দিল্লির ‘পাওয়ার বৈঠকে’ ডাক পাননি, ‘পিকে আমাদের ভাগ্যবিধাতা নন’, কটাক্ষ অধীরের

মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি স্পষ্টই জানান, নয়াদিল্লিতে পি কে-র বৈঠকের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।

দিল্লির 'পাওয়ার বৈঠকে' ডাক পাননি, 'পিকে আমাদের ভাগ্যবিধাতা নন', কটাক্ষ অধীরের
'মোদীর এজেন্ট পিকে', কটাক্ষ অধীরের নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 22, 2021 | 6:37 PM

মুর্শিদাবাদ: একই মাসের মধ্যেই দ্বিতীয় বার ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (NCP)  প্রধান শরদ পওয়ারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর। বঙ্গে ভোট মিটতেই নজর ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচনে। বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলির একজোট হয়ে তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ার দাবিতেই এই পিকে-পাওয়ার বৈঠক বলে ইতিমধ্যেই জোর জল্পনা শুরু হয়েছিল জাতীয় রাজনীতিতে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে,  সোমবারের সেই বৈঠকের পর ফের মঙ্গলবার বিজেপি (BJP) বিরোধী রাজনতিক দলগুলিকে নিয়ে বৈঠকের আহ্বান করেছেন শরদ পাওয়ার ও বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রাক্তন বিজেপি নেতা যশোবন্ত সিনহা। আর এতেই ‘তৃতীয় ফ্রন্ট’ গড়ার জল্পনায় সিলমোহর দিয়ে দেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যদিও, যশোবন্ত সিনহারা সেই জল্পনায় জল ঢেলে জানিয়েছেন এটি রাষ্ট্রমঞ্চের বৈঠক। আর সেই বৈঠক নিয়েই এ বার বিস্ফোরক দাবি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর।

মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে প্রদেশ কংগ্রেস (Congress) সভাপতি স্পষ্টই জানান, নয়াদিল্লিতে পি কে-র বৈঠকের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতার কথায়, “পিকে দিল্লিতে কাকে নিয়ে বৈঠক করবেন, তা নিয়ে আমাদের চিন্তা করার কিছু নেই। ওঁ কার সঙ্গে বৈঠক করবেন তা ওঁর ব্য়াপার। প্রশান্ত কিশোর আমাদের ভাগ্যবিধাতা নন। আমাদের জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এমন কোনও নির্দেশ আসেনি। শরদ পাওয়ার কী করবেন তা ওঁর ব্যাপার। সে বিষয়ে কিছু বলার নেই।” সূত্রের খবর, এই  বৈঠকে কংগ্রেসের কাছে ‘সেভাবে’ আমন্ত্রণ পৌঁছয়নি। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাঁর অনুপস্থিতি নজর কেড়েছে রাজনৈতিক মহলের।

অন্যদিকে, বাংলায় সিপিএম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট ভাঙনের পথে। সম্প্রতি, কংগ্রেস নেতা অধীর জানিয়েছন, আইএসএফের সঙ্গে কোনও জোট নেই কংগ্রেসের। বহরমপুরের সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “মুর্শিদাবাদ জেলাতে আইএসএফ আমাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিল। তাই ওদের সঙ্গে জোট আমাদের আগেও ছিল না। আগামী দিনেও থাকবে না।” তবে, পুর নির্বাচনে সিপিএমের সঙ্গেই লড়াই হবে সেই কথা স্পষ্টই জানিয়ে দেন কংগ্রেস নেতা। পাশাপাশি, বিজেপির বিরুদ্ধেও তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন অধীর।

উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি করেছে বিজেপি শিবির। সে প্রসঙ্গে অধীর চৌধুরী বলেন, “বাংলা বিভাজন চাইছে বিজেপি। উত্তর প্রদেশেও হিন্দু-মুসলিম ভাগ করতে চেয়েছে বিজেপি। এটা ওদের অ্যাজেন্ডা। আমি আশঙ্কা করছি, বাংলাতেও ওরা আর্টিকল থ্রি চালু করতে পারে। বিজেপি এখন ভয় পাচ্ছে। কারণ, ওরা বুঝে গিয়েছে, ২০২৪-এ আর মোদীর ক্যারিশমা চলবে না। বিজেপির আসল লক্ষ্য হল মুসলিমদের আলাদা করে দেওয়া। আমরা হেরে যেতে পারি, তবে বঙ্গভঙ্গের অপচেষ্টাকে সার্বিকভাবে মোকাবিলা করতে আমরা প্রস্তুত।”

এদিন, আলাপন বন্দ্য়োপাধ্যায়কে ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য দ্বৈরথ নিয়েও মুখ খোলেন অধীর। স্পষ্টই জানান, “আমাদের দেশে ব্যুরোক্রেসির একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আলাপনবাবুর বিরুদ্ধে যদি কোনও পদক্ষেপ করতেই হয়, তবে আইনি পদক্ষেপ করা বাঞ্চনীয়। দিল্লি যা করছে তা আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় বলেই মনে হয়। কেন্দ্র আর রাজ্যের এই ক্ষমতা দেখানোর লড়াই কাম্য নয়।” উল্লেখ্য়, সদ্য় প্রাক্তন রাজ্য মুখ্যসচিব  আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Alapan Banerjee) ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য় সংঘাত তৈরি হয়েছিল আগেই। ইয়াস বিপর্যয়ের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপনের অনুপস্থিতি-সহ, কর্মিবর্গ মন্ত্রকের নির্দেশে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে যোগ না দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে নিজের অবস্থান লিখিতভাবে স্পষ্ট করতে হয়েছিল তাঁকে। ফের একবার, কর্মিবর্গ মন্ত্রকের তরফে চিঠি দেওয়া হয়েছে আলাপনকে। বিভাগীয় তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে প্রস্তুত করা হয়েছে ‘চার্জশিট’ও। চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে লিখিতভাবে বা সশরীরে ওই সব ‘চার্জ’ নিয়ে বক্তব্য রাখতে হবে আলাপনকে। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের একবার ‘সম্মুখ সমরে’ কেন্দ্র ও রাজ্য বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

আরও পড়ুন: ‘পাগলে কী না বলে’, ‘বিজেপির মুখপাত্র’ রাজ্যপাল, তোপ তৃণমূলের