ICDS: কমেছে বরাদ্দ, অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রের ঝুড়িতে সবজি দিয়ে যাচ্ছেন প্রসূতি মায়েরাই! ‘নির্দেশিকা’ ঘিরে চাপানউতোর
ICDS centers: আইসিডিএস কেন্দ্রগুলিতে দুধরনের খাবার দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। দু’ধরনের খাবারের জন্য বরাদ্দ রয়েছে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা। খিঁচুড়ির দিনগুলিতে প্রসূতি মায়েদের জন্য বরাদ্দ মাথাপিছু ১ টাকা ৬৩ পয়সা। শিশুদের বরাদ্দ আরও কম।

বাঁকুড়া: কিছুদিন আগেই আশা কর্মীদের বিক্ষোভ দেখেছে কলকাতায়। সেখানেও ফের পুজোয় অনুদান দেওয়া হলেও তাঁদের বেতন কেন বাড়ছে না তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন হাজার হাজার আশা কর্মী। এবার ক্ষোভ বাড়ছে অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রগুলিতেও। বরাদ্দ কমেছে। অগত্যা আইসিডিএস কেন্দ্রে ঝুড়ি পেতে সবজি সংগ্রহ করছেন দিদিমণিরা। এই ছবিই দেখা যাচ্ছে বাঁকুড়ার আইসিডিএস কেন্দ্রগুলিতে।
উপভোক্তাদের কাছ থেকেই সংগ্রহ করা হচ্ছে সবজি
দিদিমণিরা বলছেন মাথাপিছু যে বরাদ্দ করা হচ্ছে তা দিয়ে আর যাই হোক রান্না করা পুষ্টিকর খাবার দেওয়া কার্যত অসম্ভব। অগত্যা জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বাঁকুড়ার আইসিডিএস কেন্দ্রগুলিতে ঝুড়ি পেতে খোদ উপভোক্তাদের কাছ থেকেই সংগ্রহ করা হচ্ছে সবজি। যাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
এদিকে শিশু-প্রসূতি মায়েদের অপুষ্টি ঠেকাতে আইসিডিএস কেন্দ্রগুলি থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে প্রসূতি মা ও শিশুদের রান্না করা পুষ্টিকর খাবার দেওয়া নিয়ম। তার জন্য চাল, ডাল সরবরাহ করে সরকার। জ্বালানি, সবজি ও ডিমের জন্য দেওয়া হয় নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকাও। উত্তরোত্তর বাজারদর বৃদ্ধি পেলেও পাল্লা দিয়ে বাড়েনি সেই বরাদ্দ টাকার অঙ্ক।
জানা গিয়েছে আইসিডিএস কেন্দ্রগুলিতে দুধরনের খাবার দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। দু’ধরনের খাবারের জন্য বরাদ্দ রয়েছে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা। খিঁচুড়ির দিনগুলিতে প্রসূতি মায়েদের জন্য বরাদ্দ মাথাপিছু ১ টাকা ৬৩ পয়সা। শিশুদের বরাদ্দ আরও কম। শিশুদের মাথাপিছু বরাদ্দ মাত্র ১ টাকা ০৯ পয়সা। যেদিনগুলিতে আইসিডিএস কেন্দ্রগুলিতে ভাত রান্না করার নিয়ম সেদিন শিশুদের খাবারের জন্য চাল বা ডাল বরাদ্দ থাকলেও জ্বালানি বা সবজির জন্য কোনও বরাদ্দই নেই বলে জানা যাচ্ছে। ওই দিনগুলিতে প্রসূতি মায়েদের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ মাত্র ৮৪ পয়সা। এখন এই সামান্য বরাদ্দে উপভোক্তাদের ওই পুষ্টিকর খাবার দিতে না পারায় আইসিডিএস কেন্দ্রগুলি শুরু করেছে নতুন পদ্ধতি।
এলাকার এক মহিলা বলছেন, “দিদিমণিরা বলেছেন যাঁর যেমন ক্ষমতা তেমন সবজি দিতে। রোজ যে ভাল-মন্দ দিতে পারি এমন নয়। যেমন পাই তেমনই খাই।” আর এক গর্ভবতী মহিলা বলছেন, “আমরা তো এখানে পুষ্টিকর খাবার খেতে পারি না। তাই দিদিমণিরাই সবজি নিয়ে আসতে বলেছেন। সে কারণেই যে যেমন পারছি নিয়ে এসেছি।”
আরতি দে নামে আইসিডিএস কর্মী বলছেন, “সেন্টার চালাতে খুবই অসুবিধা হয়। জ্বালানিতে তো হয় না। ডিমের দাম খুব বেশি। এখন অফিস থেকে নির্দেশ দিয়েছে সবজি সংগ্রহ করার। ঝুড়িও দিয়েছে। বলেছে প্রসূতি মায়েদের বলে দেবেন সবজি দিয়ে যাওয়ার কথা। তাই আমরা ওদের বলেছি তোমাদের যেমন যেটুকু পারবে দিয়ে যাবে।”
শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর
আইসিডিএস কেন্দ্রের সামনে সাতসকালেই একটি ঝুড়ি পেতে দিচ্ছেন আইসিডিএস কেন্দ্রের দিদিমনিরা। সেই ঝুড়িতে প্রসূতি মা ও শিশুদের অভিভাবকদের সাধ্যমতো সবজি রেখে দেওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে। সংগৃহীত সেই সবজি দিয়েই কোনওমতে রান্না করা খাবার উপভোক্তাদের পাতে তুলে দিচ্ছেন আইসিডিএস কর্মীরা। আইসিডিএস কর্মীদের দাবি বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের নির্দেশে তাঁরা এই কাজ করছেন। ঝুড়িও দিয়েছে তারাই। তা নিয়েই তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। দুর্গাপুজোয় ক্লাবগুলিকে সরকার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা দেওয়া হলেও কেন আইসিডিএস কেন্দ্রগুলিকে এভাবে সবজি সংগ্রহের পথ ঠেলে দেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। বিজেপি নেতা গোবিন্দ ঘোষ বলছেন, “এই সরকার দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রে বাচ্চাদের পুষ্টিকর খাবারটুকু নেই। এটা লজ্জার। বাংলায় বঞ্চনার সরকার চলছে।”
যদিও শাসকদল পাল্টা এই ঘটনার জন্য কাঠগড়ায় তুলেছে কেন্দ্রকেই। কেন্দ্র প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না দেওয়ার ফলেই আইসিডিএস কেন্দ্রগুলির এমন হাল বলে দাবি তৃণমূলের। বড়জোড়ার তৃণমূল বিধায়ক অলোক মুখোপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার বঞ্চনা করছে। সবদিক থেকে বাংলাকে বঞ্চিত করছে। অন্য রাজ্যকে দিলেও বাংলাকে দিচ্ছে না।”
