Madan Mitra Excluside: ‘যে যত কুকথা বলছে, সে ততই ইন্টেলেকচুয়াল হচ্ছে’: মদন ‘ওহ্ লাভলি’ মিত্র
Inside Story: একটা বই (সিনেমা) খরচ করে তৈরি হয়েছে, সেই বই প্রোমোশনের জন্য, বিক্রির জন্য, বাজার ধরার জন্য তো এগুলো করতেই হবে। গান হবে, নাচ হবে, এগুলো না করলে, মানুষ কী করে আকৃষ্ট হবেন?

জয়িতা চন্দ্র
তাঁর সঙ্গে ‘মিত্র’তা করতে চান সোশ্যাল মিডিয়া স্যাভি জেন ওয়াই, জেন জ়েড-ও। তাঁর ‘আধ ঘণ্টায় লাইভে আসছি’ থেকে শুরু করে ‘ওহ্ লাভলি’তে মজে থাছেন আম-আদমির একটা বড় অংশ। সাধারণ মানুষের সঙ্গে ‘কানেক্ট’ করতে কীভাবে হয়, সেই কৌশল তাঁকে দেখে এককথায় শেখা উচিত এ যুগের তাবড় ইনফ্লুয়েন্সারের। এহেন ‘মিত্রমশাই’-ই এবার সিনেমায়। আর সেই সিনেমার নামও তাঁর সিগনেচার প্রতিক্রিয়ার সেই দু’টি ভাইরাল শব্দ: ‘ওহ্ লাভলি’। তবু তিনি, থুড়ি মদন মিত্র, কেন আক্ষেপ করছেন সিনেমাহল নিয়ে? খোঁজ নিল TV9 বাংলা।
দিকে-দিকে নাকি ‘ওহ্ লাভলি’ ঝড়?
নন্দনে আমরা একটা শো ভাঙার পর গিয়েছিলাম। আমি, হরনাথদা ছিলেন, ছবির নায়ক-নায়িকারা ছিলেন। সেখানে এক অদ্ভূত ব্যপার হয়। তখনও ৬০ শতাংশ দর্শক ছিলেন প্রেক্ষাগৃহে। খুব স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেখে তাঁরা লাফিয়ে ওঠেন। এরপর টানা ৪৫ মিনিট ধরে এমন সেলফি উঠেছে, যে নন্দন কর্তৃপক্ষকে আলো নিভিয়ে দিতে হয়েছিল। বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, আমি যখন সকলের সঙ্গে কথা বললাম, দেখি কেউ হাওড়া থেকে এসেছেন, কেউ হুগলি থেকে এসেছেন। আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করি,0 এত দূর থেকে আপনারা এসেছেন? আমায় একটাই উত্তর সকলেই দিলেন, ‘আমাদের ওখানে তো সিনেমাহল নেই।’
ছবিটা কেমন লাগছে দর্শকদের?
সকলেই একটা কথা বলছেন, ‘এমন একটা ছবি যা সবার সঙ্গে দেখা যায়। বেশ ভালই গল্প, প্রেম আছে, আবেগ আছে, ভাল ক্লাইম্যাক্স আছে, সকলের সঙ্গে হইহই করে দেখার মতো ছবি।’
মদন মিত্র ছবি করছেন, খবর প্রকাশ্যে আসতে ব্যঙ্গ-কটাক্ষ তো কম হয়নি…
এর উত্তরে বলব ‘ওহ্ লাভলি’। কারণ আমরা আগলি (ugly)-র বিরুদ্ধে। চারিপাশে এত আগলি, তার মাঝে দু’ঘণ্টার জন্য ‘ওহ্ লাভলি’ দেখুন। কে সমালোচনা করল, কে নিন্দা করল, তা নিয়ে ভাবি না। মূল কথা হল, বাংলা ছবিকে সামগ্রিকভাবে বাঁচাতে গেলে একটা টোটাল রিপোর্ট চাই। সেখানে টাকার ব্যাপারটা এমনভাবে দাঁড়িয়ে গিয়েছে, অন্যান্য রাজ্য যেমন হিন্দি বা তামিল-তেলুগু ছবি দেখতে প্রেক্ষাগৃহ ভর্তি করে, আমি একটাও হল পাইনি। কোনও হল নেই, শুধু মল। আমি যদি ২০ হাজার টাকা দিয়ে একটা হল পাই, ২ লক্ষ টাকায় একটা মল। ফলে এখানে বাংলা সিনেমা টিকে থাকাটা ভীষণ কঠিন। লক্ষ-লক্ষ বাংলার মেকআপ আর্টিস্ট, কলাকুশলীদের ভবিষ্যত আমাকে ভাবায়। সেখানে দাঁড়িয়ে আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর নন্দন, স্টার আর রাধা… এটাই সম্বল। সত্যি বলছি, হল পাওয়াটা খুব দুষ্কর হয়ে উঠছে। একটা মজার বিষয় বলি, দু’দিন প্রচণ্ড বৃষ্টি হল, সেই দু’দিন বাড়ি থেকে মানুষ বেরোতেই পারলেন না। তখন প্রেক্ষাগৃহ থেকে বলছে, এই ক’দিন কোনও টিকিট বিক্রি হয়নি। ছবি নামিয়ে নাও, অন্য ছবি লাগাও। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়েই তো আমাদের চলতে হবে। তবে যেটুকু খবর আমি পাচ্ছি, ছবিটা দর্শক টানছে।
‘মদনদার ছবি’, এটাই তো পরিচিতি হয়ে দাঁড়ায়।
গোটা বাংলার মানুষই জানেন ‘ওহ্ লাভলি’ বলে একটা ছবি এসেছে। অনেকেই শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। দেখতে চাইছেন। কিন্তু ওই যে আবারও একই সমস্যা, যদি হলই না থাকে, কোথায় দেখবেন বলুন তো ছবিটা। ব্যারাকপুরে একটামাত্র সিনেমাহল। তারপর অনেকটা জায়গা ফাঁকা। এটা কিন্তু জাতীয় স্তরে বোঝা যাবে না। কারণ যাঁরা জাতীয় ছবি করছেন, সেক্ষেত্রে অন্যান্য রাজ্যে সিনেমাহলের সংখ্যা বেশি থাকায় তাঁরা সামগ্রিকভাবে লাভের মুখ দেখছেন। কিন্তু বাংলার ছবি তো মূলত বাংলার দর্শকদের জন্যই, সেখানে হল কোথায়? বিধানসভায় মহোৎসব ছিল, সেখানে উপস্থিত থাকা Consul General-রাও আমার ছবি সম্পর্কে জানেন।
এত ছবির ভিড়ে ‘ওহ্ লাভলি’ আলাদা কোথায়?
আমি কাউকে আঘাত করে বলছি না। এখন বাংলা ছবির একটা ট্রেন্ড দেখা গিয়েছে, ১৬০ মিনিটের ছবির মধ্যে ১১৯ মিনিট অশ্রাব্য কুকথা, যে সংলাপ ছেলে তার মায়ের সামনে শুনতে পারছে না, স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে শুনতে পারছেন না। আবার যে যত কুকথা বলছে, সে ততই ইন্টেলেকচুয়াল হচ্ছে। আমার ছবি কেমন হয়েছে জানি না, তবে আমি বলেছিলাম তিন প্রজন্ম একসঙ্গে ছবিটা দেখতে পারবেন। সেটা কিন্তু দর্শকেরা আমায় এসে জানিয়েছেন।
এই ছবিতে তো অভিনয় করা ছাড়াও প্রচারেরও সিংহভাগ দায়িত্বও ছিল আপনার ওপর…
নিঃসন্দেহে এটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমি একজন শিল্পী হিসেবে চাইব ছবিটা চলুক। আমাদের যাঁরা নায়ক-নায়িকা রয়েছেন, তাঁরা তো নতুন, ফলে সেই অর্থে তাঁদের তরফ থেকে প্রচারটা আসছে না, যতটা মদন মিত্রের নামে হচ্ছে। কারণ একটাই, আমি রাজনীতিবিদ, আমি জনগণের পরিচিত মুখ। সেই কারণেই প্রচারের একটা বড় দায়িত্ব আমায় নিতে হয়েছে।
রাজনীতির চাপে কি অভিনয় সত্ত্বা চাপা পড়েছিল এতদিন?
রাজনীতির ময়দান তো একটা বড় জায়গা। যেখানে নিজেকে তৈরি করা যায়। রাজনীতি হচ্ছে যেখানে প্রতিটা মুহূর্তে মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হয়। মা যেমন ভাত টিপলে বুঝতে পারে, একজন রাজনীতিবিদও একজন মানুষের চোখ দেখলে বুঝতে পারে, সে কী বলতে চাইছে। অন্তত এটাই হওয়া উচিত। রাজনীতি থেকে কার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা উচিত, সেই শিক্ষা মেলে। হরনাথদা অত্যন্ত অভিজ্ঞ মানুষ। তিনি আমায় দিয়ে যেমন অভিনয়টা করিয়ে নিয়েছেন, তেমনই আমার পলিটিক্সের গ্রুমিংটাও এক্ষেত্রে ভীষণ কাজে লেগেছে।
আপনার এই নাচ-গান নিয়ে, প্রচার নিয়ে কখনও কোনও প্রশ্ন ওঠে না?
রাজনীতির ময়দানে একজন নেতাকে সেভাবে হাসতে দেখা যায় না। আড়ষ্ট নেতা। একজন নেতা গম্ভীরভাবে বসে থাকে। তাঁর কাছে কখনওই সাধারণ যাবে না। নেতাকে সাধারণের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সাধারণের সঙ্গে মিশে থাকতে হবে। পিকনিক করতে হবে। সহজ হতে হবে। মানুষের সঙ্গে হেসে কথা বলতে হবে। এই যে আমি রাজনীতি করি, নাচে-গানে অংশগ্রহণও করি। এতে কিন্তু আমার সংস্কৃতি বিন্দুমাত্র কলুষিত হচ্ছে বলে আমি মনে করি না। কারণ আমরা কেউই কোনও অশ্লীল কিছু করিনি।
মুখ্যমন্ত্রী দেখলেন ছবিটা?
আমি যখন মহোৎসব থেকে বেরচ্ছিলাম, মুখ্যমন্ত্রী মিটিং-এ যাচ্ছিলেন, আমায় দেখে হেসে বললেন ‘ওহ্ লাভলি’… এখন ‘লাভলি’ চলছে। তবে ছবিটা দেখতে বলার সুযোগ পাইনি এখনও। তবে ওঁকে ছবিটা দেখার আর্জি জানাব নিশ্চয়ই।
রাজনীতি না অভিনয়?
অভিনয় একটা বিরাট এরিয়া, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। রাজনীতি যেমন একটা বড় আঙিনা সমাজ জীবনের, তেমনই অভিনয়টাও একটা বড় জায়গা। যখন দেখবেন দুই দেশে যুদ্ধ হয়, তারপর শান্তি চুক্তির সময় বড়-বড় অভিনেতা-অভিনেত্রীকে পাঠানো হয়। কারণ তাঁরাও আমাদের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। আমার ইচ্ছে আছে সুযোগ পেলে আরও মন দিয়ে অভিনয়টা করব। তবে যদি প্রশ্ন করা হয় অভিনয় না রাজনীতি, অবশ্যই বলব রাজনীতি।
প্রযোজক হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে?
এত টাকা আমার নেই। প্রযোজনা, পরিচালনা মানে বিশাল দায়িত্ব, দেখলাম তো সব। সব দিকে নজর রাখতে হয়। লাইট, ক্যামেরা থেকে শুরু করে, রান্নাবান্না, অ্যাকশন… সবকিছুতেই নজর রাখতে হয়। এ ভয়ানক দায়িত্ব। দর্শকদের মাঝে আছি, সিনেমার মধ্যে আছি, সেন্সেটিভ ভিলেনের জন্য আমি আছি। এমন একজন ভিলেন, যা মদন মিত্রকে অন্য লুকে তুলে ধরবে। ছবি দেখে সকলে বলবেন, আমরা বিশ্বাই করি না যে এটা মদন মিত্র করতে পারেন। চরিত্রের বিপরীত মেরুতে থেকে অভিনয় করতে চাই। একটা কথাই আপনাদের মাধ্যমে দর্শকদের বলতে চাই, ফুচকা খেতেই তো একশো টাকা বেরিয়ে যায়। একটু আসুন না, ছবিটা দেখুন। ভাল লাগলে উপভোগ করবেন। না লাগলে বলবেন, কোথায়-কোথায় খামতি ছিল, মাথা পেতে নেব।





