Rice Price Hike: দু’বেলা পেটে ভাত জোটাতে হিমশিম মধ্যবিত্ত, কেন বাড়ছে চালের দাম?

Price of Rice is raising significantly : লাগাতার বৃষ্টির জেরেই কি এই দাম বৃদ্ধি? নাকি এর সঙ্গে রয়েছে মধ্যসত্ত্বাভোগীদের কোনও প্রভাব? ঠিক কী কারণে বাড়ছে চালের দাম? সরেজমিনে খোঁজখবর নিল TV9 বাংলা।

Rice Price Hike: দু'বেলা পেটে ভাত জোটাতে হিমশিম মধ্যবিত্ত, কেন বাড়ছে চালের দাম?
বাড়ছে চালের দাম (প্রতীকী ছবি)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 23, 2022 | 9:08 PM

কলকাতা : এ যেন চালের দামে বেচাল। আক্ষরিক অর্থেই যেন দিন দিন তাই হয়ে উঠছে। নতুন চাল বাজারে আসার আগেই দাম বাড়ছে। ফলে তার সরাসরি প্রভাব পড়ছে বাজারেও। দেখা যাচ্ছে প্রতি কেজি চালের দাম অন্তত ৫-১০ টাকা করে বেড়েছে। আর এ ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুতর যে অভিযোগটি উঠছে, তা রাইস মিলের মালিকদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠছে, মিল মালিকরাই দাম বাড়িয়ে রেখেছেন চালে। অন্যদিকে বিভিন্ন রাইস মিল মালিকদের দাবি, মিলগুলির অবস্থা অত্যন্ত করুন। এই পরিস্থিতি থেকে কবে রেহাই মিলবে? চালের এই আগুন দাম কমবে কবে? হেঁশেলের চাপ সামাল দিতে এই চিন্তাতেই এখন নাজেহাল মধ্যবিত্ত। তাদের আশা প্রশাসন হয়ত এবার একটা ব্যবস্থা নেবে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম।  মিনিকেট, রত্ন, লাল স্বর্ণ, খাস চাল সব সব চালের দামই বেড়েছে। কিন্তু এর পিছনে কারণ কী? লাগাতার বৃষ্টির জেরেই কি এই দাম বৃদ্ধি? নাকি এর সঙ্গে রয়েছে মধ্যসত্ত্বাভোগীদের কোনও প্রভাব? ঠিক কী কারণে বাড়ছে চালের দাম? সরেজমিনে খোঁজখবর নিল TV9 বাংলা।

শস্যগোলা বর্ধমানে চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্রমেই ক্ষোভ জমছে সাধারণ মানুষের। এভাবে চালের দাম বাড়তে থাকলে খাব কি? প্রশ্ন উঠছে মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের মনে। বর্ধমানের বাজার ঘুরে দেখা গেল সবথেকে বেশি বেড়েছে মিনিকেট চালের। আগে মিনিকেটের দাম ছিল প্রতি কেজি ৩৮-৪২ টাকা। এখন সেটা হয়েছে কেজি পিছু ৪৮-৫০ টাকা। প্রতি কেজিতে খাস চালের দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। আগে খাস চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৮০ টাকা। এখন দাম বেড়ে হয়েছে ৯৫-১০০ টাকা প্রতি কেজি।

২০২০ সালের শুরুতে কেজি পিছু মিনিকেট চালের দাম ছিল ৩৬-৩৮ টাকা, খাস চালের দাম ছিল ৬০-৬৪ টাকা, লাল স্বর্ণ চাল ছিল ২০-২২ টাকা, ছত্রিশ চালের দাম ছিল ২৪-২৬ টাকা। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দাম সামান্য বেড়ে এই মিনিকেট চালের চালের দাম দাঁড়ায় ৩৮-৪২ টাকায়, খাস চাল হয় ৬৮-৭০ টাকা, লাল স্বর্ণ ২৩-২৪ টাকা, ছত্রিশ চাল ২৭-২৮ টাকা।

একই ছবি বাঁকুড়াতেও। চাল কিনতে গিয়ে পকেটে ছ্যাঁকা লাগছে বাঁকুড়ার মধ্যবিত্তদের। বাঁকুড়ার গৃহকর্ত্রীদের মুখে মুখেও এখন একটাই কথা, “চালের দামটা এভাবে হঠাৎ বেড়ে গেল আমরা খাব কীভাবে? যে চালের দাম ছিল ৩৫ টাকা, সেটা এখন ৪০ টাকা হয়েছে। সব জিনিসেরই দাম বাড়ছে। সবজির দাম অতিরিক্ত বেড়েছে। আবার সেই সঙ্গে চালটারও দাম অনেক বেড়ে গিয়েছে। আমরা কী খাব?”

খাস কলকাতাতেও চালের দাম এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়েছে। গৃহকর্ত্রীদের কথায়, আগে যে চাল আমরা ৪০ টাকা ৪৫ টাকায় খাচ্ছিলাম, এখন তার দাম ৫২-৫৪ টাকা হয়ে গিয়েছে। প্রায় ১৫-২০ টাকা করে বেড়ে গিয়েছে চালের দাম। কিন্তু ভাত যে খেতেই হবে। কথায় আছে, মাছে-ভাতে বাঙালি। তাই রোজ পাতে মাছ না হলেও, ভাত ‘মাস্ট’। তাই দাম বাড়লেও তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হচ্ছে মধ্যবিত্ত বাঙালিদের।

চাষিরা বলছেন, থেকে থেকে এই অকাল বৃষ্টিই কাল হয়েছে। বার বার বৃষ্টিতে মাঠেই পচেছে ফসল। কোথাও কোথাও আবার ধানের থেকে অঙ্কুরও বেরিয়ে গিয়েছে। অনেক জায়গাতে ঘরেই ওঠেনি মাঠের ধান। ফলে জোগানেই থেকে যাচ্ছে ঘাটতি। চাষের খরচ পোষাতে বাড়তি দামের বোঝা চাপছে মধ্যবিত্তের পকেটে।

ক্রমাগত চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম সমস্যার মধ্যে পড়েছেন আমজনতা। বর্ধমানে অভিজিৎ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি চাল কিনতে এসে জানান, “করোনা পরিস্থিতিতে রোজগার তলানিতে এসে ঠেকেছে  তার উপর এভাবে চালের দাম বাড়লে, কীভাবে চালাব বুঝে উঠতে পারছি না। সরকারের উচিত চালের এই মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টির উপর নজর দেওয়া।” একই বক্তব্য পেনশনভোগী শেখ আলমের। তিনি বলেন, “চালের দাম অত্যাধিক বেড়ে গিয়েছে। ব্যবসায়ীরা গোডাউনে চাল মজুত করে রেখেছে, দাম বাড়াচ্ছে। সরকারি পেনশনের নির্ধারিত টাকায় সংসার চালাই।  এভাবে চালের দাম বাড়লে আমরা কীভাবে খাব তা নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। সরকার বিষয়টিতে নজর দিক।” অন্য এক ক্রেতা শেখ কামালউদ্দিনের কথায়, “শুধু চাল কেন, সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। কেন্দ্র অথবা রাজ্য, কোনও সরকারেরই হেলদোল নেই। সাধারণ মানুষকে সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।” মুদিখানার বাজার করতে আসা সকল ক্রেতারই একই অভিযোগ।

এদিকে চালের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। স্টেশন বাজারের এক খুচরো ব্যবসায়ী মানস রঞ্জন সাহা বলেন, “খাস ধানের পাশাপাশি মিনিকেটের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২টাকা।  ২৮ টাকা কেজির লাল স্বর্ণ চাল বেড়ে হয়েছে ৩০-৩২ টাকা। বাঁশকাঠির দাম বেড়েছে কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা।” রাইস মিলের মালিকরা ইচ্ছাকৃতভাবে মাল মজুত করে রাখার ফলে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। পাইকারি চাল বিক্রেতা বিলাস সাহা বলেন, “আমরা যে দামে মিল বা চাষিদের কাছ থেকে কিনছি তার সঙ্গে সামান্য লাভ রেখে খুচরো দোকানদারদের বিক্রি করছি।” তবে আগের তুলনায় চালের দাম অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি। অন্যান্য চালের দাম সেভাবে না বাড়লেও মিনিকেট চালের দাম অত্যাধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি।

কিন্তু হঠাৎ কেন এই দাম বৃদ্ধি?  বর্ধমান শহরের এক রাইস মিলের মালিক কাঞ্চন ঘোষ জানান, “মিনিকেট চালের দাম অনেকটাই বেড়েছে। তার প্রথম কারণ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এর কারণে ধান চাষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্ধমান ছাড়াও হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়াতেও ধান নষ্ট হওয়ার প্রভাব পড়ছে চালে। পাশাপাশি বাংলাদেশ বর্ডার খুলে যাওয়ায় সেখানে চাল রফতানি শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ মিনিকেট চাল বাংলাদেশে রফতানি হয়। তাই দাম বেড়েছে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ড ও বিহারেও চাল যায়।”

চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি দেবু টুডুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য বলেন, “দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারি নজরদারি চলছে। সরকার তো চাল দিচ্ছে। কোথাও কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কোথাও যদি কালোবাজারি হয়ে থাকে, তাহলে প্রশাসন আছে, আমরা সবাই আছি, কোনও ভাবার কারণ নেই। ” উল্লেখ্য, বর্ধমান জেলা শস্যগোলা নামে পরিচিত। গোটা জেলা জুড়ে প্রচুর পরিমাণে ধান উৎপাদন হয়। এই জেলার ধান পার্শ্ববর্তী ৮ টি জেলার চালের জোগান দেয়। বাইরের রাজ্যেও যায় এখানকার চাল। বর্তমানে জেলায় ধান উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬৬৪ হেক্টর জমিতে। তা থেকে চাল হয় ১৮ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯২ মেট্রিক টন।

আরও পড়ুন : West Bengal BJP: ‘যারা শৃঙ্খলা ভেঙে সংবাদমাধ্যমকে খবর দিলেন তাদের কী হবে?’ শো কজের চিঠি পেয়ে বিস্ফোরক রীতেশ