‘শুভেন্দু হলদি নদীর জলে কত হাজার কোটি ডুবিয়ে রেখেছে ও-ই জানে!’ প্রশংসিত আলাপন, ‘মদন’-বাণে বিদ্ধ অধিকারী পুত্র

মঙ্গলবার, উত্তরপাড়া স্টেশন রোডে বালিতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মসূচি 'রাস্তায় ক্য়ান্টিন'-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন তৃণমূল বিধায়ক। এদিন, অনুষ্ঠানে মুখ্য়সচিব আলাপন বন্দ্য়োপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করে অধিকারী পুত্রকে কড়া ভাষায় তোপ দাগেন মদন।

'শুভেন্দু হলদি নদীর জলে কত হাজার কোটি ডুবিয়ে রেখেছে ও-ই জানে!' প্রশংসিত আলাপন, 'মদন'-বাণে বিদ্ধ অধিকারী পুত্র
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 02, 2021 | 6:23 PM

হুগলি: নারদ মামলায় অন্তবর্তীকালীন জামিন মিলতেই ফের জনগণের ‘দুয়ারে’ কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র (Madan Mitra)। গত শুক্রবার নারদ মামলায় (Narada Scam) জামিন পাওয়ার পরেও একদিন হাসপাতালে কাটিয়ে বাড়িতে ফিরেছিলেন মদন। তারপরেই, করোনা মোকাবিলায় রীতিমতো কোমর বেঁধে রাস্তায় নেমে পড়েছেন তৃণমূল নেতা। ইতিমধ্যেই কামারহাটি-সহ একাধিক এলাকায় করোনা রোগীদের সাহায্য করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। মঙ্গলবার, উত্তরপাড়া স্টেশন রোডে বালিতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মসূচি ‘রাস্তায় ক্যান্টিন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন তৃণমূল বিধায়ক। এদিন, অনুষ্ঠানে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করে অধিকারী পুত্রকে কড়া ভাষায় তোপ দাগেন মদন।

নারদকাণ্ডে বারবারই অভিযোগ উঠেছে শুভেন্দু অধিকারী, মুকুল রায়-সহ একাধিক হেভিওয়েট নেতারা বিপুল টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমনকী নারদ মামলায়, ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হলেও কেন বাদ গেলেন মুকুল-শুভেন্দু (Mukul Roy-Suvendu Adhikari) তা নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। মঙ্গলবার সে প্রসঙ্গে, মদন মিত্র বলেন, “শুভেন্দুর আসলে উচ্চারণ করতে সমস্যা হচ্ছে, হলদি নদীর জলে ও কত হাজার কোটি ডুবিয়ে রেখেছে। আড়াই লাখ, আড়াই কোটি নাকি আড়াই হাজার কোটি! শুভেন্দুর মুখে ওসব ন্যায়ের কথা মানায় না। ওর যে কো-অপারেটিভগুলো আছে, তাদের একটু ঝেড়ে মুছে দেখা হোক না, কত মাইনা বেরোয়!” পাশাপাশি, এদিন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে তৃণমূল নেতা (TMC) বলেন, “আলাপন বাংলার অলঙ্কার, বাংলার সমৃদ্ধি, কোনও অর্থ দিয়ে আলাপনের মতো অফিসার তৈরি করা যায় না। আমি স্যালুট জানাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, আলাপনের মতো এমন অফিসার বাংলার মানুষ পেয়েছে। ওঁর ভাই মারা গিয়েছে। কিন্তু কীভাবে ঠাণ্ডা মাথায় লড়াই করে যাচ্ছে।” প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে বঙ্গ রাজনীতিতে অন্যতম আলোচ্য একটি নাম হল আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। কলাইকুণ্ডায় মোদী-মমতা সাক্ষাৎ-কে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক সংঘাত শুরু হয়েছে সেই পাকে পড়ে যান খোদ মুখ্যসচিব (Alapan Banerjee)। বদলির নোটিশ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা, আলাপনের অবসরপ্রাপ্তি সবমিলিয়ে চরমে উঠেছে কেন্দ্র-রাজ্য দ্বৈরথ। সেই মুখ্যসচিবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়ার পর ফের অধিকারী পুত্রকে নিশানা করেন মদন। তিনি বলেন, “আমাদের খেলাটা সবে শুরু হয়েছে। বলি শুভেন্দু, একটু অপেক্ষা করুন, আপনাদের খেলা শুরু হবে। কো-অপারেটিভ আর এমপির খেলা। হলদিয়া ছেড়ে কেন জাপানি কোম্পানিগুলো কেন পালিয়ে গেল তা কি আর বলে দিতে হয়! আরে আপনি ডাকাত না ডাকাতদের সর্দার, সেটা তো বিধানসভায় বুঝে নেব।”

শুধুমাত্র অধিকারী পুত্রই নন, মদনের নিশানায় বাদ যাননি প্রধানমন্ত্রীও। ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের খতিয়ান তুলে ধরতে নির্বাচনের অনতিপরেই বঙ্গে আসে কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল। পাশাপাশি, কোভিড মোকাবিলায় মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অতিরিক্ত টিকা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেও কোনও উত্তর আসেনি বলে অভিযোগ। সেই প্রসঙ্গেই বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা বলেন,”কেন্দ্রে যিনি প্রধানমন্ত্রী, তিনি বাংলায় হঠাৎ এসে মনে করেন দাড়ি রাখলেই বুঝি রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায়। তাঁকে যে লোকে রবীন্দ্রনাথ না ভেবে খগেন্দ্রনাথ ভাবছে সেটা উনি বোঝেননা। কেন্দ্র ভ্যাকসিন না পাঠিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠায়। তারা আবার রাইফেল দিয়ে গুলি চালায়। কেন্দ্রে যাঁরা আছেন, জানিয়ে রাখি, এ বার আমাদের টার্গেট ‘দিল্লি চলো’।” উল্লেখ্য, ভোট পর্বের চতুর্থ দফায় শীতলকুচি হত্যাকাণ্ডের জেরে একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। পাশাপাশি, তৃণমূল সুপ্রিমোর উস্কানিমূলক মন্তব্য়ের জেরে শীতলকুচিকাণ্ড ঘটেছিল এমনই অভিযোগ করেছিল রাজ্য বিজেপি। ক্ষমতায় আসার পরেই শীতলকুচিকাণ্ড নিয়ে সিআইডির হাতে বিশেষ তদন্তভার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তবে প্রশ্ন উঠছে কেন বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা দিল্লি যাওয়ার কথা বললেন? আগামী ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচন। তার প্রস্তুতি এখন থেকেই সেরে রাখতে চাইছে তৃণমূল। এমনকী, নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই যে সর্বোত্তম প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারেন এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাই বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতার দিল্লি যাওয়ার হুঙ্কার নিছকই স্লোগান হিসেবে দেখতে নারাজ বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন: ‘বাংলায় গণহত্যা দেখলে মনে হয়, রাস্তায় শাড়ি পরা মুসোলিনি দৌড়াদৌড়ি করছেন’, নিশানায় মমতা, তোপ সায়ন্তনের