সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের গড়ে ওঠার পিছনে অনেক অবদান ছিল দীপা কাকিমার, তিনি স্বতন্ত্র : সুমন ঘোষ

কেন তিনি 'সৌমিত্র-জায়া'? দীপা চট্টোপাধ্যায় নন শুধু? 

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের গড়ে ওঠার পিছনে অনেক অবদান ছিল দীপা কাকিমার, তিনি স্বতন্ত্র : সুমন ঘোষ
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং দীপা চট্টোপাধ্যায়। ইনসেটে পরিচালক।
Follow Us:
| Updated on: Apr 04, 2021 | 1:14 PM

তাঁর পরিচয় কি শুধুই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী? ব্যাডমিন্টনে একসময় বাংলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা দীপা চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে এই প্রশ্ন বারেবারেই ঘুরছে নেটিজেনদের একাংশের মনে। সংবাদমাধ্যমের হেডলাইন থেকে সোশ্যাল মিডিয়া–  কেন তিনি ‘সৌমিত্র-জায়া’? দীপা চট্টোপাধ্যায় নন শুধু?

শনিবার রাত প্রায় তিনটে নাগাদ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন দীপা। কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও শেষ ম্যাচে হার স্বীকার করতে হয় তাঁকে। স্বামী সৌমিত্রর মৃত্যুর মাত্র সাড়ে চার মাসের মধ্যেই প্রয়াত হয়েছেন দীপা। আমেরিকায় বসে প্রিয় দীপা কাকিমার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে শূন্যতায় ডুবে গিয়েছেন পরিচালক সুমন ঘোষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর পোস্টের পর আমেরিকা থেকে TV9 বাংলার সঙ্গে কথা বললেন সুমন। হাতড়ালেন স্মৃতি। সৌমিত্র-জায়া নন, দীপা চট্টোপাধ্যায় যিনি নিজগুণেই জায়গা করে নিয়েছিলেন হৃদয়ে– সে কথাই অকপটে জানালেন পরিচালক।

তাঁর কথায়, “দীপা চট্টোপাধ্যায়কে সাধারণত বলা হয়—- সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী হিসেবেই তাঁর পরিচিতি। কিন্তু আমি মনে করি, তাঁর নিজস্ব পরিচিতি রয়েছে। তিনি একজন ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন৷ আমরা এগুলো দেখি না, যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মত লেজেন্ডের পিছনে কত মহিলা বা পুরুষ থাকেন৷ যাঁরা ক্রমাগত তাঁদের সমালোচনা করেন, সাহস জুগিয়ে যান। সৌমিত্রবাবু আমাকে নিজে কতবার বলেছেন, যে দীপা তাঁকে কীভাবে ক্রিটিসাইজ করেছেন৷ আমি নিজেও দেখেছি তিনি কীভাবে সৌমিত্রবাবুকে অনুপ্রানিত করতেন।” দীপা চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়াতেও একটি পোস্ট করেন সুমন।

পরিচালকের কথায়,  “সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় হওয়ার অনেক আগে থেকে ওঁদের সম্পর্ক। পরবর্তীকালে আমি ওঁদের সন্তানের মতো হয়ে গিয়েছিলাম৷ যার জন্য এই খবরটা আমার কাছে ভীষণ বেদনাদায়ক। সৌমিত্রবাবু চলে যাওয়ার পরও, দীপা কাকিমার সঙ্গে ফোনে কথা বলতাম। ভরসা দিতাম। রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে থাকতেন। বারবার বলতাম, সামনের দিকে তাকাতে হবে। কত বছরের সম্পর্ক। সৌমিত্রবাবু প্রথমে চলে গেলেন। তারপর দীপা কাকিমাও চলে গেলেন। এই শূন্যতা আমার কাছে মেনে নেওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ছে।” দীপা চট্টোপাধ্যায়কে কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। দেখেছেন তাঁর নিজস্ব পরিচিতি কতটা শক্তপোক্ত। বাঙালি আইকনের স্ত্রী হয়েও দেখেছেন তাঁর স্বতন্ত্রতা। তিনি বলেন, ” দীপা চট্টোপাধ্যায়ের নিজস্ব একটা পরিচিতি ছিল, যেটা খুব শক্তপোক্ত। আমার মনে হয় এটা মানুষের জানা দরকার। উনি শুধু এক লেজেন্ডের স্ত্রী ছিলেন না। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের গড়ে ওঠার পিছনেও অনেক অবদান ছিল তাঁর। আমিও অনেক কিছু জেনেছি ও শিখেছি দীপা কাকিমার থেকে। সেই শেখা সৌমিত্রবাবুর পরিচিতি থেকে বেরিয়ে এসে শেখা। আমি কোনওদিনও ভুলতে পারব না৷”

প্রসঙ্গত,  সাহিত্যিক টাবিথা কিং ও তাঁর স্বামী সাহিত্যিক স্টিফেন কিং সাড়ে বারো লক্ষ মার্কিন ডলার দান করেন জিনোলজি সংক্রান্ত গবেষণায় যুক্ত বস্টনের একটা সংস্থাকে। সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়, “স্টিফেন কিং ও তাঁর স্ত্রী” এর এই দান নিয়ে। টাবিথা কিং প্রতিবাদে লিখলেন, “ওয়াইফ’ একটা ‘রিলেশনশিপ স্টেটাস’ এটা কোনও ‘আইডেন্টিটি’, অর্থাৎ পরিচিতি নয়। সুমনে যেন এই টাবিথা কিংয়ের সেই প্রতিবাদকেই স্মরণ করায়। যে প্রতিবাদের সরণি দিয়ে বারবার হেঁটেছিলেন দীপা নিজেও৷