France vs Morocco: ১১০ বছরের যন্ত্রণার ইতিহাস নিয়ে ফরাসিদের মুখে নামবে মরক্কো!
FIFA World Cup 2022: স্বাভাবিক ভাবেই মরক্কো ও ফ্রান্সের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুবই জটিল এবং স্পর্শকাতর। এই প্রথম বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে দুটো দেশ। লক্ষ্য একটাই, ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। কিন্তু ১১০ বছরের এক জটিল ইতিহাস যে এর মধ্যে ঢুকে পড়বে, সন্দেহ নেই।
দোহা: এক দিকে, ফিফা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠা প্রথম আফ্রিকান দল। অন্য দিকে, রাশিয়া বিশ্বকাপে জয়ী টিম। কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠবে কারা? ট্রফির ঠিক আগের ধাপে পা রাখবে কোন টিম? ফ্রান্স, নাকি মরক্কো? দুই টিমের এই লড়াই শুধু ফুটবলের নয়। বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথমবার দেখা হলেও দুই দেশের দীর্ঘ ১১০ বছরের এক জটিল ইতিহাস রয়েছে। কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ফরাসি-মরক্কান লড়াইয়ে কি সেই ইতিহাস ঢুকে পড়বে? তুলে ধরল TV9Bangla।
কী রয়েছে এই ১১০ বছরের ইতিহাসে? প্রায় ১১০ বছর ধরে ফ্রান্সের উপনিবেশ হয়ে কাটিয়েছে মরক্কো। ১৯১২ সালে ফ্রান্স ও মরক্কোর সুলতান আব্দুল হাফিজের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ঘরে-বাইরে মরক্কোকে রক্ষার যাবতীয় দায়িত্ব নেবে ফ্রান্স। পরবর্তী সময় মরক্কোতে উপনিবেশ স্থাপনে কাটিয়েছে ফ্রান্স। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রায় ৪০ হাজার মরক্কান সৈন্যকে ফ্রান্সের কলোনিয়াল আর্মিতে যোগ দিতে হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপের বিভিন্ন কলোনিতে স্বাধীনতা আগুন জ্বলে যায়। ১৯৪৪ সালে মরক্কোতে নবগঠিত ইস্তিকলাল পার্টি স্বাধীনতা ঘোষণা করে। আবার ১৯৫২ সালে উপনিবেশ বিরোধী গোষ্ঠী কাসাব্লাঙ্কা মরক্কোর স্বাধীনতার জন্য লড়াই শুরু করে দেয়। ওই আগুন কঠোর হাতে নিভিয়েছিল ফরাসিবাহিনী। পরে মরক্কোর কমিউনিস্ট পার্টি ও ইস্তিকলাল পার্টিকে দমন করে সুলতান পঞ্চম মহম্মদকে মাদাগাস্কারে নির্বাসিত করা হয়। পরবর্তীকালে স্বাধীনতার আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লে ১৯৫৫ সালের ১৮ নভেম্বর সুলতান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। মরক্কোর উপর ফ্রান্সের প্রভাব চিরতরে শেষ হয় ১৯৫৬ সালের মার্চ মাসে।
ফরাসিদের হাত থেকে বেরিয়ে মরক্কো ঘুরে দাড়িয়েছে ধীরে ধীরে। সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে ফ্রান্স বন্ধু হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে মরক্কোর। বহুকাল ধরে মরক্কোর বৈদেশিক বিনিয়োগকারী ফরাসিরা। দুই দেশই নিজেদের প্রয়োজনে কাছাকাছি এসেছে। সমস্যা মেটানোর জন্য উচ্চপদস্থ স্তরে মিটিং হয়েছে। ২০০৭ সালে ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস জারকোজি মরক্কো সফরে এসে ‘আল-বোরাক’ নামে এক দ্রুতগতির ট্রেনের উদ্বোধনে আসেন। ওই ট্রেন চালু করার ক্ষেত্রে মোট ৫১ শতাংশ ছিল ফরাসি বিনিয়োগ। ঠিক তার দুই বছর পর একটি ফ্রেন্ডলি ফুটবল ম্যাচ খেলে দুটো টিম। ফলাফল ২-২।
ফ্রেঞ্চ ইন্সটিটিউট অব স্ট্যাটিস্টিকস অ্য়ান্ড ইকোনমিক্স স্টাডিস নামক সংস্থার মতে, প্রায় ৭ লক্ষ ৮০ হাজার বাসিন্দা এসেছিলেন মরক্কো থেকে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে দুই দেশের মধ্যে ভিসা সংক্রান্ত ঝামেলার কারণে মরক্কোর বাসিন্দারা সমস্যায় পড়েছেন ফ্রান্সে। তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারেননি। ফ্রান্স ঘোষণা করেছে, মরক্কো ও আলজেরিয়ার বাসিন্দাদের ভিসা প্রক্রিয়া কড়াকড়ি করা হবে। মরক্কোর বিদেশমন্ত্রী নাসের বৌরিতা এই সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায়’ বলে দাবি করেছিলেন।
স্বাভাবিক ভাবেই মরক্কো ও ফ্রান্সের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুবই জটিল এবং স্পর্শকাতর। এই প্রথম বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে দুটো দেশ। লক্ষ্য একটাই, ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। কিন্তু ১১০ বছরের এক জটিল ইতিহাস যে এর মধ্যে ঢুকে পড়বে, সন্দেহ নেই।