Cancer Treatment: সবার শরীরে ‘ঘুমিয়ে থাকে’ ক্যানসারের কোষ! কখন জাগে জানেন? কী কী ওষুধ রয়েছে?

Cancer Treatment: দিন দিন ক্যানসারের প্রকোপ কিছু ক্ষেত্রে বাড়লেও তারই সঙ্গে পাল্লা দিয়েই বাড়ছে এই রোগকে জয় করে জীবনযুদ্ধে ফিরে আসার সংখ্যাটাও। এমনকি উন্নতমানের চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রেও ঘুচে যাচ্ছে দেশ, কাল, সীমানার গণ্ডি।

Cancer Treatment: সবার শরীরে 'ঘুমিয়ে থাকে' ক্যানসারের কোষ! কখন জাগে জানেন? কী কী ওষুধ রয়েছে?
Image Credit source: Grace Cary/Moment/Getty Images Rosa María Fernández Rz/Moment/Getty Images
Follow Us:
| Updated on: Sep 23, 2024 | 8:10 PM

বছর ৩২-এর ছেলে রাতুল মুখোপাধ্যায়। বছরখানেক হল বিয়ে করেছিল। দু’দিন হঠাৎ মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা। সেই যন্ত্রণা এতই মারাত্মক যে খাওয়া-দাওয়া ঘুমনো দুষ্কর হয়ে উঠল। পেন কিলার খেয়ে, ওষুধ খেয়েও কাজ হয়নি। শেষে এমআরআই করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। ধরা পড়ে মাথায় টিউমার রয়েছে। অস্ত্রোপচার করে জানা গেল টিউমারটি ম্যালিগনেন্ট। অর্থাৎ ক্যানসার প্রবণ। সেই থেকেই ব্রেন ক্যানসার। মাথা যন্ত্রণা শুরু হওয়ার মাত্র আড়াই মাসের মধ্যেই মৃত্যু হয় রাতুলের।

আবার চল্লিশ বছরের মহিলা রুমেলা হাজরা। ক্লাস এইটে পড়া একটি মেয়ে রয়েছে। স্বামী-সন্তানকে নিয়ে সুখের সংসার। কিন্তু ক্যানসারের প্রকোপ হঠাৎ একদিন নেমে এল হাজরা পরিবারে। ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত রুমেলা। বছর খানেকের লড়াই। শেষে হার মানতে হল রুমেলাকে। একরত্তি মেয়েকে রেখেই চলে যেত হয় তাঁকে।

চিকিৎসা শাস্ত্র যতই উন্নত হোক না কেন, এই মারণরোগের কাছে এখনও অসহায় মনুষ্যজাতি। ক্যানসার, এই শব্দটি শুনলেই মনের মধ্যে যেন ভিড় করে আসে আতঙ্ক এবং দুশ্চিন্তা। পরিচিত কারও এই রোগ হলেই মনখারাপ হয়ে যায় আর পরিবারের কারও হলে যেন বজ্রপাত হয় মাথার উপরে। এই মারণরোগের হাত থেকে নিষ্কৃতি মিলবে তো। কিন্তু ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে আগে বুঝতে হবে ক্যানসার কী?

এই খবরটিও পড়ুন

ক্যানসার কী? ক্যানসার এই শব্দটির সঙ্গে পরিচিতি রয়েছে ছোট থেকে বড় প্রায় সবারই। ক্যানসার বাস্তবে আমাদের শরীরে উপস্থিত এক ধরনের কোষ বিশেষ। নানা কারণে যার খামখেয়ালি বংশ বৃদ্ধি আমাদের শরীরে খারাপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। যা যদি সঠিক সময় চিকিৎসা করা না যায় তাহলে শেষ পরিণতি হয়ে দাঁড়ায় মৃত্যু।

মানবদেহের যে কোনও অঙ্গেই এই ক্যানসার কোষের বিস্তার ঘটতে পারে। আসলে মানবদেহের সাধারণত একটি নিয়মে কোষের বিস্তার ঘটে। এবং নতুন কোষের জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরনো কোষের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু ক্যানসার রোগের ক্ষেত্রে তা হয় না। এক্ষেত্রে, এই বিশেষ ধরনের কোষগুলি কোনও নিয়ম না মেনেই খুব দ্রুত শরীরের মধ্যে বিস্তার ঘটাতে থাকে। সঙ্গে পুরনো কোষগুলির ধ্বংস হয় না বললেই চলে।

ক্যানসার বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম চিন্তার কারণ। চিকিৎসা শাস্ত্র যতই উন্নত হোক না কেন, এখনও বিশ্বে যেসব রোগে মানুষের সর্বাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তার মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ক্যানসার রোগ। ক্যানসারের অনেক ধরন। সারা বিশ্বে প্রায় ২০০ বেশি ধরনের ক্যানসারের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে তার মধ্যে সব রোগের প্রকোপ সমান নয়।

ভারতে ক্যানসারের হার –

ভারতে যে সব ক্যানসারে মানুষ সব থেকে বেশি আক্রান্ত হয় সেগুলি হল স্তন ক্যানসার, জরায়ু মুখের ক্যানসার, মুখগহ্বরের ক্যানসার, যকৃতের ক্যানসার এবং ফুসফুসের ক্যানসার। এছাড়াও প্রস্টেট ক্যানসার, ব্লাড ক্যানসার, ম্যালিগনেন্ট ক্যানসার সহ আরও নানা ধরনের ক্যানসার।

পরিসংখ্যান বলছে এই সবের মধ্যেও আবার মহিলাদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যানসার বা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা আরও বেশি। মহিলারা ৪০ পেরোলেই বাড়তে থাকে এই ক্যানসারের ঝুঁকি। ভারতে মোট যত সংখ্যক মহিলা ক্যানসারের রোগী রয়েছেন তাঁর মধ্যে প্রায় ২৮ শতাংশই স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। ভারতে এই ক্যানসারে আক্রান্ত হলেও তাকে জয় করে ফিরে আসার হার প্রায় ৬৬ শতাংশ। এই বিষয়ে ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা হয় এবং যে চিকিৎসা করেছেন তিনি আধুনিক চিকিৎসা সম্পর্কে অবগত থাকেন, তাহলে ব্রেস্ট ক্যানসারের থার্ড স্টেজেও মানুষকে বাঁচানো সম্ভব।”

ব্রেস্ট ক্যানসারের পরেই সব থেকে বেশি মহিলারা যে ক্যানসারে আক্রান্ত তা হল জরায়ুর মুখের ক্যানসার বা সারভিক্যাল ক্যানসার। পরিসংখ্যান বলছে প্রায় ১০ শতাংশ ক্যানসার আক্রান্ত মহিলাই এই রোগের রোগী।

ওরাল ক্যানসার বা মুখগহ্বরের ক্যানসার গোটা বিশ্ব তথা ভারতের অন্যতম জ্বলন্ত সমস্যা। সাধারণত ৪০ থেকে ৬৯ বছর বয়সীদের মধ্যেই এই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। তামাক, অ্যালকোহল বা পান জাতীয় নেশাদ্রব্য বেশি গ্রহণ করার ফলে মোট আক্রান্তদের মধ্যেও প্রায় ৭৫ শতাংশই পুরুষ। পরিসংখ্যান বলছে ক্যানসারে আক্রান্তদের মধ্যে ৩০ শতাংশই এই ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত।

এছাড়াও লাং ক্যানসার বা ফুসফুসের ক্যানসার এবং লিভার ক্যানসার বা যকৃতের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। প্রতি এক লক্ষ মানুষের মধ্যে প্রায় ৬.৯ শতাংশই লাং ক্যানসারে আক্রান্ত। আবার লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা পুরুষদের মধ্যে প্রতি এক লক্ষ মানুষের মধ্যে ৪ থেকে ৭.৫ শতাংশ এবং মহিলাদের মধ্যে ১.২ থেকে ২.২ শতাংশ।

কেন দিনে দিনে বাড়ছে ক্যানসারের প্রকোপ?

যত দিন যাচ্ছে ততই বেড়ে চলেছে এই মারণরোগের প্রকোপ। কিন্তু কেন এই প্রশ্ন ওঠে বারবার। ক্যানসারের প্রকোপ বাড়ার পিছনে মূল কারণ হল দিনের পর দিন বদলে যাওয়া জীবনযাত্রার মান।

নব প্রজন্মের মধ্যে তামাক এবং অ্যালকোহল বা মদ্যপানের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া যেকোনও ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার বড় কারণ। সঙ্গে রয়েছে শরীরচর্চার অভাব। সারাদিন একভাবে বসে কম্পিউটারের সামনে কাজ করার ফলে শারীরিক ক্রিয়াকলাপ কম হয়। ফলে ইমিউন সিস্টেম উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা কমে। তার প্রভাবেই ক্যানসার জাতীয় কোষের বৃদ্ধি রোধ করার স্বাভাবিক প্রবণতাও কম আসে।

ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হল, উচ্চ ফ্যাট সম্পন্ন খাবারদাবার রোজ গ্রহণ করা। বদলে যাওয়া খাদ্যাভ্যাস কিন্তু ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হওয়ার একটি কারণ। এই বিষয়ে বিশিষ্ট ক্যানসার চিকিৎসক বিষাণ বসু বলেন, “ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলার একটি কারণ হল ডায়াগোনোসিস বেশি করে হওয়া। ফলে বেশি করে রোগ ধরা পড়ে। আবার চারপাশের পরিবেশের দূষণ, সর্ব ক্ষেত্রে ঢালাও রাসায়নিকের ব্যবহার ক্যানসারের কারণ। পশ্চিমী দেশের খাদ্যাভ্যাস এই দেশেও চলে আসাও কিন্তু কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ।”

উচ্চ ‘রেডিয়েশনের’-এর সংস্পর্শে এলেও ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। আয়োনাইজেশন রেডিয়েশনের সংস্পর্শে এলেও কিন্তু ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।

এই সবের সঙ্গেই জীনগত কারণেও যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে ক্যানসার রোগে। তবে এই বিষয়ে ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিষাণ বসু দুজনেই জানান মানবদেহে ক্যানসারের কোষ থাকেই। তবে বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ নানা কারণে সেই কোষগুলি ক্রিয়াকলাপ বেড়ে গিয়ে তা বাড়তে শুরু করলেই ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নতি হয়েছে চিকিৎসা শাস্ত্রেরও। বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে আগে যে রোগ হলেই মৃত্যু ছিল অবশ্যম্ভাবি তাই এখন প্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। ক্যানসারের ক্ষেত্রেও তাই। সম্পূর্ণ প্রতিরোধ্য না হলেও সময় মতো চিকিৎসা করা গেলে ক্যানসারের তৃতীয় স্তরে থেকেও রোগীকে ক্যানসার মুক্ত করা সম্ভব।

কী ভাবে করা হয় ক্যানসারের চিকিৎসা?

ক্যানসারের চিকিৎসার মূলত তিনটিই পথ। এক রেডিওথেরাপি, দুই কেমোথেরাপি এবং তিন সার্জারি বা শল্য চিকিৎসা। কোনও ব্যাক্তির ক্যানসার ধরা পড়লে সেই ক্যানসার কোষগুলিকে নষ্ট করে দিতে এক ধরনের বিশেষ ‘রে’ অর্থাৎ রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিকে রেডিওথেরাপি বলে।

ক্যানসারের ক্ষেত্রে সার্জারি হল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি। আসলে সার্জারির মাধ্যমে ঠিক আমাদের শরীরের যে স্থানে ক্যানসার কোষগুলি বংশবৃদ্ধি করেছে বা যেখানে ক্যানসার হয়েছে সেই জায়গা বাদ দেওয়া হয়।

আর কেমোথেরাপি হল ক্যানসার চিকিৎসার আরেকটি বিশেষ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ওষুধের মাধ্যমে ক্যানসার রোগের চিকিৎসা চিকিৎসা করেন। তবে এই বিষয়ে চিকিৎসক বিষাণ বাবু বলেন, “কেবল কেমোথেরাপি দিয়ে ক্যানসারের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়। তার জন্য রেডিওথেরাপি এবং সার্জারি করতেই হবে। কেমোথেরাপির মাধ্যমে ম্যালিগনেন্ট টিউমারের আকার ছোট করা যায়, বা রেডিওথেরাপি এবং সার্জারির প্রভাব যাতে আরও ভালভাবে হয় তাতে সাহায্য করে। কিন্তু সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়।”

রেডিওথেরাপি এবং সার্জারির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে অর্থাৎ ঠিক যে জায়গায় ক্যানসার হয়েছে সেই জায়গায় চিকিৎসা করা হয়। আর কেমোথেরাপির প্রভাব কেবল সেই জায়গা ছাড়াও শরীরের আরও নানা অংশে বা আশেপাশেও পড়ে।

ক্যানসারের জন্য আরেকটি চিকিৎসা পদ্ধতি হল বায়োলজিক্যাল থেরাপি। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে বিশেষ ওষুধ দিয়ে এই রোগের বিরুদ্ধে চিকিৎসা করা হয়। এমনকি ওষুধের মাধ্যমে শরীরের ইমিউন সিস্টেম অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ করার যে ধরন তাও পরিবর্তন করা হয় অনেক সময়। তবে চিকিৎসক বিষাণবাবু বলেন, “এই পদ্ধতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্যানসারের চতুর্থ পর্যায়ের রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। যখন অনান্য পদ্ধতি ব্যবহার করে আর কোনও লাভ হয় না তখন এই বায়োলজিক্যাল চিকিৎসাকে বেছে নেওয়া হয়। এই পদ্ধতির কার্যকারিতাও কম।”

ক্যানসার গবেষণায় নতুন তথ্য – তবু এখনও ক্যানসারকে সম্পূর্ণ বাগে আনতে পারেনি মানব সমাজ। তাই এই মারণরোগের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রয়েছে প্রতিনিয়ত।

ক্যানসারের টিকা – 

প্রতিদিন বিজ্ঞানীরা নতুন গবেষণার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধের স্থায়ী সমাধানের সন্ধান করে চলেছেন। যদিও এই রোগের এখনও অবধি কোনও নির্দিষ্ট প্রতিষেধক বা ওষুধ বের করা সম্ভব হয়নি। তবে সারভিক্যাল ক্যানসারের জন্য এক বিশেষ প্রতিষেধক টিকা কিন্তু রয়েছে। যা সমন্ধে অনেকেই হয়তো অবগত নয়। বিশেষ এই প্রতিষেধক মহিলাদের সারভিক্যাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা কমায়। চিকিৎসক বিষাণ বসু বলেন, “সারভিক্যাল ক্যানসারের রোগীদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ে এক বিশেষ ধরনের ভাইরাল ইনফেকশনের যোগ থাকে। যে ভাইরাসটি সাধারণত যৌন মিলনের সময় পুরুষদেহ থেকে মহিলাদেহে সংক্রমিত হয়। কিন্তু বিশেষ প্রতিষেধকটি সেই কাজে বাধা দেয়। ফলে সারভাইক্যাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। তাই মহিলাদের বয়ঃসন্ধিকালের আগেই এই প্রতিষেধক তাঁদের দিয়ে দেওয়া জরুরি।”

প্রোটিন দিয়ে ক্যানসার চিকিৎসা –

আবার চিন এবং আমেরিকার যৌথ উদ্যোগে নির্মিত একঝাঁক ক্যানসার গবেষণাকারীর একটি দল আরেক নতুন দিগন্তের সন্ধান পেয়েছে। তাঁরা ১০ ধরনের ক্যানসার রোগীদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করে একটি গবেষণা করে। যেখানে প্রায় ২৮০০ ধরনের প্রোটিনের সন্ধান মেলে যা দিয়ে এই মারণ রোগের ওষুধ বানানো সম্ভব হয়ে ওঠে। সেই প্রোটিনগুলিকে মোট ৫টি ভাগে ভাগ করে এই গবেষণা করা হয়। এই সব প্রোটিন ব্যবহার করে ক্যানসারের বিরুদ্ধে শরীরে বিশেষ ইমিউন সিস্টেম গড়ে তোলা সম্ভব বলেও দাবি গবেষকদের।

ক্যানসার সারাতে সেলুলার থেরাপি – 

আবার ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে আরেক নতুন পথ দেখিয়েছে এফডিএ। ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে সেলুলার থেরাপি নতুন রাস্তা দেখাচ্ছে। অ্যাফেমি সেল রোগীর শরীর থেকে টি সেল যা একধরনের ইমিউন কোষ ব্যবহার করে শরীরে ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। এই পদ্ধতিকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং সেল থেরাপিও বলে।

ক্যানসার কোষ দিয়েই ক্যানসার চিকিৎসা – 

এ যেন কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা। পেন স্টেক হাক ইউনিভার্সিটির গবেষক জাস্টিন প্রিটার্ক আরেক নতুন দিগন্তের হদিস দিয়েছেন। টিউমার কোষগুলির দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতাকে কাজে লাগিয়েই ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন পথ দেখিয়েছেন তিনি। এই গবেষণার দাবি ইঞ্জিনিয়ারড ক্যানসার কোষগুলি দ্রুত টিউমার থেকে ক্যানসারে পরিণত হয়। একইভাবে এই ক্যানসার কোষগুলিকে ব্যবহার করে ক্যানসারের ওষুধ তৈরি করা যাবে বলেই দাবি গবেষকদের।

তবে এখানে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ক্যানসার চিকিৎসায় সাফল্যের অনেকটা নির্ভর করে কখন চিকিৎসা শুরু হচ্ছে তার উপরে। এই বিষয়ে চিকিৎসক বিষাণবাবু বলেন, “অনেকেই সেরা জায়গায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে দিল্লি, মুম্বই যেতে গিয়ে চিকিৎসা শুরু করতেই অনেকটা দেরী করে ফেলেন। এতে কিন্তু মুশকিল। তাতে হয়তো দেখা যায় ক্যানসার দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। তার চেয়ে ছোট জায়গায় হলেও চিকিৎসা শুরু করাটা গুরুত্বপূর্ণ।”

ক্যানসারের ‘ঘর ওয়াপসি’ – 

আরেকটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। ক্যানসার একবার হলেই যে আর কোনও দিন হবে না এমন কোনও কথা নেই। এক্ষেত্রে দুটি ঘটনা ঘটতে পারে। প্রথম একবার ক্যানসার হওয়ার পরে চিকিৎসায় তা সেরে গেলেও আবার পুনরায় নতুন করে ক্যানসার হতে পারে। দ্বিতীয়ত, হয়তো ক্যানসার চিকিৎসা করার সময় বা রেডিয়েশনথেরাপি করার সময় কিছু কোষ জীবিত রয়ে গেল। সেক্ষেত্রে সেই থেকেই আবার ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি হতে পারে। এই বিষয়ে ক্যানসার চিকিৎসক বিষাণ বসু বলেন, “প্রায় কয়েক লক্ষ ক্যানসার কোষ একত্রিত হলে তবেই তা দৃষ্টিগোচর হয়। তবে রেডিয়োথেরাপি বা সার্জারি করার সময় কয়েকটি বা কয়েক শো কোষ থেকে গেলেও তা চোখে ধরা পড়েনা। তাই সেই থেকে যাওয়া কোষ থেকে পুনরায় ক্যানসার হতেই পারে।”

ক্যানসার চিকিৎসার প্রতিবন্ধকতা – 

তবে দিন দিন ক্যানসারের প্রকোপ কিছু ক্ষেত্রে বাড়লেও তারই সঙ্গে পাল্লা দিয়েই বাড়ছে এই রোগকে জয় করে জীবনযুদ্ধে ফিরে আসার সংখ্যাটাও। এমনকি উন্নতমানের চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রেও ঘুচে যাচ্ছে দেশ, কাল, সীমানার গণ্ডি। চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন। “এখন যদি আমেরিকাতে কোনও নতুন উন্নতমানের চিকিৎসা পদ্ধতিতে ক্যানসারের চিকিৎসা করা শুরু হয়, তাহলে তা ভারতে আসতেও বেশিদিন সময় আসে না। বরং ১ সপ্তাহের মধ্যেই সেই পদ্ধতিতে ভারতেও চিকিৎসা করা সম্ভব। তবে এখানে যে বিষয়টি অন্তরায় দাঁড়ায় তা হল অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর অর্থনৈতিক অবস্থা।”

আবার চিকিৎসক বিষাণ বসু বলেন, “যদি আজ ক্যানসারের কোনও ওষুধ বাজারে আসে তাহলে প্রথমে পেটেন্টের কারণে তার দাম বেশি থাকলেও, পরে কিন্তু সেই দামও কমে যায়। তবে কলকাতার সরকারি হাসপাতালে ক্যানসার চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা থাকলেও কলকাতার বাইরে হাতে কয়েকটি হাসপাতালেই সেই ব্যবস্থা আছে। আবার বেসরকারি কর্পোরেট হাসপাতালগুলি সব কলকাতা নির্ভর। সেখানে খরচ বেশি। তাই ভারতে ক্যানসার প্রতিরোধে একটি বড় অন্তরায় হল স্বাস্থ্য পরিকাঠামো।”

ক্যানসার চিকিৎসা যেমন দীর্ঘ তেমন জটিল আবার শারীরিক এবং মানসিক ভাবেও যথেষ্ট কষ্টকর। তাই এই রোগের প্রতিরোধ করতে যেমন বিজ্ঞানীরা, গবেষকরা, স্বাস্থ্য কর্মীরা, চিকিৎসকরা প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ করে চলেছেন তেমনই মানুষকেও সচেতন হতে হবে। ক্যানসারের উপসর্গগুলি সম্পর্ক জানতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। রোগী, স্বাস্থ্য কর্মী, বিজ্ঞান এই সবের যৌথ প্রয়াস কিন্তু পারে একদিন এই মারণরোগকে জয় করতে।

Pujarini Ghosh: হাসপাতালে অভিনেত্রী পূজারিণী ঘোষ, কী হয়েছে তাঁর?
Pujarini Ghosh: হাসপাতালে অভিনেত্রী পূজারিণী ঘোষ, কী হয়েছে তাঁর?
সন্দেশখালি থেকে বগটুই, প্রশাসন ব্যর্থ, আদালতের প্রায়শ্চিত্ত!
সন্দেশখালি থেকে বগটুই, প্রশাসন ব্যর্থ, আদালতের প্রায়শ্চিত্ত!
মিমির সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতে চান? মানতে হবে দুই শর্ত
মিমির সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতে চান? মানতে হবে দুই শর্ত
মরা মানুষের দাম চমকে দেবে আপনাকে! রয়েছে পিক সিজন-অফ সিজনও...
মরা মানুষের দাম চমকে দেবে আপনাকে! রয়েছে পিক সিজন-অফ সিজনও...
অ্যান্টিবায়োটিক বেলাইন, প্রেসক্রিপশনে গাইডলাইন
অ্যান্টিবায়োটিক বেলাইন, প্রেসক্রিপশনে গাইডলাইন
এখনও হয়নি আইনি বিচ্ছেদ, এরই মধ্যে প্রেমে শ্রাবন্তীর প্রাক্তন স্বামী?
এখনও হয়নি আইনি বিচ্ছেদ, এরই মধ্যে প্রেমে শ্রাবন্তীর প্রাক্তন স্বামী?
সন্তানের জন্মের কয়েক দিনের মাথাতেই নতুন সম্পত্তি, সুখবর দীপিকা-রণবীরের
সন্তানের জন্মের কয়েক দিনের মাথাতেই নতুন সম্পত্তি, সুখবর দীপিকা-রণবীরের
মেয়ের মৃত্যুতে চিঠি দিলেন মা, 'কর্পোরেট চাপ'-এর এই নমুনায় চমকে যাবেন
মেয়ের মৃত্যুতে চিঠি দিলেন মা, 'কর্পোরেট চাপ'-এর এই নমুনায় চমকে যাবেন
বাংলাদেশের সেনাকে পুলিশের ক্ষমতা দিল বর্তমান সরকার!
বাংলাদেশের সেনাকে পুলিশের ক্ষমতা দিল বর্তমান সরকার!
'মানুষকে টেকেন ফর গ্রান্টেড করে নেবেন না', কড়া বার্তা পরমের
'মানুষকে টেকেন ফর গ্রান্টেড করে নেবেন না', কড়া বার্তা পরমের