পরীক্ষায় না বসেই বছরের পর বছর পাশ পড়ুয়ারা! ফাঁস মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক দুর্নীতি
রিপোর্টে জানানো হয়েছে, পরীক্ষার নম্বর সহ একাধিক তথ্য গোপন রাখার নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছে। তদন্তকারী দলের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কন্ট্রোলার, একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ও এক চুক্তিভিত্তিক কর্মী ফল প্রকাশের আগেই পড়ুয়াদের রেজাল্ট বদলে দিত।
ভোপাল: শিক্ষা ব্যবস্থায় ফের দুর্নীতি। প্রায় ৩০০টি মেডিক্যাল কলেজ নিয়ন্ত্রক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা ও ফলাফল নিয়ে ব্যপক দুর্নীতি সামনে এল। রাজ্য সরকারের নির্দেশেই গঠিত কমিশনের রিপোর্টে এই দুর্নীতির খোঁজ মিলেছে। ২০১৯ সালে ব্যাপম দুর্নীতির পর এটিই সবথেকে বড় দুর্নীতির ঘটনা।
মধ্য প্রদেশের আয়ুর্বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় (Ayurvigyan Vishwavidyalaya), যা মেডিক্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় নামেও পরিচিত, তা মধ্য প্রদেশের সমস্ত মেডিসিন, দাতব্য, নার্সিং, প্যারামেডিসিন, হোমিওপ্যাথিক, উনানি ও যোগাসন কলেজের নিয়ন্ত্রক বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে কাজ করে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেইল দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
প্রতি বছরই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রায় ৮০ হাজার পড়ুয়া পরীক্ষা দেয়। তবে চলতি বছরেই সমাজকর্মী অখিলেশ ত্রিপাঠী আরটিআই দায়ের করে অভিযোগ করেন যে বিগত কয়েক বছরস ধরে যারা পরীক্ষায় বসছেন না, তাদেরও পাশ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপরই মেডিক্যাল শিক্ষামন্ত্রী বিশ্বাস সারাং গত মে মাসে তদন্তের নির্দেশ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন আধিকারিক ও তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত কমিটি গোটা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে গত মাসেই রিপোর্ট জমা দেয়।
সম্প্রতি ওই রিপোর্টেরই একটি কপি সামনে আসে, তাতে জানা যায় যে বেসরকারি সংস্থাকে মার্কশিট তৈরির কাজ দেওয়া হয়েছিল, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রাঞ্চে না পাঠিয়ে নিজেদের কাছেই রেখে দেয়। এতেই রেজাল্টে গরমিলের সন্দেহ হয়। সূত্র অনুযায়ী, পরীক্ষার প্রশ্নপ্রত্র তৈরি থেকে শুরু করে উত্তর পত্র যাচাই ও নম্বর দেওয়া ঘিরে ব্যপক দুর্নীতি হয়েছে।
তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্য়ালয়ের কনফিডেনশিয়াল রুমেই ওই সংস্থার সার্ভার বসানো থাকলেও যখন তদন্তকারী দল তার ডেটাবেস দেখতে চান, তা জমা দেওয়া হয়নি। দেখা গিয়েছে, মার্কশিটের যাবতীয় তথ্য কাট পেস্ট করে বসানো হয় পিডিএফ ও এক্সেল শিটে। এরফলে সহজেই নম্বর বদলে নিতে পারে যে কেউ।
রিপোর্টে জানানো হয়েছে, পরীক্ষার নম্বর সহ একাধিক তথ্য গোপন রাখার নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছে। তদন্তকারী দলের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কন্ট্রোলার, একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ও এক চুক্তিভিত্তিক কর্মী ফল প্রকাশের আগেই পড়ুয়াদের রেজাল্ট বদলে দিত।
অভিযোগকারী অখিলেশ ত্রিপাঠী বলেন, “গোটা বিষয়টি সামনে আসার পরও যে সংস্থা ওই রেজাল্ট তৈরি করত, তাদের বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর দায়ের হয়নি। শুধুমাত্র ওই সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে দেওয়া হয়। ওই সংস্থা এখনও অবধি কোনও তথ্য জমা দেয়নি। তারা জানান যে লকডাউনের কারণে ব্যাঙ্গালোরের অফিস বন্ধ, সেই কারণে তথ্য জমা দেওয়া যাচ্ছে না। উল্টে ওই সংস্থা চুক্তি বাতিলের জন্য হাইকোর্টে অভিযোগও জানিয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডঃ প্রভাত বুধাউলিয়া জানান, ওই সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গিয়েছে। আমরা আইনজীবী নিয়োগ করেছি, বাকি সিদ্ধান্ত আদালতই নেবে। অন্যদিকে, মাইন্ডলজিক ইনফ্রাটেক নামক ওই সংস্থাটি তাদের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আরও পড়ুন: লাগাতার ধস নেমেই চলেছে কিন্নরে, থমকে উদ্ধারকার্য, আরও ৪টি দেহ উদ্ধারে মৃতের সংখ্যা পৌঁছল ১৭-এ