Bishwanath Basu: ৮বার ডেকেছিলেন প্রযোজক, একবারও বসতে বলেননি: বিশ্বনাথ বসু
Bengali film industry: একবার এক পরিচালক বিশ্বনাথকে সরস্বতী পূজার সকালে ৭টায় ডেকেছিলেন। ভোর ৫টায় কোন বাড়িতে সরস্বতী পুজো হয় খুঁজে বের করে সেখানে অঞ্জলি দিয়ে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ার জন্য পরিচালকের বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন সকাল ৭টাতেই। সেদিন সেই পরিচালক বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন তিনি বিশ্বনাথকে আসতে বলেছেন।
গোলগাল চেহারা। রসগোল্লার মতো গাল। কুমার শানুর গলা নকল করে গান করেন। হয়েছেন কমেডি অভিনেতা। তিনি বিশ্বনাথ বসু। জন্মভিটে বসিরহাট। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আর্থিক অবস্থা অনুকূল ছিল বলে তাঁরা কলকাতায় থাকতেন। আর অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে বড় হয়েছিলেন বিশ্বনাথ। মনের মধ্যে জেদ ছিল একদিন কলকাতায় এসে প্রতিষ্ঠিত হবেনই। অভিনয় করে সকলের মনে জয় করে নেবেনই। কিছু না থাকা সত্ত্বেও মুম্বইয়ের মত জায়গায় যদি বাংলার গৌরাঙ্গ, অর্থাৎ, মিঠুন চক্রবর্তী প্রতিষ্ঠা পেতে পারেন, তা হলে তিনিও পারবেন।
বিশ্বনাথ বসুর অভিনয় জীবনে খুব একটা গোলাপের পাপড়ি বিছানো ছিল না। তাঁর পথেও ছিল একাধিক কাঁটা। যে কাঁটায় পা রেখে রক্তাক্ত হয়েছেন বহু বহু বার। কিন্তু কোনওদিনও হাল ছেড়ে দেননি। সেই হাল না-ছাড়ার কথাই নিজে মুখে বলেছেন বিশ্বনাথ।
এনটি স্টুডিয়োতে তখন তরুণ মজুমদার, হরনাথ চক্রবর্তী, অনুপ সেনগুপ্তদের রমরমা। তাঁদের শুটিং চলছে। গাড়ি এবং দু’চাকা ছাড়া ঢোকা যায় না স্টুডিয়োর গেট দিয়ে। বাইরে সিকিউরিটি গার্ডের ঘরে ঘণ্টার পর-ঘণ্টা অপেক্ষায় ছিলেন বিশ্বনাথ। কখন ডাক আসবে ভিতর থেকে। স্টুডিয়ো পাড়ায় চেনা মুখ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন তাঁকে বোঝাতে হত কেন স্টুডিয়োর ভিতরে ঢুকতে চান।
পরিচালকদের সঙ্গে দেখা করতেন তাঁদের দেওয়া সময়ে। একবার এক প্রযোজক তাঁকে আটবার আসতে বলেছিলেন। প্রত্যেকবারই তিনি গিয়েছিলেন। তাঁকে বসতেও বলা হয়নি। কাজের সুযোগও দেওয়া হয়নি। তিনি বলেছিলেন, একবার এক পরিচালক তাঁকে সরস্বতী পূজার সকালে ৭টায় ডেকেছিলেন। ভোর ৫টায় কোন বাড়িতে সরস্বতী পুজো হয় খুঁজে বের করে সেখানে অঞ্জলি দিয়ে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ার জন্য পরিচালকের বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন সকাল ৭টাতেই। সেদিন সেই পরিচালক বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন তিনি বিশ্বনাথকে আসতে বলেছেন।
এতখানি লড়াইয়ের পরেও কোনওভাবেই হাল ছেড়ে দেননি বিশ্বনাথ। থিয়েটার করেছেন। সিনেমাতে কাজ করেছেন। মিঠুন চক্রবর্তী, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, তাপস পাল, দেব, জিৎ, অঙ্কুশ, বনি – সকলের সঙ্গে অভিনয় করেছেন সিনেমায়। ১০০টিরও বেশি সিরিয়ালে তাঁকে দেখা গিয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। ১৫০টি ছবিতে কাজ করেছেন। কিন্তু নিজেকে ভুলে যাননি। তাঁর এই যাত্রা অনুপ্রেরণা জোগায় বর্তমান প্রজন্মের বহু অভিনেতাকেই।