রানি কেতেভান জুড়েছে ভারত-জর্জিয়াকে, অস্থি হস্তান্তরেই সূচনা নতুন কূটনৈতিক সম্পর্কের?

External Affairs Minister S Jaishankar's Visit to Georgia: ২০১৭ সালে ভারত ছয় মাসের জন্য রানি কেতেভানের অস্থি জর্জিয়ার কাছে হস্তান্তর করেছিল, যা সারা দেশ জুড়ে প্রদর্শিত করা হয়। জনগণের উচ্ছ্বাস ও আবেগ দেখে ভারত সরকার ওই অস্থি আরও ছয় মাস সেখানে রাখার অনুমতি দিয়েছিল।

রানি কেতেভান জুড়েছে ভারত-জর্জিয়াকে, অস্থি হস্তান্তরেই সূচনা নতুন কূটনৈতিক সম্পর্কের?
জর্জিয়ার বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।ছবি:PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 11, 2021 | 10:20 AM

নয়া দিল্লি: ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের দু’দিনের জর্জিয়া সফর। কারণ জয়শঙ্করই ভারতের প্রথম বিদেশমন্ত্রী, যিনি জর্জিয়া সফরে গেলেন। সফরচলাকালীন তিনি জর্জিয়ার আরাধ্য দেবী সেন্ট কুইন কেতেভানের অস্থি (Holy Relic of St Queen Ketevan) সেখানকার সরকারের হাতে তুলে দেন।

১৭ শতাব্দীতে জর্জিয়ার রানি ছিলেন কেতেভান। কথিত আছে, তিনি ইসলাম গ্রহণ না করায় তাঁকে খুন করা হয়েছিল ইরানে। ২০০৫ সালে গোয়ার একটি গির্জার ধ্বংসাবশেষে থেকে তাঁর অস্থি পাওয়া গিয়েছিল। জর্জিয়ার সরকার সেন্ট কুইন কেতেভানের অস্থি হস্তান্তর করার জন্য ক্রমাগত ভারতকে অনুরোধ জানায়। এ দিন ভারত সরকার তাঁর অস্থির একটি অংশ ফিরিয়ে দেয়। বন্ধু রাশিয়ার কারণেই ভারত এতদিন জর্জিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের দিকে বিশেষ মনোযোগ না দিলেও, কুইন কেতেভানের অস্থি ফেরত দেওয়ার মধ্যে দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে যাবতীয় ব্যবধান দূর করার ইঙ্গিতই দেওয়া হচ্ছে।

ধর্মপরায়ন দেশ জর্জিয়াতে সেন্ট কেতেভানের গুরুত্ব অনেকটা আমাদের আরাধ্য দেব-দেবীর মতোই। এই কারণেই যখন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তাঁর অস্থির অবশিষ্টাংশ জর্জিয়ার বৃহত্তম গীর্জার প্রধান যাজকের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন, সেই সময় সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ইরাকলি গারিবাশভিলিও উপস্থিত ছিলেন। জর্জিয়াবাসীদের বিশ্বাস, এ বার জর্জিয়ার দুঃখের দিনগুলি কেটে যাবে।

উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভক্ত হওয়ার পর থেকেই জর্জিয়ার তাঁর প্রতিবেশী তথা ভারতের বন্ধু দেশ রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক যথেষ্ট উত্তেজনাপূর্ণ। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে জর্জিয়ার দিকে ভারত বিশেষ নজর দেয়নি। সম্ভবত এই কারণেই ভারত থেকে এর আগে কোনও শীর্ষ পর্যায়ের সফর হয়নি জর্জিয়ায়।

বিদেশ মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ১৬৩৭ সালে রানী কেতেভানের অবশেষ গোয়ায় আনা হয়েছিল। এখানে তাঁর অস্থি এনে একটি গির্জার মধ্যে রাখা হয়, যা পরে ধ্বংস হয়ে যায়। কথিত আছে,  রানি কেতেভানের কিছু অনুগামী তাঁর দেহাবশেষ লুকিয়ে ইরান থেকে সমুদ্রপথে ভারতে নিয়ে এসেছিল। পরবর্তী সময়ে ২০০৫ সালে কিছু পর্তুগিজ নথির উপর ভিত্তি করে সেই গির্জার ধ্বংসস্তূপ আবিষ্কার করা হয়। সেখান থেকে রানি কেতেভানের অস্থি পাওয়া গিয়েছিল।

ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ সমীক্ষার (এএসআই) নির্দেশে, সিএসআইআর উদ্ধার হওয়া অস্থির ডিএনএ পরীক্ষা করে এবং এর সত্যতা যাচাই করে। এটি জানার পরেই জর্জিয়ার সরকার তাদের দেশের ধর্মীয় ভাবনা এবং ঐতিহাসিক ঘটনার কথা বিবেচনা করে ভারতকে রানি কেতেভানের অস্থির অংশ ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ জানায়। আরও পড়ুন: একা ‘আলফা’-এ রক্ষা নেই, দোসর ‘বিটা’ও, করোনার ২ ভ্যারিয়েন্টের আক্রমণে মৃত্যু বৃদ্ধার

২০১৭ সালে ভারত ছয় মাসের জন্য রানি কেতেভানের অস্থি জর্জিয়ার কাছে হস্তান্তর করেছিল, যা সারা দেশ জুড়ে প্রদর্শিত করা হয়। জনগণের উচ্ছ্বাস ও আবেগ দেখে ভারত সরকার ওই অস্থি আরও ছয় মাস সেখানে রাখার অনুমতি দিয়েছিল। বর্তমানে ভারত ও জর্জিয়ার মধ্যে নতুন করে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হয়েছে। রানি কেতেভানের পবিত্র অস্থির একটি অংশ ফিরে দিয়েই ভারতের কূটনৈতিক যাত্রা শুরু হল। বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছেন যে, এই পবিত্র অস্থি হস্তান্তর করার দিনটি কেবল জর্জিয়ার জন্য নয়, ভারতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।