Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

পদবীর ইতিহাস: অধিকারী পদবী কি আসলে সুলতানদের দেওয়া? ইতিহাস কী বলছে?

Surname History: অধিকারী সে দিক থেকে বিচার করলে এমন কেউ যাঁদের কোনও কিছুর উপরে অধিকার রয়েছে। অধিকারী পদবী উৎপত্তির পিছনেও রয়েছে তেমনই কাহিনি।

পদবীর ইতিহাস: অধিকারী পদবী কি আসলে সুলতানদের দেওয়া? ইতিহাস কী বলছে?
Follow Us:
| Updated on: Apr 14, 2025 | 6:30 PM

আমাদের চারপাশে কান পাতলেই যে সব পদবীর হদিশ পাওয়া যায়, তার মধ্যে অন্যতম হল অধিকারী। বিশেষ করে দুই মেদিনীপুর অঞ্চলে এই পদবীর ব্যক্তিদের আধিক্য বেশি। কিন্তু কোথা থেকে জন্ম নিল ‘অধিকারী’ পদবী? কীসের উপর তাঁদের অধিকার সবচেয়ে বেশি? দেখে নিন কী বলছে ইতিহাস!

‘অধিকারী’ শব্দটির আভিধানিক অর্থকে দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। অধিকারী শব্দটি বললে আমাদের মাথায় প্রথম যা মাথায় আসে তা হল কোনও কিছুর উপর অধিকার। এই অধিকার বলতে বোঝায় স্বত্ব, স্বামিত্ব, দখল, আধিপত্য বা কর্তৃত্ব।

অধিকারী সে দিক থেকে বিচার করলে এমন কেউ যাঁদের কোনও কিছুর উপরে অধিকার রয়েছে। অধিকারী পদবী উৎপত্তির পিছনেও রয়েছে তেমনই কাহিনি। অধিকারের দিক থেকে ভাবলে মূলত ক্ষত্রিয়দের মধ্যেই ‘অধিকারী’ পদবী সীমাবদ্ধ থাকার কথা। কারণ রাজ্য বা দেশ সামলানোর অধিকার থাকত তাঁদের উপরেই।

তবে প্রাচীনকাল থেকেই আরেকটি ভিন্ন অর্থেও এই অধিকারী শব্দ ব্যবহার করা হত। তা হল ‘অধ্যক্ষ’ অর্থে। যাত্রাদল, নাটকের দল বা গ্রুপ, কীর্তনের দলের একজন করে অধ্যক্ষ থাকত। যাঁরা পরবর্তিতে ম্যানেজার নামেও পরিচিতি লাভ করেন। সেই অধ্যক্ষদের এক সময়ে অধিকারী নামে ডাকা হত।

আবার বৈষ্ণব সমাজে পূজ্য ব্যক্তিকেও অধিকারী সম্বোধন করার প্রথা ছিল।। ড. কামিনী কুমার রায় তাঁর ‘লৌকিক শব্দকোষ’ বইতে অভিজাত সূচক যে সব পদবির তালিকা দিয়েছেন তার মধ্যেও সবার উপরে আছে ‘অধিকারী’। যদিও সেই তালিকায় অধিকারী ছাড়াও আঢ্য, কীর্তি, কোঙার, ভদ্র, যশের মতো আরও অনেক পদবীর উল্লেখ পাওয়া যায়।

অধিকারী পদবীর জন্ম মনে করা হয় সুলতান আমলের শাসনকালে। ১৩৩৪ থেকে ১৫৩৮ দশকের মধ্যে। সে সময় বিভিন্ন জায়গার স্বত্ব দেওয়া হত নির্দিষ্ট করের বিনিময়। অর্থাৎ সেই জায়গা শাসনের অধিকার পেতেন তাঁরা। এভাবেই অধিকারী পদবীর জন্ম বলেও মনে করেন অনেকে। কেউ কেউ বলেন একটা সময় গ্রামের প্রধানদেরও অধিকারী বলা হত। সে সময়ে প্রত্যেক গ্রামে একজন করে অধিকারী থাকতেন। প্রধান বা শাসক গোষ্ঠীর মধ্যেই পেত এই অধিকারী পদবী।

মতান্তরে এও মনে করা হয় যে শাস্ত্রধর্মে অধিকার সম্পন্ন মানুষকেও অধিকরী বলা হত কোথাও কোথাও। বিশেষ করে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মধ্যে এই পদবী সম্মানিত এবং ক্ষমতাবান ব্যক্তি বোঝাতে ব্যবহারের চল ছিল।

অধিকারী পদবীর উৎপত্তি সম্পর্কে আরেকটি মতের হদিশ মেলে। মনে করা হয় অধিকারী পদবীর উৎপত্তি উত্তরবঙ্গে। এক সময়ে কুচবিহারের রাজবংশী পুরোহিতদের অধিকারী পদবী দেওয়া হত। ব্রাহ্মণ, বৈষ্ণব, মাহিষ্য, রাজবংশী, যোগী সম্প্রদায়ের মধ্যেও এই পদবীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়।