Padma Setu: পদ্মা সেতুতে চলল ট্রেন; চড়লেন রেলমন্ত্রী, বাংলাদেশে আনন্দের বন্যা
Padma Setu: প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ জুন দ্বিতল পদ্মা সেতুর উদ্বোনের পর গত ২০ অগস্ট প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর লোয়ার ডেকে (নিচতলা) রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ছয় মাসের মধ্যে এই কাজ সম্পন্নের লক্ষ্য ছিল।
ঢাকা : উদ্বোধনের সময় থেকেই উন্মাদনার অন্ত ছিল না। আনন্দের ঢেউ এসে পৌঁছে ছিল এপার বাংলাতেও। এবার পদ্মা সেতুতে (Padma Bridge) পাড়ি দিল ট্রেন (Train)। সেতুর রেল প্রজেক্টের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর এদিন উদ্বোধন করা হল ট্রেন পরিষেবা। যা নিয়ে বাংলাদেশজুড়ে (Bangladesh) যেন আনন্দের বন্যা। পদ্মা সেতু দিয়ে চলবে ট্রেন? কিছুদিন আগেও তা ছিল স্বপ্নাতীত। সেই স্বপ্নই বাস্তবায়িত হল মঙ্গলবার।
মাদারিপুরের মাটি দিয়ে প্রথমবার ট্রেন চলার খবরে খুশির বন্যা বইছে পুরো দক্ষিণাঞ্চলে। সবচেয়ে খুশি জেলার শিবচর, শরীয়তপুরের জাজিরা ও মুন্সীগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলার সর্বস্তরের মানুষ। ২০২২ সালের ২৫ জুন দীর্ঘ প্রতিক্ষা শেষে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়। পরের দিন খুলে দেওয়া হয় সড়ক পথ। কিন্তু কবে চলবে ট্রেন? তার অপেক্ষায় ছিলেন বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ। অবশেষে হল সেই অপেক্ষার অবসান।
পদ্মা সেতু চালুর ৯ মাসের মাথায় অবশেষে এই ব্রিজে শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল। খরস্রোতা পদ্মার উপরে তৈরি এই সেতুতে আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চললো বলে জানা যাচ্ছে। যাত্রা শুরুর প্রথমদিনে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ট্রেনে উঠলেন একেবারে যাত্রী হিসাবে। প্রথম ট্রেনটি এদিন সেতু পার করে মাওয়া থেকে ভাঙা জংশনে ফেরে। এদিকে পদ্মা সেতুর দক্ষিণপাড়ে রেল লাইনই ছিল না। ফলে মাদারীপুর-সহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে রেলপ্রাপ্তি রীতিমতো বড় ব্যাপার বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের।
খুশির হাওয়া ওপার বাংলায়
নতুন লাইন চালু হওয়ায় স্বল্প খরচে আম-অদমির যাতায়াতের যেমন সুবিধা হবে তেমনই পণ্য আমদানি রপ্তানিতেও আসবে গতি। ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে। বিশেষ করে স্বল্প খরচে কৃষিপণ্য রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা যাবে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল থেকে। ফরিদপুরের ভাঙা স্টেশন মাস্টার শাহজাহান জানান, মঙ্গলবার ৪ এপ্রিল দুপুর ১২টায় ফরিদপুরের ভাঙা স্টেশন থেকে একটি গ্যাংকার ট্রেন এবং ৭ বগি বিশিষ্ট যাত্রীবাহী একটি স্পেশাল ট্রেন মাওয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ জুন দ্বিতল পদ্মা সেতুর উদ্বোনের পর গত ২০ অগস্ট প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর লোয়ার ডেকে (নিচতলা) রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ছয় মাসের মধ্যে এই কাজ সম্পন্নের লক্ষ্য ছিল। প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ৩১ মার্চ সেতুতে স্লিপার ঢালাইয়ের মাধ্যমে ব্যালাস্টলেস (পাথরবিহীন) রেললাইন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। তারপরই ট্রেন যাত্রা শুরু করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।
আগামী সেপ্টেম্বরে ঢাকার কমলাপুর থেকে মাওয়া, পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙা পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চালাতে চায় বাংলাদেশের রেল মন্ত্রক। রেলমন্ত্রী যদিও একাধিকবার ঘোষণা করেছিলেন জুনেই যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে। যদিও সূত্রের খবর, আগামী ডিসেম্বরে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা রুটে ট্রেন চলবে পাকাপাকিভাবে।
ইতিমধ্যেই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, ঢাকার কেরানিগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারিপুর, ফরিদপুরের ভাঙা, নড়াইল, মাগুরা হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার মূল লাইন-সহ ২১৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।
ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে ট্রেন
ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙা এবং ভাঙা থেকে যশোর– এই তিন ভাগে প্রকল্পের কাজ চলছে। ৩১ মার্চ পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ। ঢাকা-মাওয়া অংশের কাজের অগ্রগতি প্রায় ৭২ শতাংশ এবং মাওয়া-ভাঙা অংশের অগ্রগতি প্রায় ৯৩ শতাংশ। ভাঙা-যশোর সেকশনে কাজ এগিয়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ।
এ বছরেই ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা রুটে ট্রেন চলবে বলে জানা যাচ্ছে। আগামী বছরের জুনে যশোর পর্যন্ত যাবে রেল। ভাঙা জংশন থেকে পদ্মা সেতুর পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত নব-নির্মিত ৩২ কিলোমিটার রেলপথে আগেও পরীক্ষামূলক ট্রেন চলেছে। তবে আজই প্রথমবারের মতো সেতু পার হল ট্রেন। তবে এই পরীক্ষামূলক চলাচল জারি থাকবে বলে জানা যাচ্ছে। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচলে সক্ষম পদ্মা সেতুর এই রেল ট্র্যাক।