Climate Change: 150 দিন পর পরই তাপপ্রবাহের কবলে পড়বে কলকাতা, বিপদঘণ্টি বেজে গেল?
IPCC Report 2023: বিশেষজ্ঞদের মতে, কলকাতার তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে নগরায়ন ও শিল্পায়নের হাত আছে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হল 80% এর বেশি উষ্ণতা শহরের মধ্যেই তৈরি হয়। আর তার সবটাই সৃষ্টি হয় কলকারখানার দ্বারা।

গরমে হাঁসফাঁস করতে করতে অনেকের মুখেই এই কথা শোনা যায়, ‘উফ! দিনের পর দিন যেন গরমটা বেড়েই চলেছে।’ এই গরম ঠিক কতটা বেড়েছে এবার তারই হিসেব দিয়েছে IPCC (Intergovernmental Panel on Climate Change)। 1950 থেকে 2018 সালের মধ্যে কলকাতার বার্ষিক গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ 2.6 ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি হয়েছে। শুনেই চমকে গেলেন তো? সাম্প্রতিক IPCC রিপোর্টে এমনই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। ভবিষ্যৎ যে তাহলে কতটা ভয়ানক হতে চলেছে, তা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা থাকে না। The Times Of India-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেল রিপোর্টে এই পরিমাণ তারপাত্রা বৃদ্ধির কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কলকাতায় ঠিক যখন থেকে শিল্পের রমরমা দেখা গিয়েছিল, অর্থাৎ 1850 থেকে 1900-এর সময়টা। এই শতাব্দীর শেষের দিকে 4.5 ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছিল।
The Times Of India-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, 2023 সালে যে পরিমান তাপমাত্রা বেড়েছিল, তা আগে কখনও হয়নি। অর্থাৎ গত কয়েক বছরে এমন গরম পড়েনি কোলকাতায়। শহরটিতে চলতি বছরের জুন মাসে যে পরিমাণ গরম পড়েছিল, তা গত 50 বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম। 8 জুন, কলকাতার তাপমাত্রা ছিল 31.2 ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই এই জুনের গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল 28 ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিশেষজ্ঞদের মতে, 1969 সালের পর থেকে এমনটা হয়নি। তাই এবারের জুনের তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। অর্থাৎ একবার ভেবে দেখুন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যদি 28 ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তাহলে ভবিষ্যতে শহরটির পরিণতি কী হবে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে আসল কারণ কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কলকাতার তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে নগরায়ন ও শিল্পায়নের হাত আছে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হল 80% এর বেশি উষ্ণতা শহরের মধ্যেই তৈরি হয়। আর তার সবটাই সৃষ্টি হয় কলকারখানার দ্বারা। উচ্চ আর্দ্রতার কারণে, চলতি বছরের জুনে তাপমাত্রা 50 ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ছিল। IPCC রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান শতাব্দীর শেষে প্রতি বছর 150 দিন পর পর কলকাতা 35 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার কবলে পড়বে। এমনকি কখনও সেই তাপমাত্রা তার থেকেই বেশি হতে পারে। ঘন ঘন তাপপ্রবাহ হবে। ফলে শহরে গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে চলেছে বলে অনুমান করছে বিশেষজ্ঞরা।

পরিনাম কী হবে?
The Times Of India-র প্রতিবেদনে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, কলকাতা এবং এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সামান্য বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে চরম-বৃষ্টির ঘটনা দিনের পর দিন আরও বৃদ্ধি পাবে। কলকাতার প্রায় 100 কিলোমিটার দক্ষিণে সুন্দরবনের কাছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবে। এই শতাব্দীর শেষের দিকে প্রায় 60 সেন্টিমিটার বাড়তে পারে বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থাৎ বন্যা থেকে শুরু করে সাইক্লোন, সব কিছু কবলে পড়বে শহরটি। সুপার সাইক্লোন (221 কিমি/ঘণ্টা কিংবা তার বেশি) দেখা যাবে সুন্দরবনে। ফলে তা কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতে বিরাট প্রভাব ফেলবে।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শহরের তাপমাত্রার পারদ। বারংবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। পরিবেশ ধ্বংস বন্ধ না হলে, নগরায়ণের নামে বৃক্ষছেদন বন্ধ না হলে, কৃত্রিম জলাধার তৈরি করে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ না করলে মহাবিপদ যে খুব একটা দূরে নেই, তা বেশ স্পষ্ট। তখন শুধু শহর কলকাতা নয়, বিপদের ঘনঘটা তৈরি হবে শহর সংলগ্ন সব জেলাতেও।
