Mangrove Controversy: ‘সংস্কৃতিমনষ্ক’ বাকিবুরের সঙ্গে খাদ্য দফতর থেকেই আলাপ ‘ম্যানগ্রোভ’-এর পরিচালকের?

Tollywood Controversy: এই ছবিতে ‘আইটেম ডান্সার’ হিসেবে দেখা গিয়েছিল মুম্বইয়ের রাখী সাওয়ান্তকে। তাহলে কি অনেক বড় বাজেটের ছবি হিসেবে ভাবা হয়েছিল ‘ম্যানগ্রোভ’-কে? এর উত্তরে পরিচালক বলেন, “কলকাতার এক নামী অভিনেত্রীর এই ডান্স করার কথা ছিল। তবে তিনি সময় দিতে না-পারায় রাখীর কথা ভাবা হয়। তবে অত্য়ন্ত কম পারিশ্রমিকেই কাজ করেছিলেন রাখী সাওয়ান্ত।”

Mangrove Controversy: ‘সংস্কৃতিমনষ্ক’ বাকিবুরের সঙ্গে খাদ্য দফতর থেকেই আলাপ ‘ম্যানগ্রোভ’-এর পরিচালকের?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 01, 2023 | 2:10 PM

রেশন দুর্নীতি-কাণ্ডে গত কয়েকদিন ধরে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক-ঘনিষ্ঠ বাকিবুর রহমান (তিনিও এই দুর্নীতির অভিযোগে ইতিমধ্যেই ধৃত) প্রযোজিত ছবি ‘ম্যানগ্রোভ’। বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়া ২০১৪ সালের ওই টলিউডি ছবির পরিচালক এবার কার্যত ফাটালেন এক বোমা। এই ছবিকে কেন্দ্র করে যে খাদ্য দফতরের কথা উঠে এসেছে ইডি-র প্রাথমিক তদন্তের সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যমে, সেই সংশ্লিষ্ট দফতরেই নাকি ধৃত প্রযোজক তথা চালকল মালিক বাকিবুরের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল, এবার এমনটাই দাবি করলেন ‘ম্যানগ্রোভ’-এর পরিচালক সৌরভ মুখোপাধ্য়ায়। TV9 বাংলার কাছে সৌরভের দাবি, “খাদ্য দফতরের প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর (যুগ্ম অধিকর্তা) পার্থসারথী গায়েনের হাত ধরেই প্রযোজক বাকিবুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল আমার।” যে ছবি নিয়ে এত আলোচনা-বিতর্ক, সেই ‘ম্যানগ্রোভ’-এ অভিনয় করেছিলেন আর এক দুর্নীতি-কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ‘পরিচিত’ মুখ: স্কুল নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়।

স্কুল নিয়োগ থেকে শুরু করে রেশন—দুর্নীতির টাকা খুব সহজে টলিউডের ছবিতে টাকা লগ্নি করে ‘সাদা’ করে নেওয়া যায়, এই অভিযোগ গত বছর থেকে শুরু করে এখনও একইভাবে বিদ্ধ করে চলেছে ‘বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ান’ স্লোগান-তোলা ইন্ডাস্ট্রিকে। এক্ষেত্রে ইডি-র নজর যে ছবিতে, সেই ‘ম্যানগ্রোভ’-এর পরিচালক সৌরভ মুখোপাধ্য়ায় ‘জমিন’ নামে একটি ছবি তৈরি করেছিলেন। এহেন সৌরভ TV9 বাংলাকে জানিয়েছেন, তিনি নিজেও খাদ্য দফতরের কর্মী। কিন্তু ছবির প্রযোজক হিসেবে হঠাৎ এক চালকল মালিকের নাম কীভাবে উঠে এসেছিল সেই সময়? সৌরভ TV9 বাংলাকে বলেছেন, “খাদ্য দফতরের অফিস থেকেই বাকিবুর রহমানের সঙ্গে আলাপ হয় আমার।” খাদ্য দফতরের কর্মচারী কর্মচারী সৌরভ অফিসেরই একটি দল নিয়ে নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। সেই দলে ডেপুটি ডিরেক্টর পার্থসারথী গায়েন-সহ আরও অনেকে ছিলেন।

সৌরভের কথায়, “আমরা মাঝেমধ্যেই স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি তৈরির পরিকল্পনা করতাম। এরপরই একদিন ‘ম্যানগ্রোভ’ গল্পটি হাতে আসে। আর তখনই ফাইন্যান্সার বা প্রযোজক খোঁজার কাজ শুরু হয়। সেই সময়েই এই বাকিবুর রহমানের সঙ্গে আলাপ হয়—অফিসেই। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই আলাপ করিয়ে দেন। এরপর অনেকবার আলাপ-আলোচনার পর ঠিক হয় সিনেমার কাজ করা হবে।” ইডি-র তদন্তে উঠে এসেছে আরও এক তথ্য। তা হল, পার্থসারথী গায়েন নিজের লেখা উপন্যাস ‘ম্য়ানগ্রোভ’ থেকে ছবি পরিচালনা করার জন্য সৌরভকে অনুরোধ করেছিলেন। ‘ম্যানগ্রোভ’-এর পরিচালক বলেন, “পরে জেনেছি এই বাকিবুর রহমানের অনেকই ব্যবসাই রয়েছে।” সেই কারণেই তিনি এহেন বাকিবুরকে প্রযোজক রূপে ‘স্বাভাবিকভাবে’ই নিয়েছিলেন নিজের ছবির ক্ষেত্রে, তেমনটাই জানিয়েছেন সৌরভ।

হঠাৎ প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ অর্পিতাকে নায়িকা হিসেবে নিতে গেলেন কেন সৌরভ? কেউ কি ‘সাজেস্ট’ করেছিলেন অর্পিতার নাম? ‘ম্যানগ্রোভ’-এর পরিচালক সৌরভের উত্তর, “অন্য অনেক অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা হলেও আমাদের গল্প ও ছবির বাজেটের সঙ্গে অর্পিতাকেই মানানসই বলে মনে হয়েছিল। আমরা টিমের সবাই মিলেই অর্পিতাকে ঠিক করি।” ইডি তদন্তে নেমে এ প্রসঙ্গে পেয়েছে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য: নায়িকা হিসেবে টলিউডের এক শীর্ষ অভিনেত্রীর সঙ্গে কথাবার্তা বেশ কিছুটা এগিয়ে গেলেও শেষমেশ নাকি আইনি জটিলতার কারণে সেই নায়িকাকে আর ছবিতে নেওয়া যায়নি। অর্পিতা সেই সময়ে একাধিক ওড়িয়া ছবিতে অভিনয় করছিলেন।

এই ছবিতে ‘আইটেম ডান্সার’ হিসেবে দেখা গিয়েছিল মুম্বইয়ের রাখী সাওয়ান্তকে। তাহলে কি অনেক বড় বাজেটের ছবি হিসেবে ভাবা হয়েছিল ‘ম্যানগ্রোভ’-কে? এর উত্তরে পরিচালক বলেন, “কলকাতার এক নামী অভিনেত্রীর এই ডান্স করার কথা ছিল। তবে তিনি সময় দিতে না-পারায় রাখীর কথা ভাবা হয়। তবে অত্য়ন্ত কম পারিশ্রমিকেই কাজ করেছিলেন রাখী সাওয়ান্ত।” সৌরভ আরও জানিয়েছেন, ছবিটি মুক্তির সময় দেখা যায় বাকিবুরকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল, কারণ কলকাতার কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে ছবির মুক্তির জন্য টাকার দরকার ছিল। সেই সময় কষ্ট করেই ছবিটি রিলিজ় করা হয় বলে দাবি সৌরভের। বাকিবুর সম্পর্কে সৌরভের আরও সংযোজন, “আমি দেখেছিলাম সংস্কৃতিমনষ্ক মানুষ ছিলেন বাকিবুর রহমান। সঠিক সময়ে সবার টাকাও মিটিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।”

প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও বাকিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পরটা অনেক ধূসর অতীতই এখন স্পষ্ট সৌরভের কাছে, তাই না? তিনি কি মনে করছেন যে, দুর্নীতির টাকাতেই তাঁর ছবি তৈরি হয়েছিল? উত্তরে সৌরভ বলেন, “আমি এখনও খাদ্য দফতরের কর্মী। এই ছবি তৈরিতে আমার সিনিয়ররা ছিলেন। তখন এসব কিছুই জানতাম না। এখন মিডিয়ার মাধ্যমেই নানা তথ্য জানতে পারছি।”

বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত পার্থসারথী গায়েন একদা উত্তর ২৪ পরগনায় খাদ্য নিয়ামক পদে কাজ করতেন বলে তদন্তে জেনেচে ইডি। নিজের লেখা উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া ছবিতে একদিকে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে ‘কাস্ট’ করা এবং প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বাকিবুর রহমানের প্রযোজক হিসেবে হাজির হওয়া (অনন্ত পরিচালক যা দাবি করেছেন এখনও), এই দুই বিষয় নেহাতই কাকতালীয় নাকি এর পিছনে কাজ করছে অন্য কোনও রসায়ন, আপাতত সেই প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে ব্যস্ত ইডি-র আধিকারিকেরা।