Salman Rushdie: নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তিই উধাও, ৩৬ পর ভারতে পাওয়া যাবে রুশদির ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’?
The Satanic Versus: ১৯৮৮ সালে বইটি প্রকাশ হওয়ার পর যা, যা হয়েছে, সেটা নিয়ে দশটা বই লেখা হতে পারে। ভারত সহ দুনিয়ার ৭০টির বেশি দেশে নিষিদ্ধ হয় "দ্য স্যাটেনিক ভার্সেস"। ইসলাম ধর্মের অবমাননার অভিযোগে একের পর এক মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয় রুশদির বিরুদ্ধে।
নয়া দিল্লি: দিল্লি থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে হাইজ্যাক হল একটি বিমান। যাত্রীদের পণবন্দী করে, সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করল হাইজ্যাকাররা। সেই কথাবার্তা চলল মাসের পর মাস। বিমান তখন অজ্ঞাত কোনও জায়গায় দাঁড়িয়ে। আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর বিমানটি ফের আকাশে উড়ল। এবং ইংলিশ চ্যানেলের উপর বিমানটি ধ্বংস করে দিল হাইজ্যাকাররা। দুই কিশোরী বাদে বিমানের সব যাত্রীই মারা গেলেন। ওই দুই কিশোরী বেঁচে গেল বটে, কিন্তু তাঁরা আর বাড়ি ফিরল না। এদের একজন ইশ্বরের দূত হয়ে উঠল, অন্যজন শয়তানের প্রতিমূর্তি। এরা নিয়ম করে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলত। দ্য স্যাটেনিক ভার্সেস উপন্যাসে এই দুই কিশোরীর গল্প শুনিয়েছিলেন সলমন রুশদি।
১৯৮৮ সালে বইটি প্রকাশ হওয়ার পর যা, যা হয়েছে, সেটা নিয়ে দশটা বই লেখা হতে পারে। ভারত সহ দুনিয়ার ৭০টির বেশি দেশে নিষিদ্ধ হয় “দ্য স্যাটেনিক ভার্সেস”। ইসলাম ধর্মের অবমাননার অভিযোগে একের পর এক মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয় রুশদির বিরুদ্ধে। রুশদিকে খুন করলে ৩০ লক্ষ ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেন ইরানের তত্কালীন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা রুহেল্লা খোমেইনি। ১৯৮৮ থেকে ২০২৪ – ৩৬ বছরে বারবার কেন্দ্রের কাছে নিষেধাজ্ঞা তোলার আবেদন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। এনডিএ হোক বা ইউপিএ সরকার – কেউই গা করেনি। আজ এত বছর জানা গেল, স্যাটেনিক ভার্সেসের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির বিজ্ঞপ্তিটাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকী এনিয়ে কেন্দ্রের কাছে কোনও নথিই নেই।
নথি নেই, বিজ্ঞপ্তি হারিয়ে গিয়েছে -অথচ বইয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি। ফলে, আপনি ইচ্ছে থাকলেও বিদেশ থেকে বইটি আনাতে পারবেন না। দেশেও প্রিন্ট করতে পারবেন না। পারবেন না, মানে এতদিন পারতেন না। কিন্তু এখন থেকে আর “দ্য স্যাটেনিক ভার্সেস” আনতে বাধা নেই। “দ্য স্যাটেনিক ভার্সেসে”র উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। কেন এই নিষেধাজ্ঞা তোলার নির্দেশ? ভারতে বইটি নিষিদ্ধ করতে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল, সেটি খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকী ওই বিজ্ঞপ্তির নিরিখে যে মেমো তৈরি হয়েছিল, তারও কোনও অস্তিত্ব নেই। ব্যাপারস্যাপার দেখে বিচারপতি প্রশ্ন করেছিলেন, এমন কোনও নিষেধাজ্ঞা আদৌ ছিল তো?
১৯৮৮ সালে যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তাঁকেও তলব করে আদালত। অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্মী আদালতে বলেন, হ্যাঁ, বিজ্ঞপ্তি ছিল। তবে তাতে কী লেখা ছিল, সেটা তাঁর আর মনে নেই। সব শুনে বিচাপপতিরা জানিয়ে দেন, এরপর আর বিদেশ থেকে স্যাটেনিক ভার্সেস আনিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা থাকতে পারে না। তাই এখন ভারতের যে কোনও নাগরিক চাইলে রুশদির লেখা বহু বিতর্কিত বইটি আনিয়ে পড়তেই পারেন। তবে ভারতে বইটি ছাপানো যাবে কি না, তা নিয়ে নির্দিষ্ট করে কোনও নির্দেশ দেয়নি হাইকোর্ট।
স্যাটেনিক ভার্সেসের ঘটনা নতুন নয়। ধরে আনতে বললে বেঁধে আনার ব্যাপারটা আমাদের দেশে প্রথম থেকেই আছে। জরুরি অবস্থায় প্রশাসনের নির্দেশ ছাড়াই মানুষের উপর নির্যাতন হয়েছে। কিশোর কুমারকে ব্যান করা বা দেব আনন্দের উপর কোপ – সেই ঘটনাতেও একই ব্যাপার।