AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Bangladesh Student Protesters: বাংলাদেশ কার? রাজাকার না মুক্তিযোদ্ধার? ‘নাতিদের কোটা’, রক্তাক্ত দেশ—চাকা ঘোরাচ্ছে বাংলাদেশ?

Bangladesh Student Protesters: বাংলাদেশ কার? রাজাকার না মুক্তিযোদ্ধার? ‘নাতিদের কোটা’, রক্তাক্ত দেশ—চাকা ঘোরাচ্ছে বাংলাদেশ?

আসাদ মল্লিক

|

Updated on: Jul 19, 2024 | 8:38 PM

Share

Bangladesh Quota Andolon: মোক্ষম সময়ে মোক্ষম প্রশ্নটাই করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্ম কোটার সুযোগ পাবেন কিনা, সেটা আদালত ঠিক করবে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন কেন? বিশ্বাস করুন, বা নাই করুন...

‘নাতিদের কোটা’ নিয়ে ছোট্ট একটা ইউটিউব ভিডিও। তিন মাস আগে ভিডিওটা পোস্ট করেছিলেন ইউসুফ বাবুন নামে বাংলাদেশের এক ইউটিউবার। সেখানেই তিনি এই নাতিদের কোটা লাইনটা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনের অন্য নাম এখন নাতিদের কোটা। নাতিদের কোটা বিষয়টা কী? মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থাকতে ছয় দশক আগে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ চালু হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা এখনও সেই কোটার সুবিধা ভোগ করছেন ও সেই সুবিধা তাঁরা ছাড়তেও চান না। আন্দোলনকারীদের অন্তত তেমনই অভিযোগ। তাঁদের দাবি, এখন যাঁরা কোটার সুবিধা পাচ্ছেন, তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্মাননি। অথচ তাঁরা সুবিধা নিয়ে যাচ্ছেন। আর শেখ হাসিনা সরকারও এনিয়ে হাত-পা গুটিয়ে। নাতিদের কোটা বলে গান বেঁধে ভিডিও করেছিলেন ইউসুফ বাবুন। বাংলাদেশে সংরক্ষণ বা কোটা নীতির প্রতিবাদে সেই ভিডিরও তিন মাসের মাথায় আজ কার্যত গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ। বাবুনের ভিডিওকে সামনে রেখে কোটার প্রতিবাদে রাস্তায় হাজার হাজার কলেজপড়ুয়া, চাকরি প্রার্থী। আন্দোলনে হিংসা ছড়াল। এখন যেটা চলছে সেটা মানুষ বনাম প্রশাসনের যুদ্ধ। কেউ বলছে সংঘর্ষে অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। কারোর দাবি মৃতের সংখ্যা ৪২ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ বা RAB-র সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষেই এতকিছু। মুক্তিযুদ্ধের পর এমন ছবি আর কখনও দেখেনি বাংলাদেশ। গোটা দেশ যেন দু-ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। যেন দুই প্রবল প্রতিপক্ষ একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছে। যেন বহুদিনের জমানো ক্ষোভ, রাগ ও ঘৃণা বেরিয়ে আসছে। ঠিক মুক্তিযুদ্ধের সময়েও যেমন হয়েছিল। কখনও ঢাকায় সংঘর্ষ হচ্ছে, পরক্ষণেই চট্টগ্রাম বা অন্য কোনও শহরে ছড়িয়ে পড়ছে সংঘর্ষের রেশ। বাংলাদেশ সরকারের দাবি, এখনও পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধে থেকে আজ রাত ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পুলিশ অন্তত ৪ বার গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ। মৃতদের অধিকাংশই ছাত্র ও চাকরিপ্রার্থী। দেশের অধিকাংশ বড় শহরে ইন্টারনেট বন্ধ। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। ক্যাম্পাসে ঢোকার ক্ষেত্রে একাধিক বিধিনিষেধ। এমনকি বাংলাদেশের একটি টিভি চ্যানেলে ঢুকে জোর করে সম্প্রচার বন্ধ করারও অভিযোগ উঠছে। শেখ হাসিনা প্রশাসন গতকালই আন্দোলনকারীদের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিল। আন্দোলনকারীরা মানেননি। তাঁদের বক্তব্য, লাশের উপর দিয়ে কোনও আলোচনাই হয় না। আগে ইন্টারনেট চালু করতে হবে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে হবে। কোটানীতি বদলে লিখিত গ্যারান্টি দিতে হবে। বাংলাদেশে সংসদের অধিবেশন ডাকতে হবে। সেটা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থামবে না। মুশকিল হল বিষয়টা প্রশাসনিক হলেও সেটা এখন রাজনৈতিক চেহারা নিয়েছে। শাসকদল আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলন দমনের নামে তাণ্ডব চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকারও করতে পারছে না শেখ হাসিনা প্রশাসন। বাংলাদেশের কোটা বা সংরক্ষণ নীতিটা ঠিক কীরকম? খোঁজখবর নিয়ে যেটা দেখলাম, তা চোখ কপালে তোলার মতো। এমন নয় যে বাংলাদেশ সরকার দেশের কোটা নীতির সংস্কারের চেষ্টা করেনি। সে চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তার পর বিষয়টা আদালতে চলে যায়।

মোক্ষম সময়ে মোক্ষম প্রশ্নটাই করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্ম কোটার সুযোগ পাবেন কিনা, সেটা আদালত ঠিক করবে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন কেন? বিশ্বাস করুন, বা নাই করুন। বাংলাদেশের কোটা আন্দোলনে এখন রাজাকারদের নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছেন আন্দোলনকারীদের একটি অংশ। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমেই আমরা সেই খবর পাচ্ছি। ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। রাজাকারদের নামে জয়ধ্বনি? যে রাজাকাররা ৩০ লক্ষ বাঙালিকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। তত্‍কালীন পূর্ব পাকিস্তানে লাগাতার জেনোসাইড চালিয়েছিল। হাজারে হাজারে মহিলাকে ধর্ষণ করে, প্রকাশ্যে খুন করেছিল। তাদের নামে জয়ধ্বনি? আন্দোলন আন্দোলনের জায়গায়। সে নিয়ে আমাদের কিছু বলার থাকতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ, রাজাকারদের নিয়ে কথা উঠলে ভারত তার বাইরে থাকতে পারে না। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটা পাতায় ভারতীয় সেনার রক্ত, আত্মত্যাগ মিশে রয়েছে। দুনিয়ার কেউ, কোনও আন্দোলন এই সত্য অস্বীকার করতে পারবে না। আন্দোলনকারীরা কি ইতিহাসের চাকা পিছন দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছেন? যদি করেন তাঁর পরিণতি কিন্তু ভয়ঙ্কর। বাংলাদেশের এক খ্যাতনামা সাংবাদিক আমাকে বললেন, আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠছে। এর চেয়ে দূর্ভাগ্যজনক আর কিছুই হতে পারে না। তবে অনির্বাণবাবু, আন্দোলনকারীদের মধ্যে মাত্র কয়েকশো জন হয়তো এই হঠকারিতা করছে। আসলে ওরা ইতিহাসটাই জানে না। চলুন সেই ইতিহাসকেই একবার ফিরে দেখি।