গত কয়েক মাস ধরে অর্থনৈতিক সংকটে জেরবার শ্রীলঙ্কা। জ্বালানি,বিদ্যুৎ সংকটের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন দ্বীপরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ। এই আবহে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন মাহিন্দা রাজাপক্ষ। তারপরও বিক্ষোভের আগুন নেভেনি। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে কমপক্ষে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ২৫০-রও বেশি বাসিন্দা। দেশে শান্তি বজায় রাখতে বিক্ষোভকারীদের উপরে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রতিরক্ষা বাহিনীর তরফে। যদিও সেনা প্রধান এই দাবি অস্বীকার করেছেন। ভারত সরকারের হাই কমিশনের তরফেও জানানো হয়েছে যে, শ্রীলঙ্কার কোনও রাজনৈতিক নেতা ভারতে পালিয়ে আসেননি। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কট ও তার জেরে অশান্তির যাবতীয় আপডেট দেখে নিন এক নজরে-
শীঘ্রই নতুন মন্ত্রিসভাও তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি (Srilankan President) গোতাবায়া রাজাপক্ষে। যা নিয়ে বর্তমানে জোরদার চর্চা শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলে। এদিকে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কটের মোকাবিলা কোন পথে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে চিন্তা ডুব দিচ্ছে গোটা বিশ্ব।
শ্রীলঙ্কার সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের গভর্নর বুধবার বলেছেন আগামী দুই সপ্তাহে যদি রাজনৈতিক দলগুলি স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে না পারে তাহলে তিনি ইস্তফা দেবেন। পি নন্দলাল বীরাসিংহে জানিয়েছেন, বর্তমানের সঙ্কটজনক পরিস্থিতির কোনও রাজনৈতিক সমাধান না হলে কোনওভাবে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সফল হবে না।
গতকালই পরিবার নিয়ে ত্রিনকোমাল্লি নৌসেনা ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তারপর সেখানেও পৌঁছে যায় বিক্ষোভকারীরা। সেখানে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। প্রতিরক্ষা সচিব কামাল গুনেরাত্নে জানিয়েছে, মাহিন্দা রাজাপক্ষকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।
লাগাতার আর্থিক সঙ্কটের মুখে সোমবারই প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষ (Mahinda Rajapaksa)। এর মাঝেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জল্পনা তৈরি হয়েছিল প্রতিবেশী দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে সেনা পাঠিয়েছে ভারত। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তোলা যাবতীয় জল্পনা খারিজ করে দিয়েছে ভারতীয় হাই কমিশন। ভারতের হাইকমিশন জানিয়েছে, ভারত সম্পূর্ণভাবে শ্রীলঙ্কার গণতন্ত্র, স্থিতাবস্থা ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ওপর আস্থা রাখছে।
বিস্তারিত পড়ুন Sri Lanka Crisis: শ্রীলঙ্কায় সেনা পাঠিয়েছে ভারত? জল্পনা উড়িয়ে তত্ত্ব খারিজ হাই কমিশনের
বুধবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট আর্থিক সঙ্কটের এই সময়ে দেশের জনগণকে জাতিগত ও ধর্মাীয় বিভেদ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছেন। একে আর্থিক সঙ্কটের এই কঠিন সময়ে দেশে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে এখন যদি ধর্মীয় ও জাতিগত সঙ্কট মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তবে, পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে যাবে।
দেশের পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক না কেন, শ্রীলঙ্কা ছেড়ে যাবেন না প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষ। এমনটাই জানালেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে নমল রাজাপক্ষ।
কলম্বোর আকাশে হেলিকপ্টারের দেখা মিলতেই জল্পনা শুরু হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর পরিবার হয়তো ভারতে পালিয়ে এসেছে। তবে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রনেতারা এই দেশে পালিয়ে আসেননি। ভারতীয় হাই কমিশনের তরফে টুইটে জানানো হয়েছে, শ্রীলঙ্কার কোনও রাজনৈতিক নেতা ও পরিবার ভারতে পালিয়ে আসেননি। টুইটে বলা হয়েছে, “সম্প্রতি হাই কমিশনের নজরে এসেছে যে সোশ্যাল মিডিয়ায় জল্পনা ছড়িয়েছে যে নির্দিষ্ট কিছু রাজনৈতিক নেতা ও পরিবার ভারতে পালিয়ে এসেছেন। এই খবর সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং এর কোনও সত্যতা নেই। হাই কমিশনের তরফে তীব্রভাবে এই ভুয়ো তথ্যকে খারিজ করা হচ্ছে।”
বিস্তারিত পড়ুন: Sri Lanka Crisis: পুড়ছে দেশ, ‘পিঠ বাঁচাতে’ ভারতে পালিয়ে এসেছেন রাজাপক্ষ পরিবার?
আগুন জ্বলছে সোনার লঙ্কায়। দেশের আর্থিক সঙ্কট চরমে ওঠার পর থেকেই শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। মাস খানেক বিক্ষোভ চলার পর চলতি সপ্তাহেই ইস্তফা দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষ (Mahinda Rajapaksa)। কিন্তু তারপরও বিক্ষোভের আগুন নেভেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। যারাই সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করবে বা কারোর ক্ষতি করবে, তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেনা বাহিনী, বায়ুসেনা ও নৌসেনাকে।
বিস্তারিত পড়ুন: Sri Lanka Crisis: সোনার লঙ্কা পুড়ছে আগুনে, বিক্ষোভকারীদের থামাতে ‘চরম সিদ্ধান্ত’ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের
শ্রীলঙ্কায় থাকা চিনা দূতাবাসের তরফেও টুইট করে উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে। এমনকী শ্রীলঙ্কার গোটা পরিস্থিতির উপরেই নজর রাখছে চিনের বিদেশ মন্ত্রক। একইসঙ্গে চিনা দূতাবাসের টুইটে দ্বীপরাষ্ট্রে কর্মরত চিনা নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কোনও অশান্তির ঘটনা এড়িয়ে যেতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চিনের আশা, খুব দ্রুতই শান্ত ফিরবে শ্রীলঙ্কায়। তবে এর জন্য চিনের সমস্ত সেক্টরের আধিকারিকদের একযোগে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও মত বেজিংয়ের।
‘শ্যুট অ্যাট সাইটে’র নির্দেশ দেওয়া হল শ্রীলঙ্কায়। শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি যারা করছে বা যারা দাঙ্গা-হাঙ্গামা করছে তাদের সরাসরি গুলি করা হবে। সোমবার থেকে শুরু হওয়া তীব্র সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত সাতজন নিহত এবং ২০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষ মঙ্গলবার সহ নাগরিকদের বিরুদ্ধে হিংসা ও প্রতিশোধের আগুন বন্ধ করার আর্জি জানিয়েছেন। পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্য়া সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
I appeal and urge people to remain calm & stop violence & acts of revenge against citizens, irrespective of political affiliations.
All efforts will be made to restore political stability through consensus, within constitutional mandate & to resolve economic crisis.
— Gotabaya Rajapaksa (@GotabayaR) May 10, 2022
শ্রীলঙ্কার ত্রিনকোমালি নৌসেনা ঘাঁটিতে মাহিন্দা রাজাপক্ষকে ঘিরে বিক্ষোভ।
শ্রীলঙ্কার সংসদের স্পিকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষকে এই সপ্তাহে সংসদের অধিবেশন ডাকার জন্য অনুরোধ করেছেন। লঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্যই এই আর্জি।
ভারত মঙ্গলবার জানিয়েছে, তারা শ্রীলঙ্কার গণতন্ত্র, স্থিরতা ও অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের সমর্থন করে। গতকাল মাহিন্দা রাজাপক্ষের ইস্তফার পর এই প্রথম প্রতিক্রিয়া দিল ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। শ্রীলঙ্কার সংকট প্রসঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকাশিত শ্রীলঙ্কার জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থ দ্বারা ভারত সর্বদা পরিচালিত হবে।” তাঁর আরও সংযোজন, “সেদেশের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে ভারতের। শ্রীলঙ্কার ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে ভারত তার গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনকে সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করে।”
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় ভারতের সহায়তার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেছেন, “ভারত এই বছরেই শ্রীলঙ্কার জনগণকে তাঁদের বর্তমান অসুবিধাগুলি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্য ৩.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সাহায্য় দিয়েছে।”
বিক্ষোভের মুখে পড়ে বাসভবন ছাড়লেন শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। পরিবার নিয়ে দ্বীপরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বে ত্রিনকোমালিতে নৌসেনা ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর, মাহিন্দা রাজাপক্ষ তাঁর পরিবার নিয়ে হেলিকপ্টারে করে উড়ে গিয়েছেন।
গতকাল সরকারের সমর্থনকারী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হিংসার ঘটনায় উত্তপ্ত শ্রীলঙ্কা। এদিন শ্রীলঙ্কার অ্যাটর্নি জেনারেল সঞ্জয় রাজারতনম পুলিশ প্রধানকে এই ঘটনার দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এমনিতেই কার্ফু জারি রয়েছে। তার উপর আজ থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ট্রেড ইউনিয়নগুলি। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের উপর শাসকদলের সমর্থনকারীদের হামলার প্রতিবাদেই এই ধর্মঘট।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগেই কার্ফু জারি করা হয়েছিল। মঙ্গলবার সেই কার্ফু প্রত্যাহার কথা থাকলেও তা হয়নি। গতকালের বিক্ষোভের পর বুধবার অবধি তা কার্যকর করা হয়েছে। সেনাপ্রধান জেনারেল শাভেন্দ্র সিলভা শান্ত থাকার কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলনেতারা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর গ্রেফতারের দাবি তোলেন। তাঁদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হিংসার প্ররোচনা দিয়েছেন তিনি।
বিক্ষোভকারীরা শ্রীলঙ্কার শাসকদল শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনা (SLPP)-র সাংসদ ও সমর্থনকারীদের গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয়।
গতকাল রাতে কুরুনেগালায় মাহিন্দা রাজাপক্ষের বাসভবনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
Mahinda Rajapaksa's residence in Kurunegala set fire. #Lka pic.twitter.com/47qsZMRrvt
— Manjula Basnayake (@BasnayakeM) May 9, 2022
গতকাল প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর মাহিন্দা রাজাপক্ষের সরকারি বাসভবনে জড়ো হন তাঁর হাজারের বেশি সমর্থক। অর্থনৈতিক সংকটের জন্য গতকাল সকাল থেকেই সেখানে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন সরকার বিরোধীরা। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সমর্থনকারীরা বিক্ষোভকারীদের উপর আক্রমণ করলেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। বিক্ষোভকারীদের রোষানলে পড়ে গতকাল শাসকদলের এক সাংসদের মৃত্যু হয়। ২০০ জনের বেশি জখম হয়েছেন। এদিন সেই ঘটনায় মৃত বেড়ে হয়েছে ৮।