Kultali: এজলাস থেকে আসামির বাবাকে ফোন, ‘ডেথ সেন্টেন্স চাই’ বলে জোর সওয়াল, ধর্ষণ মামলায় ২ ঘণ্টার টানটান নাটক কোর্টরুমে
Kultali: সরকারি আইনজীবীর বক্তব্য, বয়স কম, এটা বিচার্য বিষয় নয়। অভিযুক্তের আইনজীবী বলছে অভিযুক্ত একমাত্র 'আর্নিং মেম্বার', কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট বলছে এটা কোনও যুক্তি হতে পারে না। এটা নৃশংস ঘটনা। এখানে বিশ্বাস ভেঙেছে অভিযুক্ত।
বারুইপুর: আরজি করের ঘটনায় এখনও চলছে মামলা, কিন্তু নজির তৈরির পথে বারুইপুর পকসো আদালত। কুলতলিতে নাবালিকা খুন-ধর্ষণের ঘটনায় ৬১ দিনের মাথায় সাজা ঘোষণা করতে চলেছে পকসো আদালত। সকাল সাড়ে ১০টাতেই সাজা ঘোষণা হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আদালতে চলল টানটান সওয়াল-জবাব। শুনানি শেষে আরও ২ ঘণ্টা সময় নিলেন বিচারক।
সকাল সাড়ে ১০টায় সাজা ঘোষণা করার কথা ছিল। সেই মতো সকালেই কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয় দোষী সাব্যস্ত হওয়া মুস্তাকিন সর্দারকে। তারপর থেকে ঠিক কী কী হল-
সকাল ১০টা ২০ মিনিট: গাড়ি থেকে নেমে কোর্টে প্রবেশ করার সময় ঢোকার সময় মুস্তাকিন বলেন, “আমি কিছু করিনি। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।”
প্রশ্ন: কে ফাঁসাল?
উত্তর: পার্টি তরফে ফাঁসানো হয়েছে।
প্রশ্ন: কোন পার্টি?
উত্তর: নেই।
সকাল ১১টা ৪৫ মিনিট: কোর্ট রুমে নিয়ে যাওয়া হল মুস্তাকিনকে।
বেলা ১২টা ১১ মিনিট: কাঠগড়ায় উঠলেন আসামি।
বিচারক: কাল তোমাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তোমার কিছু বলার আছে?
মুস্তাকিন: আমি এটা করিনি। আমি এই বিষয়টা জানতাম না। আমি ছাড়া আমার বাবা-মায়ের কেউ নেই। বাবা অসুস্থ। আমি ছাড়া কেউ দেখার নেই। যদি পারেন আমাকে মাফ করবেন। অভাবের জন্যই আমি কাজ করতাম।
বিচারক: বাবা কি কাজ করতেন? পুলিশ বলছে, তোমার বাবার খোঁজ নেই। বাড়িতে তালা ঝোলানো।
মুস্তাকিনের আইনজীবী: ওর বাবার পায়ে গ্যাংরিং রয়েছে।
বিচারক: বাবা মায়ের টেলিফোন নম্বর দিতে পারবে? যোগাযোগ করে দেখা যেতে পারে।
মুস্তাকিন বাবার নম্বর দিলেন। বিচারকের পরামর্শে ফোন করলেন আইনজীবী। কিন্তু ফোনে মেলেনি কোনও সাড়া।
মুস্তাকিনের আইনজীবী: ওর বাবা অসুস্থ। বাড়িতে রোজগারের কেউ নেই। পড়াশোনা শেষ না করে কাজ শুরু করেন মুস্তাকিন। বয়স কম। কোর্ট ওর বয়স বিবেচনা করে আইন অনুযায়ী ওকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ দিক। ওর বিরুদ্ধে আগের কোনও মামলা নেই। সংশোধনাগারে সুযোগ দেওয়া হোক সংশোধনের।
বিশেষ সরকারি আইনজীবী: ডেথ সেন্টেন্স চাই। যে যে ধারায় মুস্তাকিনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে চারটি ধারায় সর্বোচ্চ ধারা হল মৃত্যুদণ্ড বা ফাঁসি। তাহলে কীভাবে এই অভিযুক্ত বলছেন যে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হোক! উনি যখন ২০ বছর পর এই সমাজে ঘুরে বেড়াবেন তখন সমাজের প্রতিক্রিয়া কী হবে?
এই নাবালিকা ক্লাস নাইনে পড়ত। ক্লাসে প্রথম হত। ভারতবর্ষের একজন প্রতিভাবান নাগরিক হতে পারত। মেয়েটি ডাক্তার হতে পারত, উকিল হতে পারত। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। ফুলের মতো জীবন মেরে শেষ করে দেওয়া হল। স্যার আপনি যদি ভাবেন এই অভিযুক্তকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া যায়, আমি বলব দেওয়া যায় না। কারণ আজও ওর কোনও অনুতাপ নেই।
ফাঁসির দাবি জানিয়ে জোর সওয়াল করেন সরকারি আইনজীবীর। একাধিক যুক্তি তুলে ধরেন তিনি।
১. এটা পরিকল্পনা করে খুন। এটা হঠাৎ করে খুন নয়। সাইকেলে তুলে নির্জন জায়গায় গিয়ে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও পরে খুন করে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
২. অভিযুক্তের কোনও অনুতাপ নেই। বলছে প্রেম করতে নিয়ে এসেছিলাম।
৩. এর আগেও এই ছেলেটি অন্য কারও হাত ধরে টানতে গিয়েছে। শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করেছে। এটা তো পরিকল্পনা করেই হত্যা করা হয়েছে।
৪. বয়স কম, এটা বিচার্য বিষয় নয়। অভিযুক্তের আইনজীবী বলছে অভিযুক্ত একমাত্র ‘আর্নিং মেম্বার’, কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট বলছে এটা কোনও যুক্তি হতে পারে না। এটা নৃশংস ঘটনা। এখানে বিশ্বাস ভেঙেছে অভিযুক্ত। মেয়েটিকে বাবার কথা বলে সাইকেলে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল।
৫. কোথাও কোনও আবেগের জায়গা নেই। কোল্ড ব্লাডেড মার্ডার। এখানে ফাঁসিই সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে।
সরকারি আইনজীবীর বক্তব্য, বাবা মায়েদের কেন ভাবতে হবে যে তাদের মেয়ের বডিগার্ড কে হবে! তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ওই বয়সি মেয়েরা কি কোচিং থেকে, স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে ভয় পাবে? এই যুক্তিতেই ফাঁসির আবেদন জানান তিনি। শুনানির পর আরও ২ ঘণ্টা সময় নেন বিচারক।