Paschim Medinipur School: নজিরবিহীন অবস্থা সবং স্কুলে! চাঁদা তুলে ‘শিক্ষক নিয়োগ’ গ্রামবাসীদের

Paschim Medinipur School: আড়াই হাজার টাকার বিনিময়ে খুদেগুলোকে পড়ান গ্রামেরই এক ব্যক্তি। নাম সুশেন হাইত। এলাকার বাসিন্দা তিনি। পরিবারের আবার একাই রোজগেরে।

Paschim Medinipur School:  নজিরবিহীন অবস্থা সবং স্কুলে! চাঁদা তুলে ‘শিক্ষক নিয়োগ’ গ্রামবাসীদের
সবং স্কুলে চাঁদা তুলে শিক্ষক নিয়োগ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 06, 2022 | 1:11 PM

পশ্চিম মেদিনীপুর: একজন শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৮০। সবংয়ের মানিকড়ি জুনিয়র হাইস্কুলের বেহাল দশার খবর TV9 বাংলা করতেই হুুলস্থূল পড়ে যায় বিভিন্ন মহলে। শিক্ষক দুর্নীতি নিয়ে এমনিতেই তোলপাড় রাজ্য। প্রতিদিনই দুর্নীতি মামলা নিয়ে আদালতের তরফে নজিরবিহীন পর্যবেক্ষণ আসছে। সেই আবহে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের করুণ চিত্র কার্যত ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটের’ মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের কাছে। মানিকড়ি জুনিয়র হাইস্কুলে ৮০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে পড়াতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন একমাত্র শিক্ষক সন্দিপ পতি। প্রশ্ন উঠছে, এতগুলো ক্লাস একা একজন নেবেন কীভাবে? প্রশাসনের তরফে আশ্বাস মিললেও, তাদের প্রতিশ্রুতির ঢক্কানিনাদে কাজ হয়নি কিছুই বলে দাবি গ্রামবাসীদের। অগ্যতা, নিজেদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে উদ্যোগ নিয়েছেন দেহাতি মানুষগুলোই।

জানা গিয়েছে, তাঁরা প্রত্যেক মাসে চাঁদা তুলে সেই টাকায় এক জন শিক্ষক ‘নিয়োগ’ করেছেন। আড়াই হাজার টাকার বিনিময়ে খুদেগুলোকে পড়ান গ্রামেরই এক ব্যক্তি। নাম সুশেন হাইত। এলাকার বাসিন্দা তিনি। পরিবারের আবার একাই রোজগেরে। কিন্তু সে অর্থে তাঁর মাসিক আয় আড়াই হাজার টাকাই। যেটা কিনা গ্রামবাসীরা চাঁদা তুলে তাঁকে দিচ্ছেন। কার্যত এই টাকাতেই ক্লাস নেন তিনি। সকাল থেকেই।

সুশেন হাইত বলেন, “গ্রামবাসীদের অবদান মারাত্মক, তাঁরাই চেষ্টা করছেন। ভীষণরকম ভাবে। আমাকে অঙ্কও নিতে হয়, ইতিহাস, ইংরাজিও। আগে ২ জন শিক্ষক ছিলেন। তাঁদের ট্রান্সফার হওয়ার পর আর কোনও শিক্ষকই আসেননি। আমাকে গ্রামবাসীরাই চাঁদা তুলে মাসিক বেতন দেন। গেস্ট টিচার হিসাবে পড়াচ্ছি। অন্ততপক্ষে ২-৩ জন শিক্ষক এই মুহূর্তে প্রয়োজন। তাহলে স্কুলটা বাঁচবে।”

প্রশ্ন হচ্ছে, এসবের পরেও স্কুলের ওপর নজর নেই প্রশাসনের। দিনে দিনে কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। সবং ব্লকের মানিকড়া জুনিয়র হাইস্কুলে ২০১০ সাল থেকে চলছে পঠনপাঠন। আগে ঠিকঠাক চললেও বর্তমানে ভেঙে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। যত দিন যাচ্ছে, তত কমছে শিক্ষার্থী। কারণ একটাই। একা একজন শিক্ষক কীভাবে এতগুলো ক্লাস কীভাবে নেবেন? অবিভাবকরা হতাশায়।

প্রায় ৮ মাসেও সাড়া পড়েনি কোন কর্মকর্তার। এমনকি ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও পরিদর্শনে যাননি কোনও শিক্ষা কর্মকর্তাও। ক্ষোভ বাড়ছে এলাকাবাসীর মনে। ধীরে ধীরে বন্ধের পথে এই স্কুল? চিন্তায় রয়েছেন এলাকার অভিভাবকরা।

চলতি বছরের শুরুতেই ওই স্কুলের দায়িত্ব পান সন্দীপ পতি। প্রথম থেকে স্কুলে ছিলেন মোট ৪ জন শিক্ষক। উৎসশ্রী প্রকল্পের মধ্যে ৩ জন শিক্ষক অন্য স্কুলে চলে যাওয়ায় দায়িত্বভার পড়ে সন্দীপ পতির ওপরেই। একা কুম্ভ হয়ে সামলাচ্ছেন গোটা স্কুল। সামলাতে হয় স্কুলের সব দায়িত্ব,আর রয়েছেন কেবল একজন গ্রুপ ডি কর্মী। ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাধ্য হয়ে এলাকার লোক নিজেদের ছেলেমেয়েদের স্বার্থে চাঁদা তুলে একজন শিক্ষক নিয়োগ করে রেখেছেন স্কুলে । অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র সায়ন বেরা বলেন, ” স্কুলে শিক্ষকের অভাবে পড়াশুনায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হোক।”

কয়েকজন অবিভাবক বর্তমান সরকারের শিক্ষা ব্যাবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একজন অভিভাবকের বক্তব্য, “সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের ছেলে মেয়ে পড়াশুনার ক্ষেত্রে ভীষণরকম সমস্যা হচ্ছে । আমারও চাই দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ হোক এবং প্রতিষ্ঠান আরও এগিয়ে যাক।” একা শিক্ষক সন্দীপ পতি বলেন, “সংবাদমাধ্যমে খবরটা দেখে যদি সরকারের টনক নড়ে, তাহলে কৃতজ্ঞ থাকব।” গোটা পরিস্থিতির কথা বারবার তিনি তাঁর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বলে জানান তিনি। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আদৌ নতুন শিক্ষক পান কিনা, সেটাই দেখার।