সব কিছুর কারণ থাকে না, আসলে প্রত্যেকটা বিষয়েরই যেন কারণ থাকে। নীরজ চোপড়ার ক্ষেত্রেও। বর্তমানের নীরজ চোপড়া আর ছেলেবেলার সঙ্গে যেন দামোদর শেঠের মিল পাওয়া যাবে। পরবর্তী মিলের উদাহরণ আমরা প্রতি মুহূর্তেই পাচ্ছি। বিষয়টা তবু পরিষ্কার করা প্রয়োজন। কোথা থেকে শুরু করা যায়? আসলে ভারতের এই জ্যাভলিন থ্রোয়ারকে নিয়ে যতই লেখা হোক, তাঁর সাফল্যের বিন্দুমাত্রও প্রকাশ করা যাবে না হয়তো।

একটা গ্রামের ছেলে, সে কেন হঠাৎ খেলায় ঝুঁকল। তাও এমন একটা স্পোর্টস বেছে নিলেন, যা হয়তো অধিকাংশ কল্পনাই করতে পারবেন না। নীরজ না থাকলে এই স্পোর্টস যেন আড়ালেই থেকে যেত। ভারত বর্ষে জ্যাভলিনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর নীরজ ছাড়া আর কাউকে ভাবাই যায় না। এ বার আসা যাক শুরুতে। হরিয়ানার পানিপথ জেলার খান্দ্রা গ্রামে জন্ম নীরজের। তাঁর বয়সি কিংবা বড়দের দেখতেন ক্রিকেটে মজে। কিন্তু নীরজের চেহারা ভারী হওয়ায় তাঁকে কেউ খেলতে নিত না। বাউন্ডারির বাইরে বল গেলে সেটা ছুড়ে দিতেন নীরজ। এতে তাঁর পরিশ্রম হত। যেন ফিটনেস ট্রেনিংও। ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকে। আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে নীরজের। ছোট্ট একটা ছেলে এত জোরে বল ছুড়ছে, বাউন্ডারির বাইরে থেকে এত্তটা দূরে! এক সিনিয়রের নজর এড়ায়নি।

পানিপথের শিবাজি স্টেডিয়ামে তাঁকে দেখেন সিনিয়র একজন। নীরজের থ্রো দেখে অবাক হন। তাঁর নাম জয়বীর সিং চৌধুরি। তিনি নিজে জ্যাভলিন থ্রোয়ার। নীরজকে এই খেলার সঙ্গে পরিচয় করান। নীরজও আনন্দ পেয়েছিলেন। কিন্তু জ্যাভলিন জোগার হবে কী করে! বিকল্প তো গ্রামেই রয়েছে! খেত থেকে আখ তুলে নিয়ে তাই ছুড়তেন। জয়বীরই নীরজকে নিয়ে যান পঞ্চকুলায় এক জ্যাভলিন ট্রেনারের কাছে। কোচ নাসিম আহমেদের সঙ্গে জ্যাভলিন ট্রেনিং শুরু হয়। কোনও বডিশেমিং নয়, উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ততদিনে দামোদর শেঠের মতো আর ভারী চেহারা ছিল না নীরজের। দীর্ঘ পরিশ্রমে একজন দুর্দান্ত অ্যাথলিট হয়ে উঠেছিলেন। নতুন কোচের তীক্ষ্ণ নজরে আরও উন্নতি করতে থাকেন। ধীরে ধীরে সর্বভারতীয় স্তরে নাম ডাক হয়। এরপর আন্তর্জাতিক স্তরেও।

এ বার আসা যাক, অল্পেতে খুশি হওয়ার বিষয়ে। মাত্র ১৩ বছরেই জ্যাভলিনের শুরু। তার দু-বছরের মধ্যেই অর্থাৎ ২০১২ সালে ১৫ বছর বয়সে অনূর্ধ্ব ১৬ জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন নীরজ। জাতীয় রেকর্ডও গড়েন। এরপর যুব অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জন। প্রথম আন্তর্জাতিক ইভেন্টেই রুপোর পদক। ২০১৫ সালে ১৮ বছরের আন্ত-রাজ্য ইভেন্টে সিনিয়র ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। পরের বছরই কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়।

২০১৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ। সোনার পদক জেতেন নীরজ। গুয়াহাটিতে সাউথ এশিয়ান গেমসেও সোনা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে নীরজের উত্তরণ নজরে পড়ে সেনা কর্তাদের। ২০১৭ সালে জুনিয়র কমিশন অফিসার হিসেবে আর্মিতে যোগ দেন নীরজ। তাঁকে সরাসরি রাজপুতানা রাইফেলসে নায়েব সুবেদারের ব়্যাঙ্ক দেওয়া হয়। সেনায় যোগ দেওয়ার পরই ভাগ্য বদল। আর্মির মিশন অলিম্পিকে বেছে নেওয়া হয় নীরজকে। আর্মি ট্রেনিংয়ের সুযোগ মেলে নীরজের। তাঁর পারফরম্যান্সে ক্রমশ উন্নতি হয়। ২০১৮ সালে কমনওয়েলথ গেমসে ৮৬.৪৭ মিটার জ্যাভলিন ছুড়ে ব্যক্তিগত রেকর্ড গড়েন। সে বছরই ডায়মন্ড লিগে ৮৭.৪৩ মিটার ছুড়ে নিজেকেই ছাপিয়ে যান। এশিয়ান গেমসে ৮৮.০৬ মিটারে গোল্ড মেডেল। এরপরই হতাশা। চোটের জন্য ৮ মাস ট্র্যাকের বাইরে নীরজ।

অল্পেতে খুশি হওয়ার পাত্র নন নীরজ। চোটের সঙ্গে লড়াই, নিজের সঙ্গেও। অলিম্পিকের সময় যত এগিয়ে আসে, তাঁর অস্বস্তিও বাড়ছিল। কোভিডের কারণে ২০২০ সালের অলিম্পিক এক বছর পিছিয়ে যায়। এটাই যেন শাপে বর হয়ে দাঁড়ায় নীরজের জন্য। ফিট হয়ে ওঠেন। পুরোদমে প্রস্তুতি সারেন। টোকিও অলিম্পিকে ৮৭.৫৮ মিটার জ্যাভলিন ছুড়ে অলিম্পিকে সোনার পদক।

দেশের প্রথম ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড অ্যাথলিট হিসেবে অলিম্পিকে সোনা জয়ের ইতিহাস গড়েন। ভারতের অপেক্ষার অবসান হয়। এরপর ডায়মন্ড লিগ ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। নীরজের লক্ষ্য প্যারিসে তাঁর অলিম্পিক সোনা ধরে রাখা। শুধু তাই নয়, তাঁর কেরিয়ারের আরও একটা লক্ষ্য রয়েছে। ৯০ মিটারের সীমা। কে জানে প্যারিসে হয়তো জোড়া ইচ্ছেই পূরণ হল নীরজের!