‘ভাগ্যিস মৃণালদাকে না বলেছিলাম সেদিন’, বাংলার ‘স্মিতা’কে নিয়ে অকপট মমতা-কৌশিক
Sreela Mazumdar: মমতা অর্থাৎ শ্রীলার আদরের মমদি স্মৃতি হাতড়াচ্ছিলেন। ২০২৪ হঠাৎ করেই যেন বদলে গিয়েছিল ১৯৭৯ সালে। ছবির নাম 'একদিন প্রতিদিন'। মমতা বলে চললেন, "মৃণাল সেন আমায় ওই ছবির মুখ্য চরিত্র অফার করলেন।
কী অদ্ভুত সমাপতন! শুরুটা হয়েছিল মৃণাল সেনের হাত ধরে। আর শেষটাও হল তাঁকেই শ্রদ্ধা জানানো ছবি ‘পালান’-এর মধ্যে দিয়ে। জীবনের এক বৃত্ত যেন এভাবেই পূর্ণ করলেন অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার। দীর্ঘ তিন বছর জরায়ুর ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে যিনি হঠাৎ করেই নেই হয়ে গিয়েছেন আজ অর্থাৎ ২৭ জানুয়ারি। খবরটা পেতেই চমকে উঠেছিলেন মমতা শঙ্কর। দীর্ঘদিনের কর্মসঙ্গী, বোনের মতো মেয়েটি আর নেই, এ যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না তাঁর। তাই টিভিনাইন বাংলার ফোন করতেই ধাতস্থ হতে খানিক সময় নিলেন। এরপর ধরা গলায় বললেন, “কী বলি! শরীরটা খারাপ হয়েছিল ‘পালান’-এর সময় থেকেই। বেশ কষ্ট হতো ওর। যদিও কাউকে কিচ্ছুটি বুঝতে দিত না। জিজ্ঞাসা করলেও হাসিমুখে উত্তর দিত। আমায় যে কী ভালবাসত। আমি যেন ওঁর দিদি ছিলাম। আমায় কেউ কিছু বললে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ। মেয়েটা চলে কী করে গেল?” এই প্রশ্নের উত্তর জানেন না কেউ।
মমতা অর্থাৎ শ্রীলার আদরের মমদি স্মৃতি হাতড়াচ্ছিলেন। ২০২৪ হঠাৎ করেই যেন বদলে গিয়েছিল ১৯৭৯ সালে। ছবির নাম ‘একদিন প্রতিদিন’। মমতা বলে চললেন, “মৃণাল সেন আমায় ওই ছবির মুখ্য চরিত্র অফার করলেন। সে সময় আমার ছেলের বয়স মাত্র ১৭ মাস। ওই টুকু ছেলে রেখে আমি ছবি কী করে। ওঁকে বলি, আমি না পারব না। অন্য কাউকে নিন। ব্যস আমার চরিত্রটি গেল শ্রীলার কাছে। আমি অন্য একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করলাম। কী ভাল ওঁর অভিনয়। অত ভাল হয়তো আমিও করতে পারতাম না। ভাগ্যিস সে দিন ওই চরিত্রে না বলেছিলাম আমি।”
‘খারিজ’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শ্রীলা মজুমদার। মৃণাল সেনের জন্ম শতবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় গত বছরই তৈরি করেছিলেন ‘পালান’। ওই ছবিতেও ছিলেন শ্রীলা। কৌশিক বললেন, “উনি মারা যাবেন ভাবতে পারিনি। ভাল জিনিস, কাজের মধ্যে দিয়ে চলে গেলেন। ওঁর সঙ্গে দু’টি কাজ করেছি। শঙ্কর মুদী ছবিতে আমার স্ত্রীর ভূমিকায় কাজ করেছিলেন আর অন্যদিকে পালানেও ওঁকে পেয়েছি। শুনেছি মৃণাল সেন ওঁকে বলতেন বাংলার স্মিতা পাতিল। বড় ভাল অভিনয়। অসুখের ব্যাপার নিয়ে কোনওদিন কিছু বলতে চাননি। আমি তাই নিজেও আর জিজ্ঞাসা করিনি। এই কিছু দিন আগেই এক অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল। তখনও কিন্তু কিছু মনে হয়নি।” ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েও কাজ তিনি থামিয়ে দেননি। অসুস্থ ছিলেন সকলেই জানত, তবু নিজে যেন তা মানতেই চাইতেন না শ্রীলার। ঘনিষ্ঠমহলে বলতেন, আরও অনেক কিছু করার বাকি আছে তাঁর। তিনি চলে গেলেন। কী বা এমন বয়স হয়েছিল তাঁর? মাত্র ৬৫…