AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Synthetic Human Genome: ‘মানুষ’ বানাবে বিজ্ঞান! আশীর্বাদ না অভিশাপ?

বিজ্ঞান কী করতে পারে না? এক স্কুলপড়ুয়ার প্রশ্নের মুখে বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী বলেছিলেন, বিজ্ঞান দুটো জিনিস পারবে না। জল আর ডিএনএ - কখনও তৈরি করা যাবে না। জল নিয়ে এখনই কিছু বলার নেই। তবে ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ তৈরির কাজ কিন্তু বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়েছে। বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে ল্যাবরেটরিতে তৈরি হবে কৃত্রিম ডিএনএ। এবং সেটা তৈরি হবে মানুষের জিন দিয়েই।

Synthetic Human Genome: ‘মানুষ’ বানাবে বিজ্ঞান! আশীর্বাদ না অভিশাপ?
| Edited By: | Updated on: Jul 19, 2025 | 9:09 PM
Share

বিজ্ঞান কী করতে পারে না? এক স্কুলপড়ুয়ার প্রশ্নের মুখে বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী বলেছিলেন, বিজ্ঞান দুটো জিনিস পারবে না। জল আর ডিএনএ – কখনও তৈরি করা যাবে না। জল নিয়ে এখনই কিছু বলার নেই। তবে ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ তৈরির কাজ কিন্তু বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়েছে। বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে ল্যাবরেটরিতে তৈরি হবে কৃত্রিম ডিএনএ। এবং সেটা তৈরি হবে মানুষের জিন দিয়েই।

অ্যালবার্ট আইনস্টাইন শুনলে কী ভাবতেন জানি না। তবে দুনিয়ার তাবড় বিজ্ঞানী এবং চিকিত্‍সকদের একটা অংশ চমকে উঠেছেন। চমকে ওঠার মত ব্যাপারই বটে। বিশ্বের অন্যতম বড় এনজিও ওয়েলকাম গ্রুপ এই কৃত্রিম ডিএনএ তৈরির গবেষণা শুরু করেছে। প্রচুর টাকা ঢেলে তাঁরা দুনিয়ার সেরা বিজ্ঞানীদের নিয়ে এসেছে। প্রাথমিকভাবে একটা গবেষণাগারও তৈরি হয়ে গিয়েছে। নাম হিউম্যান ডিএনএ রি-ডিজাইন অ্যান্ড রি-অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম। লক্ষ্য, মানুষের ডিএনএ- আদলে কৃত্রিম ডিএনএ তৈরি করা। ছোটবেলায় লাইফ সায়েন্সে আমরা ডিএনএ – জিনের কথা তো অনেক পড়েছি। আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের ডিএনএ নামক যে উপাদান, তা আমাদের জিনগত তথ্য বহন করে। ‍ডিএনএ থেকেই জিনের জন্ম। জিনকে ঘিরে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলে মানুষের বেশিরভাগ অসুখ এবং রোগের উত্‍পত্তির কারণ জানা যাবে। অথচ জিনের গঠন ও চরিত্র নিয়ে অনেকটাই এখনও বিজ্ঞানীদের নাগালের বাইরে।

লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ অফ সায়েন্সের ডিন অফ সায়েন্স জেনিস মিলিব্যান্ডের দাবি, জিনের ব্যাপারে মানুষ মাত্র ১৪ শতাংশ প্রশ্নের উত্তর পেয়েছে। ৮৬ শতাংশ প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। ২০২৪ সাল নাগাদ বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী আলোচনায় বসে ঠিক করেছিলেন, ভবিষ্যত অসুখ-বিসুখ ও চিকিত্‍সার কথা ভেবে এবার জিনের না- জানা প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া দরকার। তাঁরা দেখেছিলেন, প্রচলিত গবেষণার পথে সেই উত্তর পেতে আটশো বছর সময় লাগতে পারে। অর্থাত্‍ সেটা অসম্ভব। তখন বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্ত নেন, খুব তাড়াতাড়ি সেই কাজটা করার একটাই রাস্তা – ল্যাবরেটারিতে মানুষের ডিএনএ-র মতোই কৃত্রিম ডিএনএ তৈরি করতে হবে। সেটা করলেই জিন এবং ডিএনএ নিয়ে অজানা অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে। বহু অসুখকে শুরুতেই নির্মুল করা যাবে। ভবিষ্যতে একজন মানুষের কী ধরণের রোগ বা সমস্যা হতে পারে, সেব্যাপারেও আগে থেকেই আভাস পাওয়া যাবে। দুনিয়ার প্রায় আটশো পঞ্চাশ জন তাবড় বিজ্ঞানী এই লক্ষ্যে একসাথে কাজ করছেন। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা কৃত্রিমভাবে মানব ডিএনএ তৈরি হচ্ছে, ততক্ষণ এই কাজ চলবে।

গবেষকদলের সদস্য কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলিয়ান সেল বিষয়টা সহজ করে বুঝিয়েছেন। তাঁরা বক্তব্য, ‘ধরুন, আপনার ক্যান্সার বা অন্য কোনও জটিল অসুখ হয়েছে। বা আপনাকে বয়সের তুলনায় অনেক বয়স্ক দেখতে লাগে। সেটার কারণ তো আপনার জিনেই রয়েছে। আমরা এমন একটা থেরাপির সন্ধান করছি, যা বিভিন্ন অসুখ সারাতে পারবে। রোগকে আগে থেকে চিনতে পারবে। মোদ্দা কথায় মানুষের জীবনকে আরও উন্নত করবে।’ জিন নিয়ে, ডিএনএ নিয়ে এপর্যন্ত কিছু কম কাজ তো হয়নি। কিন্তু কৃত্রিম ডিএনএ তৈরি করা? দুঃস্বপ্নেও সেরকম কিছু করার কথা কেউ ভাবেননি। যখন এমন কোনও প্রস্তাব উঠেছে, তা পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়। কেন? কারণ খোদার উপর খোদদারি করার ফল নাকি ভয়ঙ্কর, মারাত্মক হতে পারে। কথাটা কিন্তু অমূলক নয়। ভাবুন না, আপনার শরীরে থাকা ডিএনএ নিয়ে কেউ ল্যাবরেটরিতে একটা কৃত্রিম ডিএনএ বানিয়ে ফেলল। তারপর সেই ডিএনএ নিয়ে কী, কী হতে পারে? সেসব আমাদের চিন্তার বাইরে। আপনার, আমার জায়গায় একটা দৈত্যরূপী মানুষ তৈরি হবে না, তাঁর-ই গ্যারান্টি কোথায়? আর একটা কথা বলুন তো? এমন একটা প্রকল্পে এত কোটি কোটি ডলার সেটা আসছে কোথা থেকে? দুনিয়ার সব কর্পোরেট কোম্পানিগুলো কেন এতে ঢেলে টাকা দিচ্ছে? আপনার – আমার মঙ্গলের জন্য নয় নিশ্চয়ই। তাই কৃত্রিম ডিএনএ আসলে আশীর্বাদ না অভিশাপ তা ভাবুন নিজেরাই।