Balurghat: মুখ ফিরিয়েছে পরিবার, সুস্থ হলেও বছরের পর বছর হাসপাতালই জীবন কাটছে ৪ অসহায় রোগীর
Balurghat: বছর দুয়েক আগে হাসপাতালে ভর্তি করেছিল পরিবার। সুস্থ হওয়ার পরেও বাড়ির লোক নিয়ে যায়নি চার জন অসহায় রোগীকে। বর্তমানে চারজনের ঠিকানা বালুরঘাট হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে।
বালুরঘাট: কেউ মানসিক ভাবে, আবার কেউ শারিরীক ভাবে অসুস্থ হওয়ায় বাড়ির লোক ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন বালুরঘাট জেলা সদর হাসপাতালের (Balurghat District Sadar Hospital) মানসিক বিভাগে। এদিকে ভর্তির পর ২ বছর পেরিয়ে গিয়েছে৷ চিকিৎসায় অনেকটা সুস্থও হয়েছেন তাঁরা। কিন্তু, সুস্থ হলেও এখনও পর্যন্ত তাঁদের হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়নি৷ এক বা দুজন নয়। সূত্রের খবর, বর্তমানে বালুরঘাট হাসপাতালে ৪ জন রয়েছে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে রয়েছেন৷ এর মধ্যে তিন জন দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালে রয়েছেন বলে খবর। অন্যদিকে আর একজন ২০১৩ সাল থেকে বালুরঘাট হাসপাতালে রয়েছেন৷ প্রথম দিকে মানসিক ও অন্য বিভাগে থাকলেও বর্তমানে তাঁরা অনেকটায় সুস্থ হওয়ায় তাদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে৷ বর্তমানে ওই চারজনের বাড়ি-ঘর বলতেই সবটাই হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের দ্বিতীয় তলা। সেখানে দুটি ঘরে চারজন থাকেন৷ ওই চারজনই বর্তমানে একে অপরের আপন জন। বর্তমানে হাসপাতালের উদ্যোগে তাদের আইসোলেশন ওয়ার্ডের দোতলাতে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এখন সেখানেই ওই রোগীরা থাকেন। হাসপাতালের খাবার খান, হাসপাতালের পোশাক পরেন। ঘুমান সেখানেই। কিন্ত এ ভাবে হোমের মত হাসাপাতালে দিনের পর দিন পরিষেবা কী দেওয়া সম্ভব? কোনও রোগীকে কী বছরের পর বছর, এভাবে রেখে দেওয়া যায় ? এই প্রশ্নের উত্তর এদিন মেলেনি।
বছর ৮২ এর বৃদ্ধ লোকেন সরেন। হাসপাতালের তথ্য ঘাটলে দেখা যায় বালুরঘাট শহর লাগোয়া মালঞ্চা গ্রামের বাসিন্দা লোকেন সরেনকে ২০২০ সালের লকডাউনের সময় শারিরিক দুর্বলতা ও জ্বর নিয়ে কেউ বা কারা হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে গিয়েছিল। বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে মেন মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকতেই কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে তার পরিবারের লোকের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। ফলে তাঁকে আর হাসপাতাল থেকে বের করাও যায়নি।
একইভাবে পারপতিরাম এলাকার ঠিকানা দেওয়া ৫২ বছর বয়সী ফজলুকেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রেখে দিতে বাধ্য হয়েছে। বছর দুয়েক আগে মানসিক ভাবে অসুস্থ থাকায় তাকে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ পরে তারও পরিবারের পক্ষ থেকে কেউই আর খোঁজ খবর নিতে আসেনি। এখন সে অনেকটা সুস্থ৷ বাড়ি ফিরতে চায়। কিন্তু বাড়ির লোক তো কেউই যোগাযোগ করে না। যার ফলে লকডাউনের সময় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে যাওয়ার পর থেকে আর তার আত্মীয়দের খোঁজ মেলেনি। হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় যে নম্বর দিয়েছিল আত্মীয়রা, তাও ভুল। ফলে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি হাসপাতালের।
এদিকে হাসপাতালে রেকর্ডে লোকেন ও ফজলুর তাও কিছু ঠিকানা দেখা যাচ্ছে, কিন্তু ৩২ বছর বয়সী এক যুবকের তো কোনও পারিবারিক তথ্যই মিলছে না। ওই যুবক আবার কথা বলতেও পারেনা। ফলে অজ্ঞাত পরিচয় ওই যুবকেরও ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালেই। তাঁকেও করোনা লকডাউনের সময় কেউ বা কারা হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে চলে গিয়েছিল। এরা প্রত্যেকেই বর্তমানে হাসপাতালে থেকে শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেও, মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ২০২০ সালে লকডাউনের সময় তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারপর থেকে এখনও হাসপাতালে রয়েছেন তারা।
এদিকে ২০১৩ সাল থেকে হাসপাতালে রয়েছেন সুদীপ দাস নামে বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তি। তাঁরও আত্মীয়দের খোজ মেলেনি। এদের প্রত্যেকেরই ঠিকানা হয়ে উঠেছে বালুরঘাট হাসপাতাল। এতদিন পর্যন্ত জেলা হাসপাতালে কোন না কোন বেডে রাখা হলেও বর্তমানে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে আইসোলেশন ভবনে। ওই ভবনে রোগীর চাপ না থাকায়, ওই ভবনের দোতলায় এই চারজনকে রেখে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কতদিন এভাবে ওই সুস্থ ব্যক্তিদের রেখে দেওয়া হবে, সেই প্রশ্নে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
এবিষয়ে হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণেন্দু বিকাশ বাগ বলেন, “আমি মাত্র একমাস হল এই হাসপাতালে কাজে যোগ দিয়েছি। আমার নজরে ওই রোগীরা এসেছেন। তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কোনও উত্তর পাইনি। তাই তাদের জন্য কী ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিচ্ছি। তাঁরা এখন প্রায় সুস্থ৷ কিন্তু বাড়ির লোক নিয়ে যাচ্ছে না”।