রাস্তায় আস্ত দু’টো বাড়ি ঢুকে যাবে! সামনেই ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ খুঁটি, আতঙ্কে রানিগঞ্জবাসী

Accident: বুধবার বিকেলে বৃষ্টির পরেই, রানিগঞ্জের ওই ব্যস্ত রাস্তার ধারে পুরনো বালি-বাঙ্কার সংলগ্ন ময়দানে প্রায় ২০০ বর্গ ফুট এলাকা জুড়ে ধস নামে। যার জেরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়।

রাস্তায় আস্ত দু'টো বাড়ি ঢুকে যাবে! সামনেই ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ খুঁটি, আতঙ্কে রানিগঞ্জবাসী
রানিগঞ্জে ধস, নিজস্ব ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 26, 2021 | 4:31 PM

পশ্চিম বর্ধমান: ব্যস্তসমস্ত রাস্তার ধারে প্রায় ২০০ বর্গফুট এলাকা জুড়ে নামল ধস। কাছেই রয়েছে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের খুঁটি ও বিদ্যুত্‍ পরিবাহী তারের সংযোগ। যতটা এলাকাজুড়ে ধস নেমেছে তাতে গোটা দুটো বাড়ি ঢুকে যেতে পারে! যেকোনও মুহূর্তেই ঘটতে পারে বড় বিপদ। রানিগঞ্জের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাহেব কুঠি লাগোয়া রাস্তার এমনই বেহাল দশা। অভিযোগ, অবৈধ কয়লা খনির কারণেই এমন দুর্ঘটনা।

বুধবার বিকেলে বৃষ্টির পরেই, রানিগঞ্জের ওই ব্যস্ত রাস্তার ধারে পুরনো বালি-বাঙ্কার সংলগ্ন ময়দানে প্রায় ২০০ বর্গ ফুট এলাকা জুড়ে ধস নামে। যার জেরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ধস সংলগ্ন এলাকাতেই রয়েছে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুত্‍খুঁটি। কাছ থেকেই গিয়েছে  বিদ্যুত্‍ পরিবাহী তারও। ধস নামায় এলাকার ব্যস্ত সড়কের নীচ থেকে সরে গিয়েছে মাটি। অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ ওই এলাকায় এইভাবে ধস নামায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তাঁদের অভিযোগ, বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও এর কোনও সুবিধা হয়নি।

পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান শিল্পনগরীর যত্রতত্র খনি তৈরির ধূমে রাস্তার হাল বেহাল। একটানা বৃষ্টি হলেই ধস নেমে সরে যায় মাটি। টানা কয়েক দিন বৃষ্টি হলেই মাথায় হাত পড়ে আমজনতার। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, “গোটা এলাকাটাই খুঁড়ে খুঁড়ে শেষ করে দিল। যেখানে সেখানে অবৈধভাবে খনি তৈরি করার জেরে রাস্তা আর চাপ নিতে পারে না। একটু বৃষ্টি হলেই সব ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়। আমরা প্রাণ হাতে নিয়ে বাস করি। কোনওদিন গোটা এলাকাটাই ধসে পড়তে পারে।”

ধস নামার ঘটনায় চিন্তায় জেলা প্রশাসনও। ঘটনায়, মহাবীর খনি সংলগ্ন ইসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে খবর গেলে ইসিএলের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে এসে হাজির হন। ডেপুটি ম্যানেজার অক্ষয় কুমার বলেন,  “ধস কবলিত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ডোজিং করা হবে।” ব্রিটিশ আমলের বালি ব্যাঙ্কারের মাটি আলগা হওয়াতেই এই ঘটনা বলে দাবি দাবি খনির ম্যানেজারের। যদিও, কয়লা খনিটি আদৌ বৈধ কি না তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন ইসিএল অধিকর্তারা। শুধু তাই নয়, আচমকা এই ধরনের ধস নামলে খনি শ্রমিকদেরও বড় বিপদ হতে পারে।

রানিগঞ্জের কয়লাখনি অঞ্চলটি প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো। খনিসংলগ্ন গ্রামের পথে দেখা যায় কয়লা পরিবহনের জন্য দু’রকম ব্যবস্থা। একটি, বড় বড় আধুনিক ডাম্পারের কয়লা নিয়ে যাওয়া হয় রেল ইয়ার্ডের দিকে। অন্যটি হল খনিশ্রমিকদের মাধ্যমে। মাটির অনেক গভীরে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ খনি থেকে কয়লা যেমন তোলা হয়, তেমনই খোলামুখ খনি থেকেও তোলা হয়। ১০০-২০০ ফুট মাটি সরিয়ে কয়লার স্তরের একটা অংশ উন্মুক্ত করা হয়। আসানসোল-রানিগঞ্জের অনেক আন্ডারগ্রাউন্ড বা ভূগর্ভস্তরীয় খনিই এখন পরিত্যক্ত। তবে তাতে কিছু পরিমাণ কয়লা রয়েছে। কয়লার স্তর আংশিক কেটে বাকিটা স্তম্ভের মতো রেখে দেওয়া হয়। ভূস্তরের ভার ধরে রাখতেই এমন ব্যবস্থা। এইভাবে একাধিক স্তর থাকে। সব স্তর শেষ হলে খননকার্যও শেষ হয়।

দুই শতাব্দী ধরে আসানসোল রানিগঞ্জের ভূগর্ভে এ রকম ফাঁপা অসংখ্য খোপ তৈরি হয়েছে। কিছুটা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে হলেও অধিকাংশই অবৈজ্ঞানিক ভাবে তৈরি হয়েছে। মাটি ধসে যাওয়া ও পুরনো খনিতে আগুন লাগা রোজকার সমস্যা। কয়েকটি নির্দিষ্ট জায়গায় খোপ বুজিয়ে ফেলতে  বালি ফেলা হয় সরকার-অধিগৃহীত ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিডেট বা ইসিএল-এর উদ্যোগে। বুধবারের ধস নামার ঘটনায় তেমনই পদক্ষেপ করা হতে পারে বলে খবর ইসিএল সূত্রে। আরও পড়ুন: বেছে বেছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে নাম! তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে সরব দল-ই