Business Story: ভারতের এই চার ছেলেই চমকে দিল! একটা গ্যারেজ হয়ে গেল আড়াই লক্ষ কোটির সাম্রাজ্য, ব্র্যান্ডটি আপনিও চেনেন কিন্তু গল্পটা জানেন?
Asian Paints: ১৯৭০ সালে শুধু ভারত কেন, পৃথিবীর মানুষই কম্পিউটার বা ওই ধরনের কোনও প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হয়নি। আর সেই সময়ই একটি সুপারকম্পিউটার কিনেছিল এশিয়ান পেন্টস। আর বলা যায় এটাই ছিল এই সংস্থার একটা মাস্টারস্ট্রোক। কারণ, এই সুপারকম্পিউটার সংস্থাকে বাজারের চাহিদা বুঝতে, সাপ্লাই চেন অপ্টিমাইজ করতে ও তাদের লজিস্টিক ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।

কথায় বলে না, কোনও একটা দরজা বন্ধ হলে আরও অনেকগুলো দরজা খুলে যায়। ঠিক এই ঘটনাই যেন ঘটেছিল এশিয়ান পেন্টসের সঙ্গে। ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মুম্বইয়ের এক ছোট গ্যারেজে শুরু হয়েছিল ‘এশিয়ান অয়েল অ্যান্ড পেন্ট কোম্পানি’। আর সেখান থেকেই আজ বিশ্বের অন্যতম প্রধান রঙের সংস্থায় পরিণত হয়েছে এশিয়ান পেন্টস। কিন্তু তাদের এই যাত্রা মোটেই মসৃণ ছিল না। কিন্তু সুযোগ তৈরি করে, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আজ ভারতের বৃহত্তম রঙের কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।
যুদ্ধের আবহ ও শুরুর গল্প
১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ব্রিটিশ সরকার ভারতে রঙ আমদানি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে দেয়। আর সেই কারণে সেই সময় দামি বিদেশি ব্র্যান্ড আর শালিমার পেন্টস ছাড়া সাধারণ মানুষের কাছে কোনও বিকল্প ছিল না। আর এই সুযোগকেই কাজে লাগালেন চার বন্ধু। চম্পকলাল চোকসি, চিমনলাল চোকসি, সূর্যকান্ত দানি আর অরবিন্দ ভকিল, এই চার জন মিলে মুম্বাইয়ের ছোট একটি গ্যারেজে শুরু করলেন ‘এশিয়ান অয়েল অ্যান্ড পেন্ট কোম্পানি’। তাঁদের লক্ষ্য একটাই, কম দামে দেশের মানুষকে ভাল মানের রঙ তৈরি করা। তাঁরা রঙ তৈরি করলেও মুম্বই, দিল্লি বা কলকাতার মতো বড় শহরের বিক্রেতারা তাঁদের সেই রঙ বিক্রি করতে চায়নি। এর একটা বড় কারণ হতে পারে, সেই সব বিক্রেতা মনে করেছিলেন, নতুন এই সংস্থার রঙ বিক্রি করলে অন্য দামি সংস্থাগুলো আর তাদের দোকানে রঙ বিক্রি করবে না। ফলে, শুরুর দিন থেকেই চাপে পড়েছিল এশিয়ান পেন্টস। আর তারপর হতাশ হয়ে পড়লেও উদ্যম হারাননি তাঁরা। ফলে, ব্যবসা বাড়ানোর এক নতুন পথ বেছে নিলেন তাঁরা। শহর নয়, ভারতের বেশিরভাগ মানুষ কিন্তু গ্রামের থাকেন। ফলে, একেবারে সোজাসুজি গ্রামের বাজারকে টার্গেট করলেন তাঁরা। ফলে, ছোট প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে গ্রামের বাজারে রঙ বিক্রি শুরু করলেন তাঁরা। আর এভাবেই এশিয়ান পেন্টসের একটা বিরাট ও শক্তিশালী ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
উদ্ভাবন ও ব্র্যান্ডিং
১৯৫০ সালের আশেপাশে এশিয়ান পেন্টস বাজারে নিয়ে আসে ‘ট্র্যাকটর ডিস্টেম্পার’ নামের এক যুগান্তকারী পণ্য। ডিসটেম্পার হল এমন এক ধরনের রঙ যা সাধারণত খসখসে হয়, অনেকটা চুনকামের মতো। আর ‘ট্রাকটর ডিসটেম্পার’ ছিল এমন ডিসটেম্পার যা ওয়াশ করা যেত। ফলে, নিম্নমানের ড্রাই ডিসটেম্পার ও দামি ইমালশন পেন্টের মধ্যে একটা নতুন জায়গা তৈরি করে এই নতুন রঙ। দাম কম ও টেকসই হওয়ায় সাধারণ মানুষের কাছে দারুণ জনপ্রয়তাও লাভ করে এই রঙ।
নয়া এই ডিসটেম্পারকে বাজারে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য ১৯৫৪ সালে সংস্থা এক অবিস্মরণীয় ম্যাসকট তৈরি করে। জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট আর. কে. লক্ষ্মণের তৈরি করেন ‘গাট্টু’ নামের এই দুষ্টু মিষ্টি ছেলেটিকে। আর এই ডিসটেম্পারের ট্যাগলাইন “Don’t lose your temper, use Tractor Distemper” ভারতীয়দের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। আর ‘গাট্টু’ ধীরে ধীরে এই ব্র্যান্ডের প্রতীক হিসাবেও পরিচিত হয়।
সুপার কম্পিউটার
১৯৭০ সালে শুধু ভারত কেন, পৃথিবীর মানুষই কম্পিউটার বা ওই ধরনের কোনও প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হয়নি। আর সেই সময়ই একটি সুপারকম্পিউটার কিনেছিল এশিয়ান পেন্টস। আর বলা যায় এটাই ছিল এই সংস্থার একটা মাস্টারস্ট্রোক। কারণ, এই সুপারকম্পিউটার সংস্থাকে বাজারের চাহিদা বুঝতে, সাপ্লাই চেন অপ্টিমাইজ করতে ও তাদের লজিস্টিক ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। যার ফলে, ক্রমশ ব্যবসা বাড়তে থাকে এশিয়ান পেন্টসের। এই একটা বিনিয়োগ এই সংস্থাকে দু’হাত ভরে ফিরিয়ে দিয়েছিল।
বাজারের নতুন রাজা
১৯৬৭ সালে, প্রতিষ্ঠার মাত্র ২৫ বছরের মধ্যে এশিয়ান পেন্টস ভারতের অন্যতম বড় পেন্ট কোম্পানিতে পরিণত হয়। সেই শুরু, আজও ভারতের সবচেয়ে বড় রঙের সংস্থার নাম এশিয়ান পেন্টস। তবে শুধু ভারতের বাজারে ‘রাজা’ হয়েই আটকে যায়নি সংস্থা। কারণ, তাদের চোখে ছিল বিশ্বজয়ের স্বপ্ন। ১৯৭৮ সালে তারা পা রাখে বহিঃর্বিশ্বে। সেই বছর তারা তাদের ব্যবসা পা রাখে ফিজিতে। আজ এশিয়ান পেন্টস ১৫-এর বেশি দেশে ব্যবসা করে।
সময়ের সঙ্গে মন্দাও এসেছে রঙের বাজারে। কিন্তু আগামীর বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে একাধিক পন্থা নিয়েছে এশিয়ান পেন্টস। বর্তমানে তারা শুধুমাত্র রঙের ব্যবসায় নিজেদের আটকে রাখেনি। বর্তমানে এশিয়ান পেন্টস ‘হোম ডেকরেশন’-এর ব্যবসাতেও নেমেছে। এ ছাড়াও ‘স্লিক ইন্টারন্যাশনাল’-কে অধিগ্রহণ করেছে তারা। ফলে, মডিউলার কিচেন, ওয়ার্ডরোব, বাথ ফিটিংস এবং ডিজাইনার ওয়ালপেপারের মতো নানা পণ্যও বাজারে নিয়ে এসেছে তারা।
কী হবে আগামীতে?
প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছি সংস্থাটি। একটি রিপোর্ট বলছে, গত ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই সংস্থা বছরে ২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। নেতৃত্বের পরিবর্তন এবং পারিবারিক বিবাদ; এর কোনও কিছুই টলাতে পারেনি এই সংস্থাকে। আজও, নতুন প্রযুক্তি এবং উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তারা ক্রমাগত বিনিয়োগ করে চলেছে, যাতে প্রতিযোগিতার বাজারেও তারা অপ্রতিদ্বন্দী থাকে।
