Europe: একাই একশো ইউরোপের সব হাওয়া ফুস?
Europe: একটা সময়ে বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশ, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ, ফরাসি, ডাচদের কলোনি ছিল। ব্রিটিশরা গর্ব করে বলত তাদের সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যায় না। গ্রিক-রোমান সভ্যতা থেকে রেনেসাঁর কথা যদি বলি, তাহলে তো মানতেই হবে যে এই দুনিয়ায় ইউরোপের অবদান কম নয়।
ইউরোপ ভাঙছে, সেই দেওয়াল লিখনটা কী ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে? আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যাঁ হচ্ছে। চেষ্টা করেও ভাঙনের সম্ভাবনা আর চেপে রাখা যাচ্ছে না। ইউরোপ ভাঙছে। সেই ইউরোপ যাঁরা নিজেদের বাদ দিয়ে দুনিয়ার অন্য কোনও দেশকে নিয়ে ভাবিত নয়। সেই ইউরোপ, যারা সবসময় সুবিধা নিতে চায়, দিতে চায় না। সেই ইউরোপ, যাঁরা আফ্রিকা, এশিয়াকে পারলে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয়। দুই মহাদেশে যাই ঘটে যায়, তা নিয়ে যাঁদের তেমন একটা মাথাঘামাতে দেখা যায় না। সেই ইউরোপ, যাঁরা মনে করে, ইউরোপের সমস্যা, গোটা বিশ্বের সমস্যা। কিন্তু, গোটা বিশ্বের সমস্যা তাঁদের সমস্যা নয়। ইউরোপ এভাবেই ভাবতে, দেখতে অভ্যস্ত। তবে এই ২০২৪ সালের শেষে এসে একটু হলেও যেন উল্টো সুর।
ইউরোপীয়ান নেতারা বলছেন, আমাদের অবস্থা ভাল নয়। ইউরোপের অবস্থা ভাল নয়। শুক্রবার বিকেলে হঠাত্ করেই সংসদ ভেঙে ভোটের ঘণ্টা বাজিয়ে দিলেন জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ওয়াল্টার স্টেইনমেয়ার। চ্যান্সেলর ওলফ শুলত্জ আস্থাভোটে হেরে গিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের সামনে আর উপায়ও ছিল না। তাই নির্দিষ্ট সময়ের সাত-আট মাস আগেই জার্মানিতে শুলত্জ সরকার টিকিয়ে রাখতে পারলেন না কেন? শুলজের নেতৃত্বাধীন তিনদলের সরকারের বিরুদ্ধে জার্মান জনতার ক্ষোভ চরমে। কারণ, হঠাত্ করেই আর্থিক সঙ্কট, মন্দার থাবা। গত দু-আড়াই দশক ধরে ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি বলতে জার্মানি। মহামন্দার সময় জার্মানি কার্যত একাই ইউরোপের অর্থনীতি চালিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এবার সেই জার্মান অর্থনীতিতেই মন্দা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর একটা বড় কারণ, প্রাকৃতিক গ্যাস কিনতে রাশিয়ার উপর অত্যাধিক নির্ভরতা। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রুশ- জার্মানি সম্পর্কের সমীকরণ বদলানো শুরু হয়। এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে অর্থনীতিতে।
গত দু-বছরে জার্মানিতে গ্যাসের দাম ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। জার্মানির মূল ভরসা গাড়ি, ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরের গ্রোথ এক শতাংশের নীচে চলে গিয়েছে। লোকজনের চাকরি যাচ্ছে, পেনশন পেতে দেরি হচ্ছে। বিক্রিবাটাও তলানিতে। ফ্রান্সের মতো দেশও মেনে নিচ্ছে, অর্থনীতির অবস্থা সুবিধার নয়। ফরাসি প্রেসিডেন্ট খোলাখুলি বলছেন, আমরা ইউরোপীয়ান ক্রাইসিস দেখছি। ইউরোপ এখন মৃতপ্রায়।
এই খবরটিও পড়ুন
একটা সময়ে বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশ, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ, ফরাসি, ডাচদের কলোনি ছিল। ব্রিটিশরা গর্ব করে বলত তাদের সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যায় না। গ্রিক-রোমান সভ্যতা থেকে রেনেসাঁর কথা যদি বলি, তাহলে তো মানতেই হবে যে এই দুনিয়ায় ইউরোপের অবদান কম নয়। অথচ এখন প্রতিরক্ষা থেকে অর্থনীতি, আমেরিকা-চিন-রাশিয়া-ভারত। এই চার দেশই বাস্তবে দুনিয়া চালাচ্ছে। ইউরোপ সেখানে কোথায়? কোথাও নেই। অবস্থা খারাপ বুঝে ইউরোপ এখন বলছে, আমরা খুব তাড়াতাড়ি সমস্যা সমাধানের পথ বের করে ফেলব। খালি কয়েকটা জিনিস করতে হবে। রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধ জিততে দেওয়া যাবে না। ইউরোপকে নিজের সামরিক শক্তি বাড়াতে হবে। আমেরিকার দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। আরও শক্তিশালী করতে হবে ২৭ দেশের জোট ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে। সাইবার সিকিউরিটির জন্য ইউরোপের সব দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বানাতে হবে ইউরোপিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমি। ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেনের সঙ্গে ইইউ-এর গাঁটছড়া শক্ত করতে হবে। ইউরোপের সব দেশকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উত্পাদনের পিছনে টাকা ঢালতে হবে। বাইরে থেকে আসা অস্ত্র নয়, ইউরোপকে ইউরোপে তৈরি অস্ত্রই ব্যবহার করতে হবে।