Pakistan Terrorist: কুখ্য়াত মাসুদ-হাফিজকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার টোপ! নয়া নাটক পাকিস্তানের?
বিলাওয়াল যদি সত্যিই হাফিজ এবং মাসুদকে ভারতের হাতে তুলে দিতে চান, তাহলেও সেটা করে দেখানোর সাধ্যি তাঁর নেই। এই ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত আদৌ যদি কখনও পাকিস্তান নেয়, তাহলে সেটা নেবে সেনা।
ভূতের মুখে রামনাম! নাকি এমন একটা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার চেষ্টা যা কিনা রক্ষা করাই সম্ভব নয়! ফলে, পরে যুক্তি সাজানো যাবে যে চেষ্টা তো করা হয়েছিল। কিন্তু, হল না… কী বিষয়ে কথা হচ্ছে? বলছি, আল-জাজিরা-কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে পাকিস্তানের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির একটা মন্তব্য নিয়ে। বিলাওয়ালকে প্রশ্ন করা হয় যে পাকিস্তান কি হাফিজ সঈদ ও মাসুদ আজহারের মতো জঙ্গিকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার সদিচ্ছা দেখাতে পারবে? তরুণ পাক রাজনীতিকের উত্তর, ‘জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজহার আফগানিস্তানে পালিয়ে গিয়েছে। আমরা তাকে গ্রেফতার করতে পারিনি। লস্কর-ই-তইবার চিফ হাফিজ সঈদ আমাদের কাস্টডিতে আছে। ভারত যদি আস্থাবর্ধক কর্মসূচিতে সহযোগিতা করে, তাহলে আমার মনে হয় না যে কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণ করতে কোনও সমস্যা হবে।’ তার মানে, আলোচনা শুরু হলে একটা সময়ে মাসুদ আজহার এবং হাফিজ সঈদকে ভারতের হাতে তুলেও দিতে পারে পাকিস্তান। ওপরে ওপরে বিলাবলের এই বক্তব্যের সেটাই মানে দাঁড়ায়।
প্রাক্তন পাক বিদেশমন্ত্রীর মন্তব্যকে কাঁটাছেঁড়া করলে দাঁড়ায়, প্রথম আগমার্কা ২ জঙ্গিকে প্রত্যর্পণের কথা বলে বিলাওয়াল ভারতকে আলোচনায় বসানোর টোপ দিলেন। যেখানে ভারত বলেই দিয়েছে আগে পাকিস্তান সন্ত্রাসে মদত দেওয়া বন্ধ করবে। তারপর কথা হবে কি হবে না ভাবা যাবে। দ্বিতীয়ত, মাসুদ আজহারের লোকেশন নাকি পাক প্রশাসন জানে না। তৃতীয়ত, খেয়াল করলে দেখা যাবে, বিলাওয়ালের কথার মধ্যে একটা শর্ত আরোপের চেষ্টা রয়েছে। যেখানে দিল্লি সাফ বলে দিয়েছে জঙ্গিদের নিঃশর্তে ভারতের হাতে তুলে দিতে হবে। এই তিনটি পয়েন্ট বুঝতে পারলে প্রথমেই এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে ভূতের মুখে রামনাম নয়। বরং বিলাওয়ালের কথার মধ্যে একটা কৌশল আছে, ফাঁদ আছে।
এবার অলীক প্রতিশ্রুতির প্রসঙ্গটি। বিলাওয়াল যদি সত্যিই হাফিজ এবং মাসুদকে ভারতের হাতে তুলে দিতে চান, তাহলেও সেটা করে দেখানোর সাধ্যি তাঁর নেই। এই ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত আদৌ যদি কখনও পাকিস্তান নেয়, তাহলে সেটা নেবে সেনা। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে লোক দেখাতে বড়জোড় পাক প্রাইম মিনিস্টারকে তারা ডেকে নিতে পারে। সেখানে বেনজির-পুত্রের মত ইয়ং পলিটিশিয়ানদের কোনও এন্ট্রি নেই। ফলে সবমিলিয়ে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির এই মন্তব্য গুরুত্বহীন। ধারের টাকায় পাকিস্তান চলে। আগামীদিনে ওরা আন্তর্জাতিক আর্থিক সাহায্য আর পাবে কিনা, সেটা অনেকটাই নির্ভর করছে Financial Action Task Force-এর রিপোর্টের ওপর। মাস তিনেকের মধ্যেই FATF সন্ত্রাসদমনে পাকিস্তান কতটা সদিচ্ছার প্রমাণ দিল তা রিভিউ করবে। FATF সন্তুষ্ট না হলে পাকিস্তান ফের চলে যেতে পারে ধূসর তালিকায়। তখন হাত পাতলেও ধার মিলবে না। ফলে বিলাওয়ালের এই মন্তব্যকে যদি আমরা চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা হিসাবে দেখি, তাহলে তা মোটেই ভুল হবে না।
পাকিস্তানের দিশেহারা অবস্থা সামনে চলে এসেছে, কেন বলা হচ্ছে? প্রাক্তন পাক বিদেশমন্ত্রীর মুণ্ডপাত করে হাফিজ সইদের ছেলে তালহা সইদ এক্স হ্যান্ডলে ভিডিও পোস্ট করেছে। বাপ-ব্যাটা দুজনেরই রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গি তালিকায় নাম জ্বলজ্বল করছে। তালহার কথায়, বিলাওয়াল দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন। তার বাবাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলায় ছেলে হিসাবে তালহার রাগ হতেই পারে। জঙ্গি হলেও বাপ-ছেলের সম্পর্ক তো আছে। বিলাওয়ালের পাকিস্তান পিপলস পার্টি বরাবর ওয়েস্টার্ন অ্যাজেন্ডা নিয়ে চলে। ওরা অ্যান্টি-পাকিস্তান। হাফিজের ছেলে ভিডিওয়ে এসবও বলেছে। এই জায়গায় পাক মিডিয়াগুলোও এমন একটা কথা বলছে, যে সেটাকে উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপারেশন সিঁদুরের পর চরম ভয়ে আছে পাক সেনা। জঙ্গিদের জন্য যদি আবার ভারতের হাতে পিটুনি খেতে হয়, সেই ভয়। পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও আসিম মুনিরের কানে খুব সম্ভবত কথাটা ঢুকিয়ে দিয়েছে। ফলে, ওদেশের সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, জঙ্গি আর সেনা। তিনপক্ষের মধ্যেই একটা নিরাপত্তাহীনতা ও অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। বিলাওয়ালের মন্তব্য যে সেসবের আউটকাম নয়, সেটাও জোর দিয়ে বলা যাবে না। ফলে,আরেকটু সময় দরকার। দেখা যাক পাকিস্তানের দুর্গতি কোনদিকে যায়। সময়ের সঙ্গে সব জিনিস আরও স্পষ্ট হবে।
