AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

উত্তম কুমার বম্বেতে নতুন সংসার পাততে চেয়েছিলেন! কিন্তু আটকে গেলেন এই কারণে

মা ও স্ত্রীর সঙ্গে সময়ও কাটাতেন। মহানায়কের এই দোটানা দাম্পত্য নিয়ে সেই সময় বহু গুঞ্জন ছড়িয়েছে, বহু আলোচনা হয়েছে। তবে মুখ ফুটে উত্তম কখনই, কাউকে কিচ্ছুটি বলেননি। চুপ থাকতেন গৌরদেবীও। কিন্তু অনেকের কাছেই অজানা, স্ত্রী গৌরীদেবীর কাছ থেকে দূরে থাকলেও, দুজনের মধ্যে মনের টান ছিল।

উত্তম কুমার বম্বেতে নতুন সংসার পাততে চেয়েছিলেন! কিন্তু আটকে গেলেন এই কারণে
| Updated on: Sep 17, 2025 | 4:33 PM
Share

সুপ্রিয়া চৌধুরীর সঙ্গে উত্তমের সম্পর্কের কারণে কখনই স্ত্রী গৌরী দেবী, উত্তমের সঙ্গে বেশি সময় ধরে সংসার করতে পারেননি। গৌরীদেবী থাকতেন ভবানীপুরে উত্তমের পৈতৃক বাড়িতে আর উত্তম, সুপ্রিয়াকে নিয়ে থাকতেন ময়রাস্ট্রিটের বাংলোতে। তবে রবিবার করে ভবানীপুরের বাড়িতে যেতেন উত্তম। মা ও স্ত্রীর সঙ্গে সময়ও কাটাতেন। মহানায়কের এই দোটানা দাম্পত্য নিয়ে সেই সময় বহু গুঞ্জন ছড়িয়েছে, বহু আলোচনা হয়েছে। তবে মুখ ফুটে উত্তম কখনই, কাউকে কিচ্ছুটি বলেননি। চুপ থাকতেন গৌরদেবীও। কিন্তু অনেকের কাছেই অজানা, স্ত্রী গৌরীদেবীর কাছ থেকে দূরে থাকলেও, দুজনের মধ্যে মনের টান ছিল। যা জোড়া লাগত চিঠিপত্রে। আর সেই চিঠিতেই গৌরীদেবীকে এক ইচ্ছের কথা জানিয়ে ছিলেন উত্তম। যে ইচ্ছেটা পূরণ হয়নি তাঁর।

কলকাতা থেকে গৌরীদেবীকে মুম্বইতে (তখন বম্বে) নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন উত্তম। বলা ভাল, গৌরীদেবীই নাছোড়বান্দা ছিলেন। তাই যখনই উত্তমের সঙ্গে তাঁর কথা হত, গৌরীদেবী বার বার বায়না করতেন মুম্বইয়ে যাওয়ার। কলকাতা ও মুম্বইয়ের জীবনযাপন বরাবরই ভীষণ আলাদা। লিভিং কস্টও কলকাতা থেকে মায়ানগরীর অনেক বেশি। উত্তম মুম্বইয়ে পা দিয়েই সেটা বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু স্ত্রীয়ের মন, স্বামীর সঙ্গে থাকার ক্ষেত্রে কোনও লজিকই মানতে নারাজ। আর উত্তমও, গৌরীদেবীকে নানা ভাবেও বোঝাতে পারছিলেন না। অগত্যা, মুম্বইয়ে বসেই গৌরীদেবীকে লিখলেন লম্বা একটা চিঠি। যেখানে জানালেন, কোন কারণে স্ত্রী গৌরীদেবীকে নিয়ে মুম্বইয়ে নতুন সংসার বাঁধতে গিয়ে বাধা পাচ্ছেন মহানায়ক।

সেই চিঠিতে কী লিখেছিলেন উত্তম?

স্ত্রী গৌরীদেবীকে ভালবেসে গজু বলে ডাকতেন উত্তম। চিঠির শুরুও করলেন গজু সম্বোধন করে। মহানায়ক প্রথমেই লিখলেন, মানুষ ভাবে এক, আর হয় এক। উত্তম ভেবেছিলেন, কলকাতায় যে সব ছবির কাজ অর্ধেক হয়েছিল, তা মুম্বই বা মাদ্রাজে গিয়ে শেষ করবেন। কিন্তু মুম্বই গিয়ে বুঝতে পারলেন, এ কাজ এত সহজ নয়। কলকাতা থেকে আসতে নারাজ শিল্পীরা। তার উপর প্রযোজকরাও ধীরে ধীরে হাত গুটিয়ে নিচ্ছে। এই অবস্থায় একা লড়াই করাটা উত্তমের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল। চিঠিতে উত্তম, গৌরীদেবী লিখলেন, দুটো রুমের একটা ফ্ল্যাট দেখেছিলাম। ভেবেছিলাম তোমাকে এনে রাখব। কিন্তু টাকাই যদি না আসে কার ভরসায় আমি ফ্ল্যাট নেব? আর আমিই বা না খেয়ে কতদিন এখানে পড়ে থাকব? কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।

এই চিঠিতে উত্তম আরও লিখেছিলেন, তখন মুম্বইয়ে ফ্ল্যাটের ভাড়া ছিল ৬০০ টাকা থেকে ৭০০টাকা মতো। আসবাবপত্রের জন্য আরও ৩০০ টাকা। ছবি বানানোর জন্য মার্কেটে এতটাই ধারবাকি ছিল উত্তমের যে, রোজকার খরচ চালানো দুর্বিসহ উঠেছিল। গৌরীদেবীকে উত্তম লিখেও ছিলেন, শীঘ্রই আশার আলো না দেখলে, কলকাতায় ফিরে যাব। চিঠির শেষে গৌরীদেবীকে উত্তম লিখলেন, তুমি একেবারে মন খারাপ করো না! আমাকে নিয়ে কোনও গুঞ্জন তৈরি হলে, কান দিও না। দুএকটা বাংলা ছবি এখান থেকে তৈরি হওয়ার কথা চলছে। তবে সইসাবুদ যতক্ষণ না হচ্ছে, এদের বিশ্বাস নেই। তুমি মন খারাপ করলে, তোমার শরীর খারাপ হবে। আমার জন্য তো অনেক কষ্টই সহ্য করেছ। আর কটা দিন একটু সহ্য কর…ভাল থেকো, ভালবাসা নিও।

তথ্যসূত্র-  উত্তম একশো, কৃত্তিবাস