Manchester United : অন্য কোচেদের থেকে কেন অনেকখানি এগিয়ে ম্যান ইউয়ের এরিক?
Erik Ten Hag: ক্লাবের রান্নাঘরেও নাকি কর্তৃত্ব চলে টেন হ্যাগের। কোন খেলোয়াড় কী খাবার খাবেন, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেই খাদ্য তালিকা ঠিক করেন তিনি নিজেই।

স্বরূপ মুখার্জী
স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের (Sir Alex Ferguson) অবসরের পর থেকে বিশ্ব ফুটবলে নিজেদের স্থান এবং কর্তৃত্ব অনেকখানি হারিয়ে ফেলেছে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড (Manchester United)। ঐতিহ্যশালী এই ফুটবল ক্লাব আবারও আলোয় ফিরবে, এই আশাতেই বদল হয়েছে একের পর এক কোচ। অনেক তারকা গত কয়েক বছরে এসেছেন, গিয়েছেন। কিন্তু সাফল্য মুঠোয় ধরা দেয়নি রেড ডেভিলসের। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে অবশেষে আশার আলো দেখছেন ইউনাইটেড ফ্যানরা। কারণ, চলতি মরসুমে দলের দায়িত্ব পাওয়া ডাচ কোচ এরিক টেন হ্যাগ।
খেলার ধরণ আলাদা হলেও শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতায় ‘ফার্গি টাইম’ ফিরিয়ে এনেছেন টেন হ্যাগ। রেগে গিয়ে একবার ডেভিড বেকহ্যামকে জুতো ছুড়ে মেরেছিলেন ফার্গুসন। হাফ টাইমের পর ভ্রুর নীচে টেপ লাগিয়ে বেকহ্যামকে মাঠে নামতে দেখেছিলেন অনেকেই। ‘লাঠি ধারক মাষ্টারমশাই ‘ ফার্গুসনের মতোই ভীষণ রাগী না হলেও, খুব একটা কম যান না টেন হ্যাগ। বেশ কিছু বদল ইতিমধ্যেই তিনি নিয়ে এসেছেন টিমে, যা নিয়ে আলোচনা চলছে ইপিএলে। টিমের রাশ যে কোনও ভাবেই ছাড়তে চান না, এরিকের নানা সিদ্ধান্তেই তা প্রমাণিত। শুধু তাই নয়, টিম চালানোর ক্ষেত্রে তারকা প্রথাও মানেন না। সেই এরিক কী কী বদল এনেছেন, তাই তুলে ধরল TV9 Bangla।
ক্যাপ্টেন বদল: আগের কোচ অর্থাৎ ওলে সোল্কজায়ের টিমের দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ক্যাপ্টেন হয়েছিলেন ইংল্যান্ড তারকা হ্যারি ম্যাগুয়ের। কিছুদিনের মধ্যে তিনিই হয়ে ওঠেন দলের রক্ষণভাগে ‘ব্যর্থতার কান্ডারী’। দলের অনেক গোপন কথা সংবাদমাধ্যমের সামনে ফাঁস করার মতো গুরুতর অভিযোগের পরও স্রোতের বিপরীতে গিয়ে নিজের চাকরি সংকটে ফেলতে চাননি সোল্কজায়ের (Ole Gunnar Solskjær)। রাল্ফ রাগনিকও (Ralf Rangnick) ছিলেন তালিকাতেই। তবে ব্যতিক্রমী টেন হ্যাগ কোচ হওয়ার পরই ক্যাপ্টেন্সি তুলে দিয়েছেন পরিশ্রমী ব্রুনোর হাতে। এর সুফল দেখা গিয়েছে মাঠে। এই পরিবর্তনে যথেষ্ট খুশি হয়েছেন ফ্যানরা।
সময়ানুবর্তিতা: পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দলগুলির সঙ্গে লড়াই করতে হলে সময়ানুবর্তিতার কোনও বিকল্প নেই বলে মনে করেন টেন হ্যাগ। মরসুমের শুরুতেই তিনি জানিয়ে দেন প্র্যাক্টিস, টিম মিটিং বা মাঠে আসতে দেরি করলে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। নিজের ইচ্ছা মতো দেরি করে মাঠে আসার ধারা বেড়ে উঠেছিল সোল্কজায়েরের সময় থেকে। শোনা যায় সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেই নাকি কাউকে বেশি ঘাঁটাতেন না তিনি। তবে দেরি করে ‘স্কুলে’ রোনাল্ডো, র্যাশফোর্ডদের মতো ভালো ছাত্রদের ঢুকতে দিতে নারাজ ‘হেডমাস্টার’ টেন হ্যাগ।
নিয়মানুবর্তিতা: শোনা যায় মোরিনহোর আমলে চূড়ান্ত বেনিয়ম চালাতেন পল পোগবা। প্র্যাক্টিস হোক বা ম্যাচ, নিজের তালেই চলতে পছন্দ করতেন তিনি। এমন সংস্কৃতির বিরোধী টেন হ্যাগ তাঁর হিসেব মতোই দলের সকলকে চালাতে পছন্দ করেন। তাঁর আমলে নিয়মভঙ্গের শাস্তি পেতে হয়েছে স্বয়ং রোনাল্ডোকে। স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে না মেলায় তাঁর মতো প্লেয়ারদের টিমের বাইরে রাখতেও দ্বিধা করেননি।
পারস্পরিক বোঝাপড়ায় উন্নতি : খেলোয়াড়দের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার উন্নতির লক্ষ্যে কিছু ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এরিক। নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলার সুযোগ আরও বাড়ানোর জন্য ক্যাফেটেরিয়ায় মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন এরিক। এ ছাড়া ম্যাচের শেষে পরস্পরের সঙ্গে খেলা নিয়ে আলোচনার সময় দেন তিনি। সেই আলোচনা যদি সমালোচনায় বদলে যায় এবং সেটি ক্রমে কিঞ্চিৎ ঝগড়ায় পরিণত হয়, তাও মেনে নিতে রাজি ম্যান ইউ কোচ। তাঁর মতে, এর ফলে দলে সুস্থ প্রতিযোগিতা বাড়ে এবং আত্মসমালোচনার সুযোগ পাওয়া যায়।
খাবার ও ফিটনেস: ক্লাবের রান্নাঘরেও নাকি কর্তৃত্ব চলে টেন হ্যাগের। কোন খেলোয়াড় কী খাবার খাবেন, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেই খাদ্য তালিকা ঠিক করেন তিনি নিজেই। লুক শ এর মতো কিছু খেলোয়াড়দের চেহারা ও স্ফূর্তির পরিবর্তন চোখে পড়ার পর থেকেই এই বিষয়ে টেন হ্যাগের প্রশংসা করেছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা।
অনেক দিন পর নাকি এরিকের মতো দক্ষ কোচ এসেছেন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে। তাঁকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত ক্লাব কর্তৃপক্ষও। ফ্যানরাও আশা করছেন, এই নির্দয় নিয়মানুবর্তিতা আবারও ফিরিয়ে আনবে সেই অতি পরিচিত ‘glory glory Man United’!





