সিঙ্গুরে হাওয়া পাল্টানোর আশঙ্কা করেই কি পদ্মাসনে মাস্টারমশাই?

সিঙ্গুরে শিল্পের আওয়াজ, বদলের সুর, পরিবর্তনের হাওয়া টের পেয়েই বিজেপিতে গেলেন চারবারের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath Bhattacharjee)?

সিঙ্গুরে হাওয়া পাল্টানোর আশঙ্কা করেই কি পদ্মাসনে মাস্টারমশাই?
ফাইল ফটো
Follow Us:
| Updated on: Mar 09, 2021 | 11:48 PM

হুগলি: ধানজমির ওপর টাটাদের কারখানার শেডটা আর নেই। যেমন নেই আর ভাল চাষের আশাও। তাই, বিধানসভা ভোটের আগে এইবার শিল্প চাইছে সিঙ্গুর। যাঁরা স্বেচ্ছায় জমি দেন তাঁরা তো বটেই, যাঁরা দেননি তাঁরাও চাইছেন শিল্প হোক। এদিকে হুগলিজুড়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে বারবার। সিঙ্গুরে শিল্পের আওয়াজ, বদলের সুর। চাষে আটকে না থেকে শিল্পর দাবিতে ভোটে যাচ্ছে সিঙ্গুর। তৃণমূল বিরোধী সেই হাওয়া কি টের পেয়েছেন চারবারের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ? সেই দেওয়াল লিখন আগাম আঁচ করেই কি তৃণমূল ছাড়লেন অশীতিপর মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য? তাই ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মে যোগ দিলেন? সোমবার থেকে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।

সিঙ্গুর আন্দোলন ভিত তৈরি করেছিল। আর নন্দীগ্রাম আন্দোলন তা মজবুত করেছিল। মূলত এই দুই জমি রক্ষার আন্দোলনের উপর ভর করে ৩৪ বছরের বাম দূর্গে ফাটল ধরিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১ সালে সরকার তৈরির পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য তাঁর প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষিরা তাঁদের জমি ফেরত পেয়েছেন। কিন্তু কারখানার জন্য যে জমিতে নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল, সে জমি তো আর চাষযোগ্য নেই। চাষ হচ্ছে নামমাত্র। তাই একুশের নির্বাচনের আগে সিঙ্গুরে কৃষি-ভিত্তিক শিল্প তৈরির ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, সিঙ্গুর চাইছে বড় শিল্প।

এই পরিস্থিতির মধ্যে হুগলিতে তৃণমূল সংগঠনকেও কেমন ছন্নছাড়া দেখিয়েছে। সিঙ্গুর আন্দোলনে মমতার দুই নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হরিপালের বিদায়ী বিধায়ক বেচারাম মান্না ও সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বারবার নিজেদের মধ্যে ঝামেলায় জড়িয়েছেন। এক সময় খোদ মুখ্যমন্ত্রীও হস্তক্ষেপ করেছিলেন, বেচারামকে বলেছিলেন মাস্টারমশাইকে মেনে চলতে। এদিকে বেচারামও কম যাননি। মাস কয়েক আগে বিধায়ক পদত্যাগ দিতে উদ্যত হনয যদিও সুব্রত বক্সির ‘বকুনি’তে তা প্রত্যাহার করেন। তারপরও বেচারাম মান্নার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের ছেলে বিজেপিমুখী হয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে একুশের ভোটে বেচারামকে সিঙ্গুরে নিয়ে এসে হরিপালে তাঁর স্ত্রী করবী মান্নাকে টিকিট দিয়েছেন মমতা। আর মুখ্যমন্ত্রীর তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন মাস্টারমশাই। তারপর সোমবারই গেরুয়া পতাকে তুলে নিয়েছেন ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে ২০ হাজার ভোটে জিতে চতুর্থবারের জন্য সিঙ্গুরের বিধায়ক হওয়া রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।

আরও পড়ুন:‘হীরকের দুটি ফুল বিজেপি ও তৃণমূল’, মিমে দুই শিবিরকে তীব্র ব্যঙ্গ সিপিএমের

২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে, সিঙ্গুর বিধানসভা আসনে, সাড়ে ১০ হাজার ভোটে এগিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। এদিকে বেচারাম মান্নার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের যে বনে না, তা সিঙ্গুরে সবার জানা। এই বার বেচারামকে সিঙ্গুরে নিয়ে এসে হরিপালে তাঁর স্ত্রী করবী মান্নাকে টিকিট দিয়ে আসলে মাস্টারমশাইকে যেন জোর করে বিজেপির দিকে তাঁকে ঠেলে দেওয়া বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তৃণমূলের পক্ষে ভালো হল কিনা, তা জানা যাবে ২ মে। তবে, সিঙ্গুরের মাটিতে যেভাবে শিল্পের আওয়াজ উঠতে শুরু করেছে, তাতে লড়াইটা ঘাসফুল শিবিরের পক্ষে সহজ হবে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।