Pavlov: বেহাল পাভলভে ‘নরক যন্ত্রণা’ আবাসিকদের, কী বলছে চিকিৎসক মহল?

Pavlov Hospital: ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিভাগের প্রধান সৃজিত ঘোষ জানিয়েছেন, "তবে এত বড় হাসপাতাল, কিছু সমস্যা , ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি এটি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। আমরা আমাদের চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখি না।"

Pavlov: বেহাল পাভলভে 'নরক যন্ত্রণা' আবাসিকদের, কী বলছে চিকিৎসক মহল?
পাভলভে বেহাল দশা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 18, 2022 | 6:47 PM

কলকাতা : পাভলভ। মানসিক রোগীদের জন্য রাজ্যের অন্যতম সেরা হাসপাতাল। কিন্তু এই হাসপাতালের বিরুদ্ধেই এবার রোগী পরিষেবায় চূড়ান্ত বেনিয়মের অভিযোগ উঠে এসেছে। সেই সংক্রান্ত খবর TV9 বাংলাই প্রথম প্রকাশ করেছিল। চরম অবহেলার মধ্যে ধুঁকছেন পাভলভের আবাসিকরা। দুই স্বাস্থ্য কর্তা – ডিডিএইচএস এবং এডিএইচএস (মেন্টাল হেল্থ) এপ্রিল ও মে মাসে পাভলভ পরিদর্শনের পর রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য ভবনে। তারপর শোকজ় করা হয়েছে পাভলভের সুপার গণেশ প্রসাদকে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে পাভলভের সুপারের বক্তব্য, তিনি এখনও কোনও শোকজ় নোটিস হাতে পাননি। উল্লেখ্য, শোকজ়ের চিঠিটি ইস্যু করা হয়েছিল ১০ তারিখ। সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই সময়কাল অতিবাহিত হওয়ার পরও সুপার বলছেন, তিনি চিঠি পাননি। এমনকী পরিদর্শন যে হয়েছে সেটিও তিনি মনে করতে পারছেন না। এমনকী এই ধরনের কোনও অভিযোগের কথাও অস্বীকার করেছেন তিনি। পাভলভে ডায়েট কমিটিও রয়েছে বলে দাবি সুপারের।

বিষয়টি নিয়ে TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, যে কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে, সেই কমিটি জবাব খতিয়ে দেখবে। তবে সেই জবাব কবে পৌছবে স্বাস্থ্যভবনে, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কারণ, সুপারের দাবি, তিনি এখনও কোনও চিঠি পাননি।

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিভাগের প্রধান সৃজিত ঘোষ জানিয়েছেন, “যদি কখনও দেখি কোনও রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের কোনও সংশয় রয়েছে, তখন আমরা একটি বোর্ড গঠন করি। আলোচনার মাধ্যমে তারপর চিকিৎসা করা হয়। তবে এত বড় হাসপাতাল, কিছু সমস্যা , ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি এটি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। আমরা আমাদের চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখি না।” উল্লেখ্য, পাভলভ হাসপাতালের পরিকাঠামো দুটি ভাগে চলে। যেখানে রোগীদের রাখা হয়, সেটি ডিরেক্টরেট অব হেল্থ সার্ভিসেস-এর অন্তর্গত। পাভলভের পড়াশুনো সংক্রান্ত বিভাগটি মেডিক্যাল এডুকেশনের আওতায় ন্যাশনাল মেডিক্যালের অন্তর্গত। এই বিভাগটির অভিভাবক চিকিৎসক সৃজিত ঘোষ।

তবে চিকিৎসক অর্চনা মজুমদারের গলায় আবার পাভলভের এই চূড়ান্ত দুরবস্থা নিয়ে কিছুটা বিরক্তির সুর। একরাশ ক্ষোভ নিয়ে তিনি জানিয়েছেন, ” ওখানে যাঁরা কর্মী, তাঁদের কারও কখনও বদলি হয় না। কারণ এটা একটা ব়্যাকেট। এই যে টাকা আসছে, সেগুলি স্থানীয় তৃণমূল নেতা বা তাঁর উপরের নেতারা হাসপাতালের সুপারদের এমন দাবিয়ে রাখেন… ডাক্তারদের কিছুই করার থাকে না। শুধু ওষুধটুকু লিখে বেরিয়ে যান। বাকি কিছু বললেই তাঁদের বদলি হয়ে যায়।”

বিষয়টি নিয়ে বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জয়রঞ্জন রামও বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। TV9 বাংলাকে তিনি জানিয়েছেন, “খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যাঁরা ভর্তি থাকেন, তাঁদের উপর অন্যায়-অবিচার বহু যুগ ধরে চলে আসছে। কিন্তু আমরা ভাবতে চাই যে পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নত হয়েছে। তবে এটা খুব দুঃখজনক বাস্তব। যাঁরা ভর্তি আছেন, বাস্তবে তাঁদের কতটা চিকিৎসা হচ্ছে, কী ধরনের খাবার দেওয়া হচ্ছে… তা অনেক ক্ষেত্রেই নজর দিয়ে দেখা হয় না। এটির জন্য আমি কাউকে দোষ দিতে চাইছি না। কিন্তু যা হচ্ছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া, কলকাতা শহরে একটি বড় প্রতিষ্ঠানে যদি এমন হতে পারে, তাহলে আমাদের সত্যিই ভেবে দেখা উচিত অন্যান্য জায়গায় কী অবস্থা।”

পাভলভের এই বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে, সাফাইও রয়েছে। পাভলভের চিকিৎসকদের ইনডোর বা আউটডোরে সেভাবে না যাওয়া প্রসঙ্গের সাফাই দিতে গিয়ে চিকিৎসক সৃজিত ঘোষের বক্তব্য, যদি সত্যিই এমন হয়, যদি ইনডোর বা আউটডোরে না যান, তাহলে কিছুদিন আগে এমসিআর কমিটি যে পরিদর্শনে এসেছিল, তাতে দরাজ সার্টিফিকেট কীভাবে এল। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে স্বাস্থ্য ভবনকেই পাল্টা চ্যালেঞ্জ করার ইঙ্গিত দিচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। এরই মধ্যে ঘুরে ফিরে একটাই প্রশ্ন উঠে আসছে, এই টানাপোড়েনের মাঝে পড়ে ‘নরক যন্ত্রণা’ থেকে কি কোনও নিস্তার মিলবে পাভলভের আবাসিকদের? উত্তর এখনও অজানা।