Kota andolan in Bangladesh: অনেক স্বপ্ন বুকে নিয়ে ১৪ মাস আগে বিয়ে, কোটা আন্দোলনে স্বামীকে হারিয়ে নিথর হলেন স্ত্রীও
Kota andolan in Bangladesh: পুত্রের মৃত্যুর একদিন পর খবর পেয়ে দেশে আসেন জিসানের দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী বাবা বাবুল সর্দার। একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোক না কাটতেই পুত্রবধূর আত্মহত্যা। এমন অবস্থায় দিশেহারা তিনি। কী করবেন, কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না।
ঢাকা: লেখাপড়া খুব বেশি করেননি। তবে সাংসারিক ছিলেন জিসান। সংসারের কথা চিন্তা করে কাজ করতেন অল্প বয়স থেকেই। পড়াশোনা না করায় প্রথম দিকে ছেলের উপর একটু অভিমান ছিল বাবা-মার। তবে দিনে দিনে সংসারের হাল ধরায় খুব খুশিই ছিলেন ছেলের ওপর। খুব তাড়াতাড়িই বিয়ে দেন জিসানের। একমাত্র পুত্র জিসানের ভালোবাসার মানুষকেই ঘরের বউ করে আনেন বাবা মা। মায়ের স্নেহ, স্ত্রীর ভালবাসা আর প্রবাসী বাবার আদর। এমন সুখী পরিবারের মধ্যমণি হয়ে থাকতেন আব্দুর রহমান জিসান। কিন্তু, বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনের মাঝে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান জিসান। স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন জিসানের স্ত্রী মিষ্টি বেগম। ৯ দিন পর নিথর হলেন মিষ্টিও।
পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার পর আর পড়েননি জিসান। কাজ করতেন জল সরবরাহের। বাড়ি-বাড়ি আর দোকানে পৌঁছে দিতেন খাবার জল। কোটা আন্দোলন ঘিরে গত ২০ জুলাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দেশের বিভিন্ন এলাকা। রাজধানী ঢাকার রায়েরবাগ এলাকায় কাজ সেরে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন জিসান। হঠাৎই একটি গুলি তাঁর চোখ ভেদ করে বেরিয়ে যায় মাথার পেছন দিয়ে। মুহূর্তে লুটিয়ে পড়েন জিসান। স্বামীকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েন স্ত্রী মিষ্টি বেগম। যাকে ভালবেসে জিসান বিয়ে করেছিলেন মাত্র ১৪ মাস আগে।
পুত্রের মৃত্যুর একদিন পর খবর পেয়ে দেশে আসেন জিসানের দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী বাবা বাবুল সর্দার। একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোক না কাটতেই পুত্রবধূর আত্মহত্যা। এমন অবস্থায় দিশেহারা তিনি। ছেলের মৃত্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার ছেলেটা বাসার কাছে একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। কপালে গুলি লেগে মাথার পিছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়।” পুলিশের গুলিতেই তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ বাবুল সর্দারের। তিনি বলেন, “ছেলের উপর আমার অনেক ভরসা ছিল। বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে যায়নি। আমাকে গুলি করে মেরে ফেলত, আমার কষ্ট হত না। আমার ছেলেটা তখন আমার সংসারের হাল ধরতে পারত। এখন সংসার আর রইল না।”
পুত্রবধূর মৃত্যু নিয়ে তিনি বলেন, দুপুরে দরজা লাগিয়ে ফ্যানের সঙ্গে রশি ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করে মিষ্টি। দু-দুটো পরিবার ধ্বংস হয়ে গেল। আমি আজ সাড়ে আট বছর ধরে বাইরে থাকি। আমার ছেলে-মেয়েকে মানুষ করার জন্য।” কার বিরুদ্ধে মামলা করবেন? কার কাছে চাইবেন বিচার? কিছুই মাথায় আসছে না বাবুল সর্দারের। ভেজা চোখে তাকিয়ে রইলেন সামনের দিকে।