Durga Puja 2021: ‘মরিবার তরে’ কি ‘পাখা’ গজিয়েছে? পুজোর ভিড় দেখে চিকিৎসকেরা বলছেন ‘আত্মঘাতী বাঙালি’

Covid 19: আজ অষ্টমী। গত কয়েকদিনে কলকাতায় পুজোর যে ভিড় দেখা গিয়েছে, তাতে রীতিমতো হতাশ চিকিৎসকেরা।

Durga Puja 2021: 'মরিবার তরে' কি 'পাখা' গজিয়েছে? পুজোর ভিড় দেখে চিকিৎসকেরা বলছেন 'আত্মঘাতী বাঙালি'
এভাবেই বাড়ছে ভিড়
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 13, 2021 | 4:09 PM

কলকাতা : গত কয়েকদিন ধরে প্রবল ভিড়ের ছবি চোখে পড়েছে শহর জুড়ে। রাস্তায় মানুষের সংখ্যা যত বেশি, তাঁদের মধ্যে কোভিড বিধির (Covid  Restrictions) অভাব তার থেকেও বেশি। সংবাদমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) উঠে আসা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মাস্ক (Mask) ছাড়াই নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়াচ্ছে সাধারণ মানুষ। আর এই দৃশ্য দেখেই চিকিৎসকরা বলছেন, আমরা হতাশ। মাত্র কয়েক মাস আগে কোভিডের কারণে যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেটা মানুষ কী ভাবে ভুলে গেলেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন চিকিৎসকেরা। শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসকদের দাবি, পরিস্থিতির অবনতি হলে আবারও চোখে পড়বে অক্সিজেনের (Oxygen) অভাব। তখন সরকার কিংবা চিকিৎসা ব্যবস্থাকে দোষারোপ করা হবে, কিন্তু মানুষের মনে রাখা উচিত যে তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছেন কিনা।

এই জনসমুদ্র দেখে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, আত্মঘাতী বাঙালি। তিনি বলেন, মাত্র ৬ মাস আগে বেডের জন্য হাহাকার, অক্সিজেনের জন্য হাহাকার কী ভাবে ভুলে গেলেন, আর প্রশাসনকেও বলিহারি, এত দূরদর্শিতার অভাব। কড়া বার্তা দিয়ে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন বন্ধ করুন পুজো, যা হয়েছে হয়েছে।

এই পরিস্থিতি দেখে ভাইরোলজিস্ট ড. সুমন পোদ্দার কার্যত হতাশা প্রকাশ করেন। তাঁর কথায়, পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। বাঙালিকে দেখে মনে হচ্ছে সেরকমই পাখা গজিয়েছে। বিগত কিছুদিন আগেও আর এস ভাইরাসের জন্য শিশুরা যে ভাবে শ্বাসকষ্ট ভুগেছে, সে কথা মনে করিয়ে দেন ড. পোদ্দার। তাঁর দাবি, শিশুদের মধ্যে যদি করোনা ছড়ায়, তাহলে তা গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো কাজ করবে। শিশুদের যে ভ্যাকসিন এখনও দেওয়া হয়নি সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন ড. রাহুল জৈন।

চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার স্পষ্ট করেই বলেছেন, ২০২০ সালের পুজো ছিল বয়স্কদের বাঁচানোর লড়াই। এ বছর ছোট সন্তানদের হাতে ধরে মণ্ডপ দেখাতে নিয়ে যাচ্ছেন, রাস্তায় বের করছেন তাঁরা কিন্তু সন্তানদের ক্ষতি ডেকে আনছেন। ভাববেন না একবার? একাধিক চিকিৎসক অসহায়তা কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন তাঁরা টোটালি ফ্রাস্ট্রেটেড।

পুজোর ভিড় নিয়ে এ ভাবেই চিকিৎসক মহল থেকে প্রতিক্রিয়া উঠে আসছে। এক কথায় বলা চলে আশঙ্কিত সকলেই। কারণ এই মুহূর্তে কলকাতায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। অর্থাৎ চরম আশঙ্কায় দিন গুনছেন চিকিৎসকেরা। আর বাঙালি রাস্তায় আনন্দ করতে বেরিয়ে পড়ছে দিনে-রাতে-ভোরে। সব সময়। বিস্ফোরণের অপেক্ষায় হয়তো বাঙালিরা।

কলকাতা পৌরনিগমের স্বাস্থ্য বিভাগের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শহরের একাধিক বোরো এলাকায় বেড়েছে করোনার সংক্রমণ। এর মধ্যে যে বোরোগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ২, ৩, ৫, ৭, ১০ নম্বর এলাকা। হিসেব বলছে, পুজোর মরশুমে এই এলাকাগুলিতে প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশ বেড়েছে করোনার সংক্রমণ। আর এই পরিসংখ্যান দেখে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পৌর প্রশাসনের কর্তাদের। পৌরনিগমের থেকে নজরদারি চালানো হচ্ছে জোরকদমে। কলকাতার পুজো দেখতে আসা দর্শনার্থীদের বারবার করে কোভিড বিধি মানার জন্য অনুরোধও করা হচ্ছে। কিন্তু মাস্ক নিয়ে এখনও দর্শনার্থীদের মধ্যে একটি বড় অংশের মধ্যে চূড়ান্ত অবহেলার ছবি দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে করোনার সংক্রমণকে আটকানো যাবে, তা বুঝে উঠতে পারছেন না কলকাতা পৌরনিগমের কর্তারা।

আরও পড়ুন: আঁধারে পুজো: ‘বুর্জ খলিফার’ নীচে ‘আধখানা’ বুক নিয়ে পরভিনের মলিন সংসার