Kolaghat: খরচ ৩ লক্ষ টাকা! ছেলের চিকিৎসায় কাজেই লাগল না ৫ লক্ষের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ড
swasthya sathi Card: বিজেপির অভিযোগ ওইসব ভাঁওতা ছাড়া আর কিছু নয়।
পূর্ব মেদিনীপুর: শরীরে ছিল না করোনার (Corona)কোনও উপসর্গ। অন্তত তেমনটাই দাবি পরিবারের। তবুও স্বাস্থ্য দফতরের ফরমান মেনে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য উঠতে হয়েছিল অ্যাম্বুলেন্সে। হাসপাতালে ঢোকার ঠিক আগেই পাঁশকুড়া ম্যেচগ্রামে ঘটে পথ দুর্ঘটনা। মারা যান অ্যাম্বুলেন্সের চালক কিন্তু বরাত জোরে প্রাণে বেঁচে যায় ওই যুবক। কিন্তু ভেঙে যায় হাড়। চিকিৎসার অনেক খরচ। কোথায় পাবেন অত টাকা? এখনও শয্যাশায়ী তিনি। অভিযোগ স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড দেখিয়েও মেলেনি উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা। স্বাস্থ্যবিমার অধীনে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা মিলবে এমনটাই বলা হয়েছিল। কিন্তু মেলেনি কিছুই। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছেলেকে সুস্থ করতে চেয়ে হন্যে হয়ে ঘুরছেন পরিবার।
কোলাঘাটের গোপালনগর গ্রামের বছর বাইশের হরিপদ সামন্ত। দিল্লিতে সোনার কারিগর হিসেবে কাজ করতেন। গত বছর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে বাড়ি ফেরেন হরিপদ। পরিযায়ী শ্রমিক হওয়ায় তাঁর কোভিড পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট পজিটিভ আসে । যদিও হরিপদ শরীরে করোনার কোনও উপসর্গ ছিল না বলে দাবি পরিবারের । গত বছর ১৪ জুন কাকভোরে হরিপদকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্স। গন্তব্য,মেচগ্রামের বড়মা কোভিড হাসপাতাল । হরিপদর সঙ্গে ছিলেন কোলাঘাটেরই আরেকজন পরিযায়ী শ্রমিক। হাসপাতালে ঢোকার ঠিক কিছুটা আগে একটি লরির পিছনে ধাক্কা মারে ওই অ্যাম্বুলেন্সটি। ঘটনাস্থানেই মারা যান অ্যাম্বুলেন্সের চালক রাজু দাস। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা আরেকজন পরিযায়ী শ্রমিকের। তবে দুর্ঘটনায় কোনও মতে প্রাণে বেঁচে যান হরিপদ। তবে তাঁর কোমর,শিরদাঁড়া ও একটি হাঁটু ভেঙে যায়। তাঁকে ভর্তি করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। দু’মাস চিকিৎসার পর স্পাইনালে অস্ত্রোপচারের জন্য হরিপদকে একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে নিয়ে যান তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এক মাসে খরচ হয় ৩ লক্ষ টাকা।
কিন্তু তাতেও উঠে দাঁড়াতে পারেননি হরিপদ। কোমর থেকে পা পর্যন্ত অসাড় হয়ে গিয়েছে তাঁর। পরিবারের দাবি উন্নত চিকিৎসার সাহায্য নিলে হরিপদ আবার উঠতে দাঁড়াতে পারবে।হরিপদর বাবা প্রশান্ত সামন্ত পেশায় দিনমজুর। মা রিণা গৃহবধূ। টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছেন না সামন্ত দম্পতি। রিণাদেবীর নামে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড রয়েছে।অভিযোগ সেই কার্ডে হরিপদর চিকিৎসা করাতে রাজি হয়নি কোনও উন্নত বেসরকারি হাসপাতাল।
পরিবাররে প্রধান রোজগেরে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ায় চরম আর্থিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলছে পরিবারের।হরিপদর বাবা প্রশান্তর সামান্য আয়ে কোনও রকমে চলছে সংসার। নিজের বলতে মাত্র এক কাঠা জমি রয়েছে প্রশান্তর। কয়েকবছর ধরে ছেলের রোজগার থেকে একটু একটু সঞ্চয় কোনও রকমে একতলা একটি বাড়ি তৈরি করেছিলেন। আর ছেলের চিকিৎসার জন্য সেই বাড়ি বন্ধক দিতে হয়েছে। সময়মত সেই বাড়ি না ছাড়লে সমস্যায় পড়তে হবে তাঁদের। পাশের পুরনো ভগ্নপ্রায় মাটিরবাড়িতে কীভাবে দিনগুজরান করবেন তা নিয়ে চিন্তায় পরিবার । এই অবস্থ্যায় ছেলের চিকিৎসা কীভাবে হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সামন্ত পরিবার।
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে সুর চড়িয়েছে বিজেপি। তাদের অভিযোগ, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড যে ভাঁওতা ছাড়া আর কিছুই নয়, তা কোলাঘাটের ঘটনায় আরও একবার প্রমাণিত হল। আয়ুষ্মান ভারত কার্ড থাকলে আজকে এই ভাবে চিকিৎসার অভাব হতো না। রাজ্যের শাসকদল রাজনীতি করে তা বন্ধ করে দিলো। অন্যদিকে সেই অভিযোগ করে কেন্দ্র সরকারকেই কটাক্ষ করেছে রাজ্যের শাসকশিবির। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডেই উন্নত চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব বলে তাদের মত।
আরও পড়ুন: Kerala Flood: নিম্নচাপ শক্তি হারাতেই উদ্ধারকার্যে নামল এনডিআরএফ, ক্ষোভ ত্রাণ শিবির ঘিরে