Balurghat: অসুস্থ এক যুবতীকে ঘিরে গ্রামে রটে গেল গুঞ্জন, কুসংস্কার শিকার তিন পরিবার
Balurghat: আক্রান্ত পরিবারের প্রধান বছর ষাটেকের সুনীল কিস্কুর জীবনে অন্ধকার সপ্তমীর দিন থেকে নেমে এসেছে। ওইদিন পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে দাশাই নাচ দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় জুয়েল সরেন নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ তোলেন সুনীলের কারণেই তাঁর মেয়ে অসুস্থ হয়েছে।

বালুরঘাট: কুসংস্কারের শিকার তিন পরিবার। অসুস্থ এক যুবতীকে ঘিরে গ্রামের তিন পরিবারকে ডাইনি অপবাদে এক ঘরে করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে বালুরঘাট ব্লকের অমৃতখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোহিনী আদিবাসী পাড়ায়। অভিযোগ, সেই অপবাদের জেরে নয়দিন ধরে একঘরে করে রাখা হয়েছে তিনটি পরিবারকে। শুধু তাই নয়, ভয় দেখিয়ে আদায় করা হয়েছে ২ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। অবশেষে মঙ্গলবার রাতে বালুরঘাট থানায় আটজনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সুনীল কিস্কু। পুলিশ ইতিমধ্যেই সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করেছে। এদিকে কুসংস্কার রুখতে এলাকায় সচেতনতা শিবির করার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা পুলিশ ও প্রশাসন।
জানা গিয়েছে, আক্রান্ত পরিবারের প্রধান বছর ষাটেকের সুনীল কিস্কুর জীবনে অন্ধকার সপ্তমীর দিন থেকে নেমে এসেছে। ওইদিন পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে দাশাই নাচ দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় জুয়েল সরেন নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ তোলেন সুনীলের কারণেই তাঁর মেয়ে অসুস্থ হয়েছে। তখনই গ্রামের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ডাইন অপবাদ। প্রথমে বিষয়টি হালকাভাবে নিলেও, লক্ষ্মীপুজোর পরই শুরু হয় আসল বিপদ। ৭ অক্টোবর গ্রামের মাতব্বররা অসুস্থ মেয়ের পরিবার এবং সুনীল কিস্কুর পরিবারকে নিয়ে যান বিহারের এক ওঝার কাছে। সেখানে ওঝা নাকি ঘোষণা করে বসেন, “সুনীল কিস্কু ডাইন।” তার পরদিনই গ্রামে বসে সালিশি। সেখানে সুনীলকে দোষী ঘোষণা করা হয়। বলা হয়, অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার খরচ বাবদ দিতে হবে দেড় লক্ষ টাকা দিতে হবে। টানা না দিলে মারধর করা হবে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শেষমেশ জমি বন্ধক রেখে গ্রামের মোড়ল সুনীল হেমব্রমের হাতে দেড় লক্ষ টাকা তুলে দেন তিনি। কিন্তু এখানেই শেষ নয়।
১০ অক্টোবর আবারও তাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় বিহারের ওই ওঝার কাছে। সেখানেও চলে ডাইন তাড়ানোর নাম করে ভয় দেখানো ও টাকা আদায়। দ্বিতীয়বারে নেওয়া হয় ৮৫ হাজার টাকা। এরপর ওঝা নিদান দেয় তিন পরিবারকে সাতদিন নিরামিষ খেতে হবে। গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে বা মারা গেলে তার দায় নিতে হবে তাদেরই। এমনকি অসুস্থ মেয়েটি মারা গেলে ডাইন সুনীল কিস্কুকে পিটিয়ে মারার হুমকিও দেওয়া হয়।
গত ৭ অক্টোবর থেকে এখনও পর্যন্ত একঘরে অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে ওই তিন পরিবার। ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জেলার আদিবাসী মুখ তথা ডিপিএসসি চেয়ারম্যান সন্তোষ হাঁসদা। তাঁর বক্তব্য, ডাইন বলে কিছু নেই। এটি একেবারেই কুসংস্কার। যারা এই ধরনের কাজ করছে, তারা অপরাধ করছে। গ্রামে গ্রামে সচেতনতা গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। গ্রামে এখনো ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ। গ্রামের তিন পরিবার আজও সমাজচ্যুত হয়ে পড়ে আছে।
