Matua: ৯০ শতাংশ মতুয়াই ডাক পাবেন শুনানিতে? ‘নো বিজেপি নো তৃণমূল’, স্লোগান মতুয়া গড়ে
SIR In WB: মতুয়া মহলে এখন স্লোগান উঠেছে, 'নো বিজেপি নো তৃণমূল', মতুয়াদের একত্রিত হওয়ার ডাক দিচ্ছেন সমান্তরাল নেতারা। আন্দোলনের নেতা বলেন, "নিজেদের নাগরিকত্ব রক্ষার জন্য ভোটাধিকার রক্ষার জন্য সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে।" নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মতুয়া জানান, ঠাকুর বাড়িতে যেভাবে রাজনৈতিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে, তাতে মতুয়া ভক্তদের ভাবাবেগে আঘাত এসেছে।

উত্তর ২৪ পরগনা: বনগাঁ-রানাঘাটে মতুয়াগড়ে ৯০ শতাংশ মতুয়াই শুনানিতে ডাক পাবেন। তেমনটাই জানালেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি সুব্রত ঠাকুর। তাঁর বক্তব্য, “মতুয়াদের কাছে যে কাগজ চাওয়া হয়েছে, বেশিরভাগ মতুয়াদের কাছেই তা নেই। একমাত্র রক্ষাকবচ নাগরিকত্ব নিতে হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি, দ্রুত এই নাগরিকত্ব দেওয়া হোক।” তাঁর বক্তব্য, “যেটা পরে দেওয়া হবে, সেটা আগে দেওয়া হোক। বৃহৎ অংশের মতোয়ারা চিন্তিত রয়েছে।”
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, নাগরিকত্বের আবেদন করলেই ভোটার লিস্টে নাম তোলা যাবে না। অর্থাৎ প্রথমে নাগরিক হতে হবে, তারপরই তাঁরা ভোটাধিকার পাবেন। গত শুক্রবার থেকে আবার আবেদনকারীদের ফোনে সার্টিফিকেটের মেসেজও ঢুকতে শুরু করেছে। তাতে কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত মতুয়ারা। কিন্তু তার মধ্যেই মতুয়া প্রভাবিত বনগাঁ মহকুমার ৪ বিধানসভা কেন্দ্রে ১ লক্ষ ৩৪ হাজারের বেশি গোটা ভোটারকে এসআইআর-এর শুনানিতে ডাকা হবে বলে কমিশন সূত্রে খবর। আতঙ্কিত মতুয়া সমাজ। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ মহকুমার চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে মতুয়াদের প্রভাব রয়েছে। আর এই চার বিধানসভা কেন্দ্রে এসআইআর-এ ১ লক্ষ ৩৪ হাজারের বেশি ভোটারকে শুনানিতে ডাকা হচ্ছে বলে কমিশন সূত্রে খবর ।
এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে মতুয়াগড়ে আতঙ্ক। মতুয়া মহলে এখন স্লোগান উঠেছে, ‘নো বিজেপি নো তৃণমূল’, মতুয়াদের একত্রিত হওয়ার ডাক দিচ্ছেন সমান্তরাল নেতারা। আন্দোলনের নেতা বলেন, “নিজেদের নাগরিকত্ব রক্ষার জন্য ভোটাধিকার রক্ষার জন্য সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মতুয়া জানান, ঠাকুর বাড়িতে যেভাবে রাজনৈতিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে, তাতে মতুয়া ভক্তদের ভাবাবেগে আঘাত এসেছে। রাজনৈতিক দল তাঁদের নিয়ে রাজনীতি করেছে কিন্তু তাঁদের কোনও দাবি মানা হয়নি। SIR-এ সবথেকে বেশি ‘আন ম্যাপিং’ হয়ে রয়েছে মতুয়া ভক্তরা। যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ভোটার তালিকার নাম তুলতে পারবেন কিনা সংশয় রয়েছেন। কারণ তাদের কাছে বৈধ কাগজ নেই।
নির্বাচন কমিশন যে এগারোটা নথির কথা বলেছেন, তাতে নাগরিকত্বের সার্টিফিকেটের প্রসঙ্গ না থাকায় সেখানেও ধন্দে রয়েছেন মতুয়ারা। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মহিতোশ বৈদ্য বলেন. “এটাই তো পলিটিক্স। সমস্ত রাজনৈতিক দল নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে হাতিয়ার করছে। আমরা ভোটাধিকার নষ্ট হওয়ার ভয় পাচ্ছি। কারণ নাগরিকত্ব সার্টিফিকেটের কথা তো কমিশনের লিস্টে নেই। আমরা আশা করছি, যেহেতু কেন্দ্র বলছি, নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট থাকলে ভয় নেই, সেই বিশ্বাসটা নিয়েই আছি।”
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে মতুয়া সম্প্রদায়ের মোট জনসংখ্যা আড়াই থেকে পৌনে তিন কোটি। ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’-এর সঙ্ঘাধিপতি তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের হিসাব অনুযায়ী, রাজ্যের ১০০টি বিধানসভা আসনে মতুয়া ভোটারদের ‘উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি’ রয়েছে। তার মধ্যে ২১টি আসনে মতুয়া ভোটই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এবারে বিজেপি, তৃণমূল, কংগ্রেস সব নেমে পড়েছেন ময়দানে।
তবে মমতা বালা ঠাকুরের বক্তব্য, “তৃণমূল তাদের নিয়ে রাজনীতি করেনি বরং বিজেপি তাদের হয়ে রাজনীতি করেছে। আগামী দিনে ভোটার তালিকায় মতুয়ারা নাম তুলতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে একটা বড় সংশয় থেকেই যাচ্ছে।” তবে পাল্টা বিজেপির বক্তব্য, সকলের নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট করিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলা যাবে।
