হাউসে ইমপিচড ট্রাম্প, রিপাবলিকানরাই ভোট দিলেন বিরুদ্ধে! এরপর…
বুধবারই মার্কিন হাউসে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবে এনেছেন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠ হাউসে পাশ হয়েছে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব।
ওয়াশিংটন: বিদায়কালে একের পর এক ইতিহাস তৈরি করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বদলের শেষ দিনগুলি যেন ইতিহাস তৈরির দিন। এর আগে কোনও প্রেসিডেন্টকে দু’বার ইমপিচমেন্টের মুখে পড়তে হয়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই ইতিহাসও তেরি করলেন।
বুধবারই মার্কিন হাউসে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবে এনেছেন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠ হাউসে পাশ হয়েছে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব। হাউসে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের পক্ষে ভোট পড়েছিল ২৩২ আর বিপক্ষে ১৯৭। ১০ জন রিপাবলিকান সেনেটরও ভোট দিয়েছেন ট্রাম্পের বিপক্ষে। এরপর কীভাবে এগোবে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট পদ্ধতি?
সেনেটে ট্রায়াল:
মার্কিন সংবিধানের ২৫-তম সংশোধন অনুযায়ী, এবার ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট বিল যাবে সেনেটের ট্রায়ালে। সেখানে যদি ট্রাম্পের বিপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পড়ে তাহলেই ইমপিচ করা যাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। কিন্তু মেয়াদ থাকাকালীন ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। অর্থাৎ ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব সেনেটের ট্রায়ালে ভোটাভুটি হওয়ার আগেই মসনদ হারাবেন তিনি। যার অর্থ সেনেটে পাস হলেও কার্যকরী প্রেসিডেন্ট হবেন না মাইক পেন্স।
কিন্তু তড়িঘড়ি সেনেটে ট্রায়াল করার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন সেনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক সুমার। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সম্ভবনা কম। ২০ জানুয়ারি জো বাইডেন মসনদে বসার পরই সেনেটের নিয়ন্ত্রণ পাবে ডেমোক্র্যাটরা। তারপরই সেনেটে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টে ভোটাভুটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কেন ইমপিচমেন্ট?
ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবে ট্রাম্পের নামে প্রস্তাব আসার পিছনে তিনটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত,লাগাতার ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনিই নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু আসলে ফল আলাদা। ইলেক্টোরাল কলেজ সিদ্ধান্ত জানানোর পরও ট্রাম্প দাবি করে গিয়েছেন, নির্বাচন জিতেছেন তিনিই। এই মিথ্যাচারের অভিযোগ উঠেছে তাঁর নামে।
দ্বিতীয়ত, মার্কিন ক্যাপিটল হামলায় উস্কানি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁরই উস্কানির জেরে মার্কিন ক্যাপিটল তছনছ করেছে ট্রাম্প ভক্তরা। প্রসঙ্গত, মার্কিন ক্যাপিটলে হামলার আগেই ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য রেখেছিলেন। যেখানে তিনি তাঁর সমর্থকদের ‘হিংস্র’ হতে আহ্বান করেছিলেন। তারপরেই মার্কিন হাউসে হামলা করেন ট্রাম্প সমর্থকরা। সেই অভিযোগেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হাউসে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব এনেছেন ন্যান্সি পেলোসি।
তৃতীয়ত, নির্বাচনের ফল বদলে দেওয়ার জন্য বারবার ট্রাম্প ছলচাতুরির আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁর নামে এমনও অভিযোগ এসেছে যেখানে জর্জিয়ার স্টেট সেক্রেটারিকে তিনি বাইডেনকে হারানোর জন্য ভোট ‘খোঁজার’ কথা বলেছেন।
বিগত ইমপিচমেন্টের ফল:
এর আগে ক্ষমতার অপব্যাবহারের অভিযোগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ট্রাম্পের নাম ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব এসেছিল। যদিও সেই সময় সেনেট সম্পূর্ণ রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তাই হাউসে পাশ হলেও সেনেটে আটকে যায় ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব। কিন্তু এক্ষেত্রে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট সেনেটে যাওয়ার সময় সেনেটের নিয়ন্ত্রণ থাকবে ডেমোক্র্যাটদের হাতে। তবুও ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট পাশ হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।
এবার সেনেটে ডেমোক্র্যাটরা সংখ্য়াগরিষ্ঠ হলেও ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট পাশ হওয়া নিয়ে নিশ্চয়তা কম। কারণ ইমপিচমেন্ট পাশ হতে কমপক্ষে ১৭ জন রিপাবলিকান সেনেটরকে ট্রাম্পের বিপক্ষে যেতে হবে। তবে একাধিক রিপাবলিকানরা ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছেন, হাউসে তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন ১০ জন রিপাবলিকান নেতা। তাই বিশ্লেষকদের মতে ট্রাম্পের সেনেটে ইমপিচড হওয়ার সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আরও পড়ুন: মার্কিনবাসীর উদ্দেশে ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা ‘গৃহবন্দি’ ট্রাম্পের, মিলছে ফের অশান্তির ইঙ্গিত