COVID-19 XE Variant: চোখ রাঙাচ্ছে করোনার নয়া ভ্যারিয়েন্ট, ভারতে ‘XE’ এলে কতটা ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে?

COVID-19 XE Variant: বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এক্সই ভ্যারিয়েন্ট, ওমিক্রনের বিএ.১ ও বিএ.২ স্ট্রেনের সংমিশ্রণে তৈরি "রিকম্বিন্যান্ট" মিউটেন্ট। উল্লেখ্য, রিকম্বিন্যান্ট মিউটেশন তখনই হয়, যখন একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি একাধিক ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হন।

COVID-19 XE Variant: চোখ রাঙাচ্ছে করোনার নয়া ভ্যারিয়েন্ট, ভারতে 'XE' এলে কতটা ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে?
প্রতীকী চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 07, 2022 | 6:43 PM

কলকাতা: দেশে নিম্নমুখী করোনার (COVID-19) গ্রাফ। মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ববিধি ছাড়া বাকি সমস্ত করোনাবিধিই প্রত্যাহার করে নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তবে এরইমাঝে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট। এক্সই (XE Variant) নামক ওই ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মিলেছে ব্রিটেন, থাইল্যান্ড ও নিউজ়িল্যান্ডে। বুধবার মুম্বইয়েও ছড়িয়ে পড়ে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আতঙ্ক। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের (Union Health Ministry) তরফে সাফ জানানো হয়েছে, ভারতে এখনও করোনার এক্সই ভ্যারিয়েন্ট প্রবেশ করেনি। তবে আগামিদিনে যদি ভারতে ঢুকে পড়ে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট, তাহলে কী হবে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organization) তরফে জানানো হয়েছে, এই ভ্যারিয়েন্টই হয়তো করোনার সবথেকে সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট হতে পারে। প্রাথমিক যে তদন্ত পাওয়া গিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে এক্সই ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সাব ভ্যারিয়েন্ট বিএ.২-র তুলনায় ১০ গুণ বেশি সংক্রামক হতে পারে। আপাতত ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের অংশ হিসাবেই এক্সই ভ্যারিয়েন্টকে গণ্য করা হচ্ছে। এই মিউটেশন সম্পর্কে জানার জন্য ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে অতিরিক্ত তথ্য জানা প্রয়োজন।

কী কী উপসর্গ দেখা গিয়েছে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, এক্সই ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গ অনেকটা ওমিক্রনের মতোই। এর প্রধান উপসর্গগুলি হল জ্বর, গলা ব্যাথা, গলা চুলকানো, সর্দি-কাশি, ত্বকে চুলকানি বা রঙ বদলে যাওয়া এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনালের সমস্যা। এক বা একাধিক এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এখনও অবধি কতজন আক্রান্ত হয়েছেন?

চলতি বছরের গত ১৯ জানুয়ারি ব্রিটেনে প্রথম এক্সই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের খোঁজ মেলে। এখনও অবধি ৬৩৭ জন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, এক্সডি, এক্সই ও এক্সএফ- এই তিনটি ভ্য়ারিয়েন্টের উপরে নজর রাখা হচ্ছে। এরমধ্যে এক্সডি ভ্যারিয়েন্টটি ওমিক্রনের বিএ.১ ভ্যারিয়েন্টের হাইব্রিড ধরণ। এক্সএফ ভার্শন ডেল্টা ও বিএ.১-র মিশ্রণ।

কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে এক্সই ভ্যারিয়েন্ট?

তুলনামূলকভাবে এই ভ্যারিয়েন্টটি নতুন হওয়ায়, এক্সই ভ্যারিয়েন্ট যে গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে, তার স্বপক্ষে এখনও কোনও তথ্য জানা যায়নি। তবে ওমিক্রনের আগের ভ্যারিয়েন্টগুলি গুরুতর আকার ধারণ না করায়, এই ভ্যারিয়েন্টটিও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করবে না বলেই মনে করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এক্সই ভ্যারিয়েন্ট, ওমিক্রনের বিএ.১ ও বিএ.২ স্ট্রেনের সংমিশ্রণে তৈরি “রিকম্বিন্যান্ট” মিউটেন্ট। উল্লেখ্য, রিকম্বিন্যান্ট মিউটেশন তখনই হয়, যখন একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি একাধিক ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হন। দুই বা ততোধিক ভ্যারিয়েন্টের জেনেটিক পদার্থ মিশ্রিত হয়েই নতুন মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হয়।

ভারতে যদি এই ভ্যারিয়েন্ট প্রবেশ করে, তবে কী হতে পারে?

এই প্রসঙ্গে পিয়ারলেস হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল প্রধান ডঃ শুভ্রোজ্যোতি ভৌমিক বলেন, “প্রাথমিক যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে মনে করা হচ্ছে এই ভ্যারিয়েন্ট ভয়ঙ্কর হবে না। মুম্বইয়ে যে মহিলার এক্সই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল, তিনি সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত। এক্ষেত্রে বলাই যায়, সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণ গুরুতর আকার ধারণ করবে না।”

এক্সই ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গ নিয়ে তিনি বলেন, “ওমিক্রনের মতোই এক্সই ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গ, অর্থাৎ জ্বর, গা-হাত পা ব্যাথা। এই ভ্যারিয়েন্টকে ১০ গুণ বেশি সংক্রামক বলা হলেও, ওমিক্রনেরই অংশ হওয়ায়, রোগ গুরুতর আকার ধারণ করবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।”

একইভাবে ডব্লুএফপিএইচএ-র কাউন্টি রিপ্রেজেন্টেটিভ ডঃ অনির্বাণ দলুই বলেন, “এক্সই ভ্যারিয়েন্টকে ওমিক্রনের রিকম্বিন্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট হিসাবেই বলা হচ্ছে। আদতে এই ধরনের ভ্যারিয়েন্টের বারবার মিউটেশন বা অভিযোজন হয়। এটাও ওমিক্রনের একটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট। ভারতে যদি এই ভ্যারিয়েন্ট আসে, তবে তা খুব একটা ভয়ানক আকার ধারণ করবে বলে মনে হচ্ছে না, কারণ কয়েক মাস আগেই দেশে ওমিক্রনের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল। সেই সময় বহু মানুষ ওমিক্রনে আক্রান্ত হলেও, সংক্রমণ গুরুতর আকার ধারণ করেনি।”

করোনার নতুন ঢেউ আনবে এক্সই ভ্যারিয়েন্ট?

এই বিষয়ে ডঃ অনির্বাণ দলুই বলেন, “ভারতে কবে করোনার পরবর্তী ঢেউ আসবে, তা বলা সম্ভব নয়। তবে সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সতর্কতা অবলম্বন করতেই হবে। মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ববিধির মতো নিয়ম অনুসরণ করে চলতে হবে। কোথাও যদি সংক্রমণ বৃদ্ধি পায় অথবা ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্নের খোঁজ মেলে, তবে নতুন করে কন্টেনমেন্ট জ়োন থেকে শুরু করে যাবতীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”

ভারতীয়দের মধ্যে কী হার্ড ইম্যুনিটি তৈরি হয়েছে?

এই প্রসঙ্গে ডঃ শুভ্রোজ্যোতি ভৌমিক বলেন, “ভারতীয়দের মধ্যে হার্ড ইম্যুনিটি তৈরি হয়ে গিয়েছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে আমাদের দেশে দ্রুতগতিতে টিকাকরণ চলছে। ২০০ কোটি ভারতীয়দের টিকাকরণের যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল কেন্দ্রের তরফে, তারমধ্যে ১৮৫ কোটির টিকাকরণ ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। দ্রুতই এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।”

সাধারণ মানুষের কাছে আর্জি জানিয়ে তিনি বলেন, “যারা এখনও করোনা টিকার তৃতীয় ডোজ় বা প্রিকশন ডোজ় নেননি, তারা দ্রুত টিকা নিন। কেন্দ্রের কাছেও আর্জি জানাচ্ছি যে দ্রুত যেন ১৮ উর্ধ্ব সকলকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।”

আরও পড়ুন: COVID-19 XE Variant: ভারতে এখনও প্রবেশ করেনি XE ভ্যারিয়েন্ট, যাবতীয় জল্পনা ওড়াল স্বাস্থ্যমন্ত্রক