‘ওরা আমায় ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলল, বাবা তখনও আমার নাম ধরে ডেকে চলেছে…’
সময়ের নিয়মে শোকের ঢেউ একসময় শান্ত হয়। বাবিল জানাচ্ছেন, বাবার মৃত্যুর দু'দিন পর যখন সব শান্ত হল, মিটল হাসপাতালের যাবতীয় কাজকর্ম, শান্ত হল মিডিয়ার কৌতূহল-- ভেঙে পড়লেন তিন। চোখের সামনে সব কিছু কেমন অন্ধকার...বন্ধ হয়ে যেতে লাগল। বাবিল বুঝতে পারলেন বাবা আর নেই।
মন খারাপের এক বছর পূর্ণ হল আজ। মাঝের সময়টা ইরফানহীন হয়েই কাটিয়ে দিল বলিউড। শোকের আয়ু কম, তাই দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফিকে হয়েছে কষ্ট, শুকিয়ে গিয়েছে চোখের জলও। তবু বাবা হারানোর যন্ত্রণায় আজও প্রতিনিয়ত ধ্বস্ত হন বাবিল। বাবা নেই, আর সে আসবে না, জড়িয়ে ধরবে না, ভাগ করে নেওয়া যাবে না মনের কথা–এ সবটাই জানেন তিনি। তবু বাবার স্পর্শ খুঁজে চলেন তিনি, হাতড়ান স্মৃতি। সোশ্যাল মিডিয়া আজ ইরফান-ময়। তাঁর মৃত্যুর পর কী হয়েছিল ইরফানের পরিবারের? স্বামীর মৃত্যুকে ‘ব্যক্তিগত শোক’ বলতে নারাজ সুতপা সহজে মেনে নিতে পেরেছিলেন সবটা? আর বাবিল? আত্মহত্যার ইচ্ছাও জেগেছিল মনে…!
গত বছর ২৯ এপ্রিল ইরফানের দীর্ঘদিনের বন্ধু, পরিচালক সুজিত সরকার টুইটারে প্রথম জানিয়েছিলেন খবরটি। থমকে গিয়েছিল বলিউড। ফেসবুকে একের পর এক শোক জ্ঞাপনের পালা, মিডিয়া-সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে প্রয়াত অভিনেতার ছবির ক্লিপিংস আর ‘রেস্ট ইন পিস’-এর ঘনঘটায় বাবার মৃত্যুর শোক-যাপনের অবকাশ মেলেনি বাবিলের। দীর্ঘদিনের সঙ্গী হারানো মা, সদ্য বাবা হারানো ভাই কে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজেকেই সান্ত্বনা দেওয়া ওঠেনি তাঁর। তাঁর মা’ও অবাক হয়েছিলেন কিছুটা। প্রশ্ন করেছিলেন, ‘এত স্বাভাবিক ভাবে কী করে নিচ্ছ সমস্ত কিছু’?
আরও পড়ুন–‘এমনিতে স্টেবল রয়েছি, তবে মারাত্মক দুর্বল’, সপরিবারে করোনা আক্রান্ত দিতিপ্রিয়া
View this post on Instagram
সময়ের নিয়মে শোকের ঢেউ একসময় শান্ত হয়। বাবিল জানাচ্ছেন, বাবার মৃত্যুর দু’দিন পর যখন সব শান্ত হল, মিটল হাসপাতালের যাবতীয় কাজকর্ম, শান্ত হল মিডিয়ার কৌতূহল– ভেঙে পড়লেন তিন। চোখের সামনে সব কিছু কেমন অন্ধকার…বন্ধ হয়ে যেতে লাগল। বাবিল বুঝতে পারলেন বাবা আর নেই। তাঁর কথায়, “জেগে থাকার কোনও তাগিদ নেই। বাঁচার ইচ্ছে নেই। মানসিক অবসাদ গ্রাস করছিল ক্রমশ। মরে যেতে ইচ্ছে করত। বেঁচে থাকাকে দুঃসহ মনে হতে লাগল।” এমন একটা সময়ে ছেলেকে আগলেছিলেন মা সুতপা। জানাচ্ছেন বাবিলই। সুতপার পোস্টে আজও বেঁচে থাকেন ইরফান। আর বাবিলের জীবনের তার অনায়াস যাতায়াত শক্তি হিসেবে।
View this post on Instagram
শেষের ক’টা দিন কষ্ট পেয়েছিলেন ইরফান। বাবিলের মনে পড়ছে এমন একটা দিনের কথা, অভিনেতাকে ক্যাথিটার পরানোর জন্য লোক এসেছে। বাবিলকে তাঁরা ঘর থেকে বেরতে বললেন। বাবিলের কথায়, “বাবা বারণ করল। আমায় পরিষ্কার করে জানাল, বাবিল তুমি কোথাও যাবে না…ওরা আমায় ঘর থেকে বের করে দিল… আমি স্পষ্ট শুনলাম, বাবা আমার নাম ধরে চিৎকার করছেন…বাবিল…বাবিল…।” অসহায়ের মতো বাইরে দাঁড়ানো ছাড়া কিছুই করার ছিল না তাঁর।
আজ বাবিলের ইনস্টাগ্রামেও ইরফান। বাবিল লিখেছেন, ‘কেমো তোমাকে ভিতর থেকে পুড়িয়ে দিয়েছিল। সে কারণেই ছোট ছোট জিনিসে আনন্দ খুঁজে নিতে তুমি। নিজের টেবিল নিজেই তৈরি করা, নিজের জার্নাল লেখায় ব্যস্ত থাকতে কেমোর দিনগুলোতে। এই নিখাদ বিষয়টা এখনও পর্যন্ত আর কোথাও পাইনি। এই ঐতিহ্যটা আমার বাবার সঙ্গেই শেষ হয়ে গিয়েছে।’ ইরফান বাবিলের শুধু ‘বাবা’ ছিলেন না। বাবিলের জীবনে ইরফান ছিলেন ভাই, বন্ধু, সঙ্গী…।