HC On SSC: ইন্টারভিউ থেকে বাদ গেল নীতীশের নাম, অযোগ্যদের তালিকা সম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে প্রকাশ করার নির্দেশ আদালতের
SSC Recruitment Scam: কমিশনের তরফ থেকে তখন পাল্টা যুক্তি খাড়া করা হয়, এই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নেই। কারণ মামলাকারী কেউ পাশ করেনি। নীতীশরঞ্জন, নারায়না চন্দ্র, তাঁরা বিশেষভাবে সক্ষম। পাশাপাশি বাকি দু'জন অর্থাৎ জয়নাল আবেদিন, দেবলীনা মণ্ডলের নামের বানান ভুল। কমিশনের দাবি, তারা দাগি নয়।

কলকাতা: দাগি হয়েও পরীক্ষায় বসেছিলেন। এমনকি ডাক পেয়েছিলেন ভেরিফিকেশনের জন্যও। এবার সেই নীতিশরঞ্জন বর্মন ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ছেন। বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট আরও একবার কমিশনকে মনে করিয়ে দিল, কোনও দাগি পরীক্ষায় বসবে না। ২০২৫-এর এসএসসি-র একাদশ দ্বাদশের ফলপ্রকাশ হতেই নীতীশরঞ্জন বর্মনের নাম খবরের শিরোনামে আসে। আরও একবার এই নাম এসেছিল শিরোনামে। কারণ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এসএসসি ‘দাগি’দের যে তালিকা প্রকাশ করেছিল, তাতেও নাম ছিল নীতীশরঞ্জনের। সেই নীতীশই আবার ভেরিফিকেশনের জন্য ডাক পান। এই বিষয়টি আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের কাছে ফোন করে জানান নীতীশের স্ত্রী, যাঁর সঙ্গে এখন বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। আইনজীবী বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বুধবার সেই মামলার শুনানি ছিল।
শুনানি চলাকালীন বিচারপতি অমৃতা সিনহা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের উদ্দেশ্য ছিল দাগিরা যাতে পরীক্ষায় না বসতে পারে। বিচারপতি বলেন, “দুজন বিশেষভাবে সক্ষম হলেও, তাঁদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া যায় না।” এক্ষেত্রে কমিশনের যুক্তি ছিল নীতীশ বিশেষভাবে সক্ষম। কিন্তু তিনি দাগি, তাই কমিশনের যুক্তি কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে স্পষ্ট বলে দেন বিচারপতি।
এদিন সওয়াল জবাবের সময়ে আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, ইন্টারভিউ লিস্টে টেন্টেড প্রর্থী রয়েছে। তিনি সেই নাম টেন্টেড প্রর্থীদের লিস্ট ধরে মিলিয়েও দেন। তখন বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “কিন্তু এরাই যে ইন্টারভিউতে ডাক পেয়েছে, সেটা কীভাবে বুঝলেন?” তখন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের এক বক্তব্য। ওয়েমার এজন্যই প্রকাশের প্রয়োজন আছে।”
কমিশনের তরফ থেকে তখন পাল্টা যুক্তি খাড়া করা হয়, এই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নেই। কারণ মামলাকারী কেউ পাশ করেনি। নীতীশরঞ্জন, নারায়না চন্দ্র, তাঁরা বিশেষভাবে সক্ষম। পাশাপাশি বাকি দু’জন অর্থাৎ জয়নাল আবেদিন, দেবলীনা মণ্ডলের নামের বানান ভুল। কমিশনের দাবি, তারা দাগি নয়।
কমিশনের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, “বিশেষভাবে সক্ষমদের পরীক্ষায় বসার কথা বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। বয়েসে ছাড় সহ অন্যান্য বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড়ের কথাও বলা হয়েছিল।” তখন বিচারপতি অমৃতা সিনহা বলেন, “অন্যান্য ছাড় মানে কি আপনি টেন্টেড প্রার্থী বসাবেন? আপনি স্বীকার করছেন এরা টেন্টেড?” কথা প্রসঙ্গেই বিচারপতি জানতে চান, “টেন্টেডদের তালিকা বের করেছেন?”
তখন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আপনি বললে আমরা বাতিল করে দিচ্ছি। আমরা সুপ্রিম কোর্টের কথাই শুনেছি।” তখনই নাম না করে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে বিঁধে কল্যাণ বলেন, “কয়েকজন রয়েছেন, যাঁরা বিরক্ত করার জন্য এরকম বলেন।” কল্যাণের দাবি, ১৮০৪ টেন্টেড রয়েছেন। তখন মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা এই তালিকার বিস্তারিত জানতে চাইছি। এই টেন্টেড কারা? তাঁদের বাবার নাম কী? কিসে আবেদন করেছিল?” বিকাশের প্রশ্ন, “স্কুল সার্ভিস কমিশনের কোনও দরকার আছে কি এগুলো লুকানোর?”
এরপরই বিচারপতি ওয়েবসাইটে টেন্টেড প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করতে নির্দেশ দেন। যারা অযোগ্য, তাদের খুজতে সুবিধা হবে। অযোগ্যদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। শুধু নাম প্রকাশ করলে অনেক বিভ্রান্তি হতে পারে। তাই অযোগ্যদের নাম সম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে প্রকাশিত হলে সাধারণের মানুষের বুঝতে সুবিধা হবে।
আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, “আসলে এসএসসি-র প্রথম থেকেই উদ্দেশ্য ছিল, যে কোনও ফাঁকেই যদি টেন্টেডদের গলিয়ে দেওয়া যায়। তাই এই টেন্টেডদের মধ্যে PH ক্যান্ডিডেট বাছা হয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে, একজন টেন্টেড যেন পরীক্ষায় না বসে। টেন্টেড লিস্টে শুধু রোল নম্বর ও নাম রয়েছে। একই নামের ব্যক্তি বাংলার কয়েকশো রয়েছে। কী করে বাছা সম্ভব? টেন্টেডদের তালিকা সম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে প্রকাশ করতে হবে। আজ বিচারপতি সেই নির্দেশই দিয়েছেন। “
