কলকাতা: ঐতিহাসিকরা ইতিহাস লেখেন না, ইতিহাস লেখেন বিজয়ী। ইতিহাস লেখেন শাসকরা। বহু- বছর আগে এক বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীর মন্তব্য। ওই স্বাধীনতা সংগ্রামী আইসিএস পাশ করেও সরকারি চাকরি ছেড়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়েছিলেন। একশো বছর পরেও তাঁর সেই মন্তব্য দিনের আলোর মতই সত্যি। অনেক ঘটনাতেই এর মর্ম বোঝা যায়। বাংলাদেশেও বোঝা যাচ্ছে। স্কুলের ইতিহাস বইতে বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস লিখছে মহম্মদ ইউনুসের তদারকি সরকার। নতুন ইতিহাসে কী লেখা হবে?
নয়া ইতিহাসে লেখা হবে, বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান নন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম করেছিলেন জিয়াউর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। এর পরদিন ২৭-শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা করেন মুজিবর রহমান। মুজিবের বেতার ভাষণের পর সেই বার্তা ফের পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের সামনে ঘোষণা করেছিলেন জিয়া। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, এর মধ্যে ভুল কিছু নেই। কিন্তু, শুধু এটুকু হলে কিছু বলার ছিল না। কিন্তু এর পাশাপাশি যেটা হচ্ছে, সেটা ইতিহাস বিকৃত করা, ভুয়ো ইতিহাস লেখার চেষ্টা।
ঘটনা হল, মুজিবের কথাতেই ২৬ মার্চ বেতার বক্তৃতায় স্বাধীন বাংলাদেশের স্লোগান তুলেছিলেন জিয়া। সে কথা কোথাও বলা থাকছে না। স্বাধীন বাংলাদেশের দাবি, নতুন দেশ গঠনে মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী তৈরি, মহিলাদের প্রতিরোধে নামার ডাক – সবটার পিছনেই ছিল মুজিবের ভূমিকা। ক্লাস ফোর ও ফাইভের টেক্সস বুক থেকে সেসবও বাদ পড়ছে বলে জানা যাচ্ছে। ক্লাস ওয়ান থেকে টেনের বইয়ের কোথাও মুজিবকে জাতির পিতা বলে উল্লেখ করা হবে না। যোগ হবে জুলাই বিপ্লবের প্রসঙ্গ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে জিয়াউর রহমানের অবদান কম নয়। বাংলাদেশ গঠনের পর প্রথমে সেনাপদক ও পরে বীর উত্তম উপাধি দেওয়া হয়েছিল জিয়াকে। কিন্তু মুজিব প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ই দু-জনের সম্পর্কের অবনতি হয়।
মুজিবের খুনের পর প্রথমে সেনাপ্রধান ও পরে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন জিয়া। ১৯৭৮ সালের ৩ জুন ভোটের নামে নাটক করে নিজেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছিলেন। এর তিনমাস পর তৈরি হয় জিয়ার রাজনৈতিক দল – বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি। মুজিরের হত্যাকারীদের মদত ও আশ্রয় দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল জিয়ার বিরুদ্ধে। অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় ২০২২ সালে জিয়ার পদক ও খেতাব – দুই-ই ফিরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করেছিল মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল। স্বভাবতই সে সব নতুন ইতিহাস বইতে নেই। বাংলাদেশের ইতিহাসবিদদের একাংশের বক্তব্য, নতুন ইতিহাস লেখা হচ্ছে না, ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে। চলতি বছরের শিক্ষাবর্ষ থেকে স্কুল পড়ুয়ারা বিকৃত ইতিহাস শিখবে, সেই ব্যবস্থা হচ্ছে।