Mumbai Dabbawala: তিনদিনে ৬টি সাইকেল চুরি, করোনার পর ফের চরম বিপদের মুখে মুম্বইয়ের ডাব্বাওয়ালারা!
Mumbai: ১ থেকে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বোরিভালি, নালাসোপারা, ভাইন্দর, কান্দিভলি এবং ভিলে পার্লে স্টেশনের বাইরে থেকে পর পর সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনা সাম্প্রতিককালে ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘লাঞ্চবক্স’ (Lunchbox) সিনেমা দেখেছেন নিশ্চয়! যদি দেখে থাকেন তাহলে বুঝবেন মুম্বইয়ের (Mumbai) প্রাণকেন্দ্রে অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন ডাব্বাওয়ালারা (Dabbawala)। মুম্বইয়ের প্রাণভোমরাটাই লুকিয়ে রয়েছে এই ডাব্বাওয়ালাদের মধ্যে। শহরের অফিসযাত্রীদের জন্য একটি লাইফলাইন বলা যেতে পারে। প্রতিদিন বাড়ির তৈরি পুষ্টিকর রান্না যাদের মাধ্যমে ছোট থেকে বড়, নামী-অনামী অফিসে পৌঁছে যায় সঠিক সময়ে, সঠিক টিফিনবক্সে। ‘লাঞ্চবক্স’ সিনেমার মত হয়ত টিফিনবক্সের হাতবদল হয়, তবুও মুম্বইকরদের বাঁচিয়ে রেখেছে এই সাদা নেহেরু টুপি পরা, সাদা ঢিলেঢালা পোশাক পরিহিত মানুষগুলো। তবে এবার বোধহয় ব্যবসা লাটে উঠতে চলেছে ডাব্বাওয়ালাদের। করোনার জেরে টানা ২ বছর হাতে কোনও কাজ ছিল না তাদের। এবার আরও এক না সমস্যা জীবিকা নির্বাহ করাটাই সমস্যার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কারণ তিনদিনে পর পর ৬টি সাইকেল চুরির ঘটনায় রীতিমত মাথা হাত পড়েছে ডাব্বাওয়ালাদের। জীবিকার জন্য এই সাইকেলই হল একমাত্র সম্বল। সেটাও চুরি হয়ে যাওয়ায় রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলেন ডাব্বাওয়ালাদের একাংশ। রেলওয়ে স্টেশনগুলিতে পার্ক করা সাইকেলগুলি পর পর চুরি হয়ে যাওয়া, নিরাপত্তার দাবিতে উপ-মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীশের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানাল মুম্বই ডাব্বাওয়ালা অ্যাসোসিয়েশন।
১ থেকে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বোরিভালি, নালাসোপারা, ভাইন্দর, কান্দিভলি এবং ভিলে পার্লে স্টেশনের বাইরে থেকে পর পর চুরির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনা সাম্প্রতিককালে ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মুম্বইয়ের ডাব্বাওয়ালা অ্যাসোসিয়েশনে সভাপতি সুভাষ তালেকার জানিয়েছেন, এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রেলস্টেশনগুলিতে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তালা দিয়ে রাখলেও সেই সাইকেলে নিমেষের মধ্যে উধাও হয়ে যাচ্ছে। মহামারী পরবর্তী সময়ে এক একটি সাইকেলের দাম হয়েছে দশ হাজার টাকা।
২৫ বছর ধরে ডাব্বাওয়াল হিসেবে কাজ করছেন ৪৬ বছর বয়সি রোহিদাস শিংগোটে। তাঁর কথায়, ‘নতুন সাইকেল হারিয়ে এখন ফের পুরনো মরচে ধরা সাইকেলই ব্যবহার করছেন। সকাল ৮টার দিকে লাঞ্চ বক্সগুলি সংগ্রহ করতে শুরু করি ও সকালে ১০টার দিকে কান্দিভালি স্টেশনের বাইরে সাইকেল পার্ক করে রাখি। কোলবায় গিয়ে সেই বক্সগুলি অফিসে পৌঁছে দিই। শুক্রবার বিকেল ৪টের সময় কান্দিভালি স্টেশনে ফিরে দেখি সাইকেল নেই। তারপর রেলওয়ে স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়।’
কান্দিভালি রেলওয়ে আধিকারিকরা সিসিটিভি ফুটেজে তিনজন দুষ্কৃতিকে সনাক্ত করতে পেরেছেন। কিন্ত এখন অপরাধীদের ধরা যায়নি। সরকারি রেল সুরক্ষার কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘অভিযোগ পাওয়া মাত্রই আমরা অ্যাকশন নিয়েছি। অন্যান্য স্টেশনেও একই ধরনের অভিযোগ করা হয়েছে।’
৭১ বছর বয়সি বাবান ওয়ালুনজ ৭০ দশক থেকে এই পেশার সঙ্গে জড়িত। তিনি জানিয়েছেন, ‘এই প্রথম এমন চুরির ঘটনার সাক্ষী থাকলাম। মহামারী চলাকালীন আমরা টানা ২ বছর বেকার ছিলাম। তাতেই সাইকেলে মরচে ধরে যায়। মেরামতেরও প্রয়োজন ছিল। পরে ঋণ নিয়ে নতুন সাইকেল কিনি। এখন এগুলোও চুরি হয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে আমাদের সাহায্য না করলে ভবিষ্যত অন্ধকার।’
মুম্বই ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও প্রধান বি ভি ভোঁসলে জানিয়েছেন, ‘আজকাল বিভিন্ন ডেলিভারি অ্যাপ্লিকেশনের সঙ্গে ডাব্বাওয়ালাদের প্রতিযোগিতা বেড়ে গিয়েছে। তাদের বেঁচে থাকার জন্য অনলাইন সুবিধাগুলিতে আপগ্রেড করতে হবে। ডেলিভারি ও নিরাপত্তার জন্য ই-বাইক ব্যবহার করতে পারেন। তবে জীবিকার জন্য এই সাইকেল চুরির ঘটনা সত্যিই বড় ধাক্কা।’