Mahakal Temple: উত্তরবঙ্গেই কেন মহাকাল? বিজেপির জমিতে ফসল ফলাবেন মমতা?
Temple Politics in North Bengal: কিন্তু যে জমির মুল্য প্রায় সাতশো কোটি টাকা, শিল্পের সেই জমিতে ১ টাকার লিজে কেন মন্দির তৈরি হবে? শিল্প ও কর্মসংস্থান দরকার না মন্দির দরকার? প্রশ্ন তুলছে বামেরা। প্রশ্ন তুলছেন শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের (এসজেডিএ) প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্যও।

প্রসেনজিৎ চৌধুরীর রিপোর্ট
যেখানে শিল্প হওয়ার কথা, সেখানে হচ্ছে মন্দির। যেখানে প্রচুর লোক কাজ করার কথা, সেখানে হবে প্রচুর ভক্তের সমাগম। যেখানে পেটের সন্ধান দিত, সেখানে মনের সন্ধান দেবে। সেটা কোথায়? দিঘা নয় শিলিগুড়ি। বাম জমানায় প্রায় ২৫ একর জমির উপর হওয়ার কথা ছিল আইটি হাব। এই ধরুন সল্টলেক সেক্টর ফাইভ ২। আজ যেমন এই সেক্টর ফাইভে কয়েক লক্ষ যুবক-যুবতী কাজ করেন, শিলিগুড়ি অর্থাৎ উত্তরবঙ্গে এমনই সেক্টর ফাইভ তৈরি হত। যদি এই প্রোজেক্ট বাস্তবায়ন হত, তাহলে সেখানেও কয়েক লক্ষ যুবক-যুবতী কাজ পেতেন। আর তাতে কোট আন কোট উত্তরবঙ্গ বঞ্চনার ক্ষতে প্রলেপ পড়ত। তবে, ওই ২৫ একর জমিতে তৈরি হবে মহাকাল মন্দির। কেউ কেউ বলছেন, সবচেয়ে বড় মহাকাল মন্দির। যাইহোক কর্মই যখন ধর্ম হল না, এই ভোটমুখী বাংলায় ধর্মই কি কর্ম হতে চলেছে? মন্দির কি শিল্প হতে চলেছে? মন্দিরই কি বেকারত্ব ঘোচাতে পারে? দিঘায় তো হয়েছে জগন্নাথ মন্দির, কতটাই বা বদলেছে দিঘার আর্থ-সামাজিক আঙ্গিক? বদলাবে শিলিগুড়িও? নাকি তৃণমূলই শেষ পর্যন্ত বিজেপির হিন্দু ভোটে থাবা বসিয়ে ভোটের বাজারে করবে বাজিমাত? এ নিয়েই এখন চাপানউতোর পুরোদমে।
ফুঁসছে বামেরা
কিন্তু যে জমির মূল্য প্রায় সাতশো কোটি টাকা, শিল্পের সেই জমিতে ১ টাকার লিজে কেন মন্দির তৈরি হবে? শিল্প ও কর্মসংস্থান দরকার না মন্দির দরকার? প্রশ্ন তুলছে বামেরা। প্রশ্ন তুলছেন শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের (এসজেডিএ) প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্যও।
অন্যদিকে শিল্পের জমিতে মন্দির কেন তৈরি হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিজেপিও। যদিও মন্দির তৈরিতে দেশের রাজনীতির আঙিনায় ডেভিডেন্ড যে বরাবরই বিজেপি পেয়ে এসেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে আপনাদের মনে থাকবে মনে হয় মমতা যখন দিঘয়া জগন্নাথ ধাম তৈরির ঘোষণা করেছিল তখন কিন্তু সবথেকে বেশি বিরোধিতার কথা শোনা গিয়েছিল এই পদ্ম শিবির থেকেই। উল্টে এই বিজেপিই আবার কিছুদিন আগেই শিলিগুড়িতে জব ফেয়ারও করে ফেলেছিল। সেই রোজগার মেলায় এসেছিল দেশের প্রায় ৬০টি নামজাদা বেসরকারি সংস্থা। ঢল নেমেছিল চাকরিপ্রার্থীদের। নেপথ্যে থেকে কাজ করেছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ ও দার্জিলিং ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সভাপতি হর্ষবর্ধন শ্রীংলা। ছিলেন বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিলেন বিজেপির বিধায়ক-সাংসদরাও। এখন শিল্পের জমিতে মন্দির তৈরিতে তাই পদ্ম শিবিরেরও কপালে উদ্বেগের ছাপ। বিজেপির তরফে নান্টু পাল বলছেন, আমাদের জেলায় তো পাহাড়ে একটি মহাকাল মন্দির রয়েছে। তাহলে পাহাড় ও সমতলে পৃথক মন্দিরের কী প্রয়োজন? বামেদের মতো তাঁদেরও সাফ কথা, সামান্য অর্থে সরকারি জমি শিল্পপতিদের পাইয়ে দিতে সচেষ্ট রয়েছে এসজেডিএ।
কী বলছেন শুভেন্দু-শঙ্কররা?
কিছুদিন আগেই শুভেন্দু অধিকারীর জেলায় হয়েছে জগন্নাথ ধাম। আপনাদের মনে থাকবে সেই মন্দির নিয়েও রাজনীতির আঙিনায় বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বড় অংশের মত ছিল বিজেপির হিন্দু ভোটে বিশেষত পূর্ব মেদিনীপুরের মতো জেলায় থাবা বসাতে বড় হাতিয়ার হতে পারে তৃণমূলের এই হাতিয়ার। তারপর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। চরিত্রটাই যেন ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে সৈকত নগরীর। বছর শেষ মাসেই এক ঐতিহাসিক মাইলফলক তৈরির অপেক্ষায় দিঘা জগন্নাথ ধাম। গত প্রায় সাত মাসের পথচলায় এই নতুন সাগরতীর্থ ইতিমধ্যেই ৯০ লক্ষেরও বেশি ভক্তের সমাগম দেখেছে। মন্দির কর্তৃপক্ষের আশা, ডিসেম্বর মাসের শীতকালীন পর্যটন মরশুমের ভিড়ে সেই সংখ্যাটি কোটির গণ্ডি ছুঁয়ে নতুন রেকর্ড গড়বে। হলে এবার কী সত্যিই বাংলার পর্যটন মানচিত্রে বড় ছাপ রাখবে শিলিগুড়ির মহাকাল মন্দির? নাকি শেষ লোকসভা ভোটের মতো আসন্ন বিধানসভা ভোটেও এই ইস্যুতে বিজেপির রক্তক্ষরণ আরও বাড়বে? শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ মনে হয় তেমনটা মনে করছেন না। পাল্টা খোঁচা দিয়ে তিনি প্রশ্ন করছেন, “মহাকাল মন্দির তৈরি হলে কী এটা প্রমাণিত হবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জন্ম সূত্রে হিন্দু?” তোপের পর তোপ দেগেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তীব্র কটাক্ষের সুরে বলেন, “সরকারি টাকায় মন্দির হোক হিন্দুরা চায় না। আমরা রামমন্দির বানিয়েছি হিন্দুদের টাকায়। সরকারি টাকায় মন্দির হয় না, এভাবে হিন্দু ধর্মকে অপব্যবহারও করা যায় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়য় হিন্দু বিরোধী প্রত্যেকটা হিন্দু তা জানে।”
যদিও পাল্টা প্রশ্ন করছে তৃণমূলও। তারা বলছে কেন পর্যটন শিল্পের কথা কেন ভাবছেন না বিরোধীরা? শিলিগুড়ির মেয়র তথা গৌতম দেব বলছেন, “মন্দির হলে শিল্পের বিকাশই হবে। পর্যটনের ক্ষেত্র খুলবে, যার সঙ্গে সরাসরি উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান যুক্ত।”
রাজনীতির কারবারিরা যাই বলুন, ভোট যে দুয়ারে তা ভালই টের পাওয়া যাচ্ছে। বেজে গিয়েছে দামামা। একসময় একটা রাম মন্দির হবে বলে এই বিজেপিই তো কতগুলো নির্বাচনী বৈতরণী একেবারে বুক চিতিয়ে পার করে দিয়েছিল। তারপর রাম মন্দির হয়েছে। লাভের গুড় কারা পেয়েছে তাও মোটামুটি স্পষ্ট। সে তো অযোধ্যার কথা, কিন্তু বাংলায় দিঘার পর এবার শিলিগুড়ি, লাভের গুড় কার ঘরে ঢুকবে তা নিয়েই এখন চর্চা পুরোদমে। এই উত্তরবঙ্গে রীতিমতো শক্ত ঘাঁটি থাকার পরেও শেষ লোকসভা ভোটে রীতিমতো ধারশায়ী হয়েছিল পদ্ম শিবির। দিকে দিকে ফুটেছিল জোড়াফুল। এখন বিধানসভা ভোটের আগে মহাকাল রাজনীতি শাসক শিবিরের শক্তি নতুন করে কতটা বাড়ে সেটাও দেখার।
