AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Shah Rukh Khan ‘spitting’ Explained: ফুঁ না থুতু! দুয়া না প্রার্থনা! ইসলাম কী বলছে? কী বলছে সংবিধান?

Shah Rukh Khan 'spat' Controversy: নেটপাড়া এখন দুই ভাগে বিভক্ত। এক দল বলছে, শাহরুখ এটি করে অন্যায় করেছেন। অন্য দল বলছে যে তিনি কেবল দুয়ার পর "বাতাসে ফুঁ দিয়েছেন।" আসল সত্যিটা কী?

Shah Rukh Khan 'spitting' Explained: ফুঁ না থুতু! দুয়া না প্রার্থনা! ইসলাম কী বলছে? কী বলছে সংবিধান?
ফুঁ দেওয়ার পিছনে কী ব্যাখ্যা রয়েছে ইসলামে?
| Edited By: | Updated on: Feb 09, 2022 | 1:41 AM
Share

মুম্বই ও কলকাতা: একদিকে প্রার্থনা, অন্যদিকে দুয়া। রবিবার শিবাজি পার্কে প্রয়াত লতা মঙ্গেশকরের (Lata Mangeshkar) শেষকৃত্যের সময় এমন অভূতপূর্ব দৃশ্য ফ্রেমবন্দি হয়। যিনি প্রার্থনা করছিলেন তাঁর নাম পূজা দাদলানি। আর দুয়া করা মানুষটি হলেন তাঁরই বস, বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খান (Shah Rukh Khan)। এ দৃশ্য ভারতের বহুত্ববাদের কথা মনে করায় বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরা নানা লেখালিখি করেছেন। এটাই ভারত বলে অনেকে ব্যাখ্যা করেছেন। শাহরুখের দুয়ার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশংসিত হলেও বিতর্কেরও দাঁনা বেঁধেছে। শাহরুখ দুয়া করার পর, মাস্ক খুলে নীচু হয়ে ফুঁ দেওয়ার ভঙ্গিমায় আচার পালন করেন। নেটিজেনের একাংশ কটাক্ষ করে বলেন, শাহরুখ কি ‘থুতু’ ছিটিয়ে লতা মঙ্গেশকরকে অপমান করলেন?

বিজেপির নেতাদের একাংশও বিষয়টি নিয়ে শাহরুখের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানাতে শুরু করেছে। হরিয়ানা বিজেপির আইটি সেলের ইনচার্জ অরুণ যাদব টুইটারে সেদিনের শিবাজি পার্কের ভিডিয়ো টুইট করে লিখেছেন, “ইনি কি থুতু দিচ্ছেন?” যাদবের ওই টুইটটি এখনও তাঁর টুইটার হ্যান্ডেলে দেখা যাচ্ছে। উত্তর প্রদেশ বিজেপির মুখপাত্র প্রশান্ত উমরাও একই ধরনের একটি টুইট শেয়ার করেছেন। এদিকে ঘটনার পর থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রথম সারির বিজেপি নেতাকে শাহরুখের পক্ষ নিতে দেখা যায়নি, বা অরুণ যাদবের মন্তব্যকে খণ্ডন করারও কোনও প্রয়াস দেখা যায়নি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় এটিকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক দেখা দিয়েছে। নেটপাড়া এখন দুই ভাগে বিভক্ত। এক দল বলছে, শাহরুখ এটি করে অন্যায় করেছেন। অন্য দল বলছে যে তিনি কেবল দুয়ার পর “বাতাসে ফুঁ দিয়েছেন।” আসল সত্যিটা কী?

ইসলামে দুয়ার ব্যাখ্যা:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মতিন বলছেন, “ইসলাম ধর্মাম্বলী যে কোনও মানুষ যে কারোর জন্য দুয়া করতে পারেন। শুধু মাত্র মুসলিমদের জন্য দুয়া করতে হবে এমন কোনও কথা নেই। সব ধর্মের মানুষের জন্য দুয়া করা যায়। শুধু মানুষের জন্য নয় যে কোনও জীবের জন্যও দুয়া করা যেতে পারে। দুয়া কথাটার মানে হল, ঈশ্বরের বা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। এই ধর্মীয় আচার কেউ বন্ধ করে দিতে পারে না। কেউ বলতে পারে না এটা ভুল।” তাঁর মতে, দুয়া করার যে ভঙ্গিমা, সেই নিয়ে বিতর্কের অবকাশ থাকতে পারে। কেউ হাত তুলে দুয়া না করার কথা বলেন, আবার কেউ হাত নামিয়ে দুয়া না করার কথা বলেন। কিন্তু এখানে সেই বিষয়টি খুব একটা প্রাসঙ্গিক নয়। এটা ঠিক যে শাহরুখ খান তাঁর বিশ্বাস মতে, আল্লাহর কাছে হাত তুলে দুয়া করেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি কী দুয়া করেছেন – তা একমাত্র তিনি এবং তাঁর আল্লাহ জানেন। এখানে কোনও তৃতীয় ব্যক্তি নেই। ইসলামে এমন কোনও দলিল নেই যে তিনি কারও জন্য দুয়া করতে পারেন না। কেউ আস্তিক হোক বা নাস্তিক হোক, কিংবা যতই খারাপ মানুষ হোক… সকলের জন্যই দুয়া করা যেতে পারে।

শাহরুখ দুয়ার পর কেন ফুঁ দিলেন?

অধ্যাপক আব্দুল মতিন জানিয়েছেন, সব সময় যে দুয়ার পর ফুঁ দেওয়া হয় এমনটা নয়। এই বিষয়টি এসেছে ‘নন-ওয়াহাবি’ রীতি থেকে। এই ফুঁ দেওয়ার বিষয়টির সঙ্গে খুব নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে সুফিবাদের। এটি হল এক ধরনের আধ্যাত্মিকতাবাদ। শুধু উপমহাদেশ বলেই নয়, সারা বিশ্বের বহু জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে এই রীতি চলে আসছে। তুরস্ক, আরবের মতো দেশগুলিতেও এই রীতি রয়েছে। ফুঁ দেওয়ার রীতি পবিত্র কোরানে তেমন কোনও উল্লেখ হয়ত পাওয়া যায় না, কিন্তু একটি প্রচলিত রীতি হিসেবে উঠে এসেছে সারা বিশ্বের বহু জায়গায়।

তিনি আরও বলেন, “কোরানে এর বিষয়ে তেমন কোনও উল্লেখ না থাকলেও, যাঁরা আল্লাহ-র ওলি বা যাঁরা সুফি, তাঁদের মধ্যে এই ফুঁ দেওয়ার রীতি দেখা যায়। উনি (শাহরুখ খান) নিশ্চয়ই যখন ফুঁ দিয়েছেন, তখন মনে মনে কোরানের কোনও আয়াত পড়েছেন। তিনি কোন আয়াতটি পড়েছেন, সেটি বাহ্যিকভাবে আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। সাধারণভাবে কোরানের আয়াত পড়েই মানুষ ফুঁ দেন। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, যাতে কোনওরকম অপশক্তি বা অশুভ শক্তি থেকে তাঁকে দূরে রাখা যায়। এই বিষয়টির সরাসরি উল্লেখ না পাওয়া গেলেও, যাঁরা সুফি বা আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ, তাঁরাই এটি করে থাকেন।” এ ক্ষেত্রে শাহরুখ খান যে ফুঁ দিচ্ছেন, তা তিনি নিজের থেকে দিচ্ছেন না। তিনি যে আয়াত পড়েছেন, তারপর ওই আয়াতের ‘ওসিলা’ করে (মাধ্যমে) ফুঁ দিচ্ছেন।” অর্থাৎ, কোরানের আয়াত পড়ে আল্লাহর দেওয়া শক্তিকে ফুঁ-এর মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া, যাতে আশপাশে কোনও অশুভ শক্তি না আসে। শাহরুখ খান সে দিন এটাই করতে চেয়েছিলেন বলে মত আব্দুল মতিনের।

সত্যিই কি থুতু দেওয়ার কোনও রীতি আছে ইসলামে?

শুধু শাহরুখের এই ঘটনায় থুতু বিষয়টি উঠে আসেনি, এর আগে করোনাকালে ফল-সবজিতে থুতু ছিটানোর ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এ নিয়ে নানা বিতর্কও তৈরি হয়। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আব্দুল মতিন জানান, এই থুতু দেওয়ার যে তত্ত্বটি উঠে আসছে এর কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। তাঁর কথায়, “থুতু ফেলার বিষয়টি অপব্যাখ্যা। কোভিড অতিমারীর সময়ও এমন একটি কথা উঠেছিল মুসলিম সবজি বিক্রেতা, ফল বিক্রেতাদের নিয়ে। মূলত ফুঁ দেওয়ার রীতির অপব্যাখ্যা করা হয়। আমার মনে হয়, শাহরুখ খান নিজের ভক্তি, বিশ্বাস, ভালবাসা থেকেই ফুঁ দিয়েছেন। এটার আর কোনও ব্যাখ্যা হতে পারে না।” তবে ইসলামে কথিত এক ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, “একসময় মহম্মদের প্রধান শিষ্য আবু বকরকে এক গুহায় সাপে কামড়েছিল। তখন প্রফেট নিজের মুখের লালা বের করে ওই জায়গায় লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তখন নাকি সব বিষ ঝড়ে গিয়েছিল। তবে সেটা লালা এবং প্রেক্ষিত সম্পূর্ণ আলাদা। থুতু দেওয়া বিষয়টির সম্পূর্ণ অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে।”

ধর্মীয় আচরণের স্বাধীনতা

শাহরুখের দুয়া নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ বলছেন, বাড়িতে হিন্দু রীতি অনুযায়ী গণেশ পুজো করেন যেখানে লতা মঙ্গেশকরের শেষকৃত্যে দুয়া করতে গেলেন কেন? এ বিষয়ে আব্দুল মতিন জানান, ভারতের সংবিধান প্রত্যেক মানুষকে নিজের নিজের ধর্ম পালনের অধিকার দিয়েছে। শাহরুখ খান তাঁর নিজের সেই ধর্মীয় উপাচার পালন করেছেন এবং তাঁর যিনি আপ্ত সহায়ক রয়েছেন, তিনিও নিজের মতো করে পালন করেছেন। এটা সাংবিধানিক প্রত্যেকের অধিকার। উল্লেখ্য, সংবিধানের ২৫ থেকে ২৮ নম্বর অনুচ্ছেদে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার দেওয়া রয়েছে। আব্দুল মতিনের মতে, এই ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় উপাচারটাই ভারতের মিশ্র সংস্কৃতি। আর এটাই ভারত।

বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা 

বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা