Bangladeshi Hindu: ‘ধর্মনিরপেক্ষ, অথচ বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, এটা চলতে পারে না’
Bangladeshi Hindu: বাংলাদেশি হিন্দুরা প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশে সরকারে যেই থাকুক, তাদেরকেই কেন বারবার নিশানা করা হয়? বাংলাদশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি, সুরেন্দ্র কুমার সিনহার মতে, এর বীজ লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের সংবিধানেই। শেখ হাসিনার একটি পদক্ষেপেই হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে।
ঢাকা: শেখ হাসিনা সরকারের আকস্মিক পতনের পর, বাংলাদেশে চলছে শান্তির সন্ধান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। তবে, তারপরও শান্তি অধরা। বিশেষ করে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নিরন্তর হামলা চলছে। এমনকি, ঋত্বিক ঘটকের মতো বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালকের পৈত্রিক ভিটে পর্যন্ত ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সকল সম্প্রদায়ের ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ এই সকল আক্রমণের নিন্দা করেছে। শিক্ষার্থীদের অনেককেই দেখা গিয়েছে, রাতে হিন্দু মন্দিরগুলি পাহারা দিতে। কিন্তু, তারপরও হিংসা-ভাঙচুর পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় বাংলাদেশি হিন্দুরা প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশে সরকারে যেই থাকুক, তাদেরকেই কেন বারবার নিশানা করা হয়? বাংলাদশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি, সুরেন্দ্র কুমার সিনহার মতে, এর বীজ লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের সংবিধানেই। শেখ হাসিনার একটি পদক্ষেপেই হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ গঠনের সময় দেশটিকে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল এক মৌলিক বিষয়। তবে, ১৯৮৮ সালে সামরিক শাসক এরশাদ সংবিধান সংশোধন করে বাংলাদেশকে মুসলিম দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। এরশাদের বিদায়ের পরও দীর্ঘদিন বাংলাদেশের পরিচয় মুসলিম দেশই ছিল। এই সময় খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা দুজনেই দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ২০১১ সালে, দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময়, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সংবিধান ফের সংশোধন করে বাংলাদেশ সংবিধানের মৌলিক বিষয় হিসেবে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয় পুনরুদ্ধার করেছিলেন। তবে, একইসঙ্গে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ইসলামকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবেই থাকবে।
এতেই গন্ডোডোলের বীজ লুকিয়ে ছিল বলে মনে করেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি, সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এখনও পর্যন্ত তিনিই একমাত্র হিন্দু, যিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হয়েছেন। তবে, ২০১৭ সালে তাঁর সঙ্গে হাসিনা সরকারের বিবাদ বেধেছিল। শেষ পর্যন্ত দুর্নীতির দায় নিয়ে তাঁকে পদত্যগ করতে হয়েছিল। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে আমরা ইসলামকে রাখব এবং সেই সঙ্গে বলব আমাদের দেশ ধর্মনিরপেক্ষ। এটা একসঙ্গে চলতে পারে না। বাংলাদেশকে সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষ দেশে পরিণত করতে চাইলে রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করতে হবে। আপনার ধর্মনিরপেক্ষতাও থাকবে, কিন্তু সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বলা হবে, দুটো একসঙ্গে চলতে পারে না।” আর এই দুই নৌকোয় পা দিয়ে চলা বন্ধ না হলে, হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারও বন্ধ হবে না বলে মত বাংলাদেশের প্রাক্তন বিচারপতি।
বাংলাদেশের সম্পত্তি আইন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এতে হিন্দুদের ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি। তিনি বলেছেন, “ধর্মনিরপেক্ষ দেশে সম্পত্তি আইনের মতো আইন থাকতে পারে না। এই আইনের বলে হিন্দুদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। একইভাবে, হিন্দু মন্দির পরিচালনার জন্য আলাদা আইন থাকতে পারে না। যদি সত্যিকারের গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং সাম্য বজায় থাকে, তবেই বাংলাদেশে হিন্দুরা নিরাপদে থাকবে।” তবে, তা না-হলে বাংলাদেশের সকল হিন্দুদের ভারতে চলে যেতে হবে, তাও মনে করেন না বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি।
শেখ হাসিনাকে তিনি সরাসরি ‘স্বৈরশাসক’ বলেই অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষের উপর ‘বর্বর অত্যাচার’ চালিয়েছেন। হাসিনার ‘অগণতান্ত্রিক’ এবং ‘স্বৈরাচারী’ শাসনের বিরোধিতা করার কারণেই তাঁকে প্রদান বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়েছিল বলেও দাবি করেছেন সুরেন্দ্র সিনহা। তিনি বলেছএন, “তিনি (শেখ হাসিনা) একজন বর্তমান প্রধান বিচারপতিকে বহিষ্কার করেছিলেন। তাঁর স্বৈরাচারী শাসন পদ্ধতির আর কী প্রমাণ লাগে? যা হয়েছে, তা বাংলাদেশের জনগণের অর্জন।” তবে, নোবেলজয়ী অধ্যাপক মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, তাকেও তিনি ‘অসাংবিধানিক’ বলেই মনে করেন।