BJP MLA Whatsapp Group Left: বিজেপিতে ‘গ্রুপ’ ছাড়ার হিড়িক! কেন বেরিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক বিধায়ক?
Bengal BJP: দলের রাজ্য ও জেলার বিভিন্ন গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন বাঁকুড়ার ৫ বিধায়কও। বিজেপিতে এটাই যেন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অনুসন্ধানে শীর্ষ নেতৃত্ব।
TV9 বাংলা: শুরুটা হয়েছিল সায়ন্তন বসুর হাত ধরে। বুধবারই বিজেপির নতুন রাজ্য কমিটি ঘোষিত হয়। সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বাদ পড়েন সায়ন্তন বসু। সঙ্গে সঙ্গেই হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যান তিনি। সেই শুরু…গত কয়েকদিনে সেই রীতিই ‘ট্রেন্ড’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপিতে। শনিবার সাংগঠনিক জেলা সভাপতি এবং ইনচার্জদের নাম ঘোষণা পরে উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়ার কয়েকজন বিধায়ক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়েছেন। দলের রাজ্য ও জেলার বিভিন্ন গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন বাঁকুড়ার ৫ বিধায়কও। কিন্তু হঠাৎ কেন হোয়াটসঅ্যাপ বিক্ষোভ? কারণ অনুসন্ধানে শীর্ষ নেতৃত্ব।
সূচনা সায়ন্তনের হাত ধরে
বিজেপির রাজ্য কমিটি ঘোষণার পর চমকে গোটা রাজনৈতিক মহল। বিজেপি নেতৃত্বও কম অবাক হন না। দেখা যায়, বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু ও সম্পাদক সঙ্ঘমিত্রা চৌধুরীর নাম নেই। রাতেই ঘটে আরও একটি কাকতালীয় ঘটনা। বিজেপির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নতুন রাজ্য কমিটির তালিকা ঢোকা মাত্রই সায়ন্তন বসু সেই গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যান। বিজেপি সূত্রে তেমনটাই খবর। যদিও এ বিষয়ে সায়ন্তন বসুর সাফ বক্তব্য, “এটাই তো স্বাভাবিক। রাজ্য কমিটিতে না থাকলে, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে থাকাটা তো নৈতিক নয়। তাই ওই গ্রুপ থেকে বেরিয়ে গিয়েছি।” যদিও সায়ন্তন বসুর মতো একজন নেতার নাম রাজ্য কমিটির তালিকায় না থাকার বিষয়টি দলের জোর চর্চিত। বিষয়টি নিয়ে বিস্মিত অনেক বিজেপি নেতাও।
মতুয়া সম্প্রদায়ের বিধায়কদের ক্ষোভ
বিজেপির সাংগঠিক জেলার সভাপতি রদবদল হতেই মতুয়া সম্প্রদায়ের পাঁচ বিধায়ক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যান। গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর, বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া, হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকার, রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী এবং কল্যাণীর বিধায়ক অম্বিকা রায়।
ক্ষোভের কারণ
পরবর্তীতে শোনা যায়, অম্বিকা রায় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ফিরতে চেয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কেন তাঁরা গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন? এই নিয়ে ক্যামেরার সামনে সেভাবে মন্তব্য করতে চাননি কোনও বিধায়কই। তবে সূত্রের খবর মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের গুরুত্ব না দেওয়ার জন্য ক্ষোভে তাঁরা গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাজ্য কমিটি ঘোষণা করেছে বিজেপি। ওই কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়নি কোনও মতুয়া নেতাকে। তারপরই এই ঘটনায় কাকতালীয় যোগ রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বাঁকুড়ার পাঁচ বিধায়কের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ
এরই মধ্যে শনিবার ফের প্রকাশিত হয় র সাংগঠনিক জেলা সভাপতির তালিকা। আর ‘ডিজিট্যালি ক্ষোভ প্রকাশের’ রেওয়াজ বজায় রেখেই বাঁকুড়ার পাঁচ বিধায়ক- নীলাদ্রিশেখর দানা, দিবাকর ঘড়ামি, নির্মল ধরা, হরকালি পাতিহার, অমর শখা বিভিন্ন গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যান একসঙ্গে।
বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর জেলার সাংগঠনিক জেলা সভাপতিদের পরিবর্তন করা হয়। বাঁকুড়ায় সুনীল রুদ্র মণ্ডল ও বিষ্ণুপুরে বীলেশ্বর সিংহকে। সেই নিয়ে চাপা উত্তেজনা ছিল। বিজেপি বেশ কয়েকজন নেতা মন্ত্রীর বক্তব্য, পরিবর্তন করে যাঁদের আনা হচ্ছে. তাতে সাংগঠনিক কাঠামো আরও দুর্বল হবে। তবে সুনীল রুদ্র ও বীলেশ্বরের এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ক্যামেরার সামনে মন্তব্য করতে চাননি গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া বিধায়করাও।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে…
শনিবার বিজেপির ৩০ জন জেলা সভাপতিকে সরিয়ে নতুন সভাপতি নিয়োগ করে। তারপরই বিদ্রোহ শুরু হয় বিজেপিতে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে নিঃসন্দেহে বিজেপির মুখ পুড়ছে। এতে শুধু বাঁকুড়ার ক্ষেত্রে কিংবা মতুয়া সম্প্রদায়ের বিধায়করাই করছেন, তেমনটা নয়, এই বিক্ষুব্ধ নেতাদের সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
যেভাবে সভাপতি নিয়োগ হয়েছে, যাঁদেরকে করা হয়েছে, তা নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সব জেলায় বিজেপি বিধায়ক নেই, তাই সব ক্ষেত্রেই এমনটা হবে না। তবে যে সব জেলাতে বিজেপি বিধায়করা রয়েছেন, তাঁরা এই ভাবেই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। অর্থাৎ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে গিয়ে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন।
এই অসন্তোষ বিজেপিকে ভাবাচ্ছে, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আজ, বিজেপির বৈঠক রয়েছে। রাজ্য কমিটির সভাপতি, সদস্যদের নিয়ে বৈঠক হবে। বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকও যোগ দেবেন। সেখানে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি কিছু বার্তা দিতে পারেন, কিন্তু সেই টোটকা কতটা কাজে লাগবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
‘দলের ক্ষমতা আছে ক্ষোভ সামলানোর’
বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর যদি নজর রাখি, তাহলে সুস্পষ্টভাবে দুটি ভাগ করা যায়। প্রথম ছ’মাস বিজেপির জন্য ছিল জোয়ারের সময়। প্রচুর তৃণমূল নেতানেত্রী বিজেপিতে এসেছিলেন। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ভাঁটার টান শুরু হয়। বিজেপি থেকে তথাকথিত নেতানেত্রীরা তৃণমূলে যেতে শুরু করেন। এটা একটা পরিস্থিতি। দ্বিতীয় হল হঠাৎ করেই কয়েকজন বিধায়কের সংগঠনের সঙ্গে সংযুক্তি নিয়ে অসন্তোষের কথা বলেছেন। সংগঠন ঢেলে সাজাতে গেলে বড় পার্টিতে, তাতে অসন্তোষ তৈরি হয়। এতে অনেকের খারাপ লাগতেই পারে। এগুলোকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। এগুলো সাময়িক। এগুলো সাময়িক ক্রুচি বিচ্যুতির বিষয়। তবে দলের সে ক্ষমতা আছে, এগুলোর মোকাবিলা করে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বার করবে।”
লোকসভা ভোটের নিরিখে
বিধানসভা ভোটে ২০০ আসনের স্বপ্ন দেখিয়ে মিলেছে ৭৭ টি আসন। তার ৭ মাসের মধ্যে কলকাতার ভোটপ্রাপ্তি হিসাবে বামেদের থেকে পিছিয়ে পড়েছে বিজেপি। অসন্তোষ, অন্তর্ঘাতের দাওয়াই না পেলে বিপদ বাড়বে গেরুয়া শিবিরের। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “এগুলো বিশ্লেষণের বিষয়। এগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আগামী দিনে আমরা চিন্তাভাবনা করব। যাঁরা এই ধরনের কাজ করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দল কী ব্যবস্থা নেবে, দেখা যাক।”
লোকসভা ভোটের তিন বছরও বাকি নেই। তার আগে বড় নির্বাচন বলতে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির রাজ্য জোড়া পুরভোট। সেখানেও বিজেপির একই হাল হলে, বামেরাই কার্যত প্রধান বিরোধী হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। চিন্তায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও।
আরও পড়ুন: Bengal BJP Inner Clash: টাকা নিয়ে দলের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাত! পুরভোটে হারের কারণ বিশ্লেষণে নয়া তথ্য