Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Review: ‘নায়ক’ শর্মিলা, ঋতুপর্ণার যোগ্য সঙ্গতে ‘পুরাতন’ সূক্ষ্ম, সংবেদনশীল হওয়ার পাঠ পড়ায়

ছবির প্রধান তিন চরিত্র অতীতের যে উষ্ণতা খুঁজছে, সেটা মিলে যাওয়ার কারণে কীভাবে বর্তমানে বাঁচার স্বাদ ফিরে পাবে তারা, তা নিয়েই ছবিটা। আমাদের চারপাশে বয়স্ক মানুষদের ঘিরে দুই প্রজন্মের প্রধান যে টানাপোড়েন, তার আধারে সুমন যে বার্তা দিয়েছেন ছবিতে, তা পাথেয় করে জীবনে অনেকটা এগিয়ে যাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস করি।

Review: 'নায়ক' শর্মিলা, ঋতুপর্ণার যোগ্য সঙ্গতে 'পুরাতন' সূক্ষ্ম, সংবেদনশীল হওয়ার পাঠ পড়ায়
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 13, 2025 | 1:04 PM

পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে। কথাটা প্রায়শই বলি আমরা। তবে কতটা উপলব্ধি থেকে বলি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। ‘পুরাতন’ সেই ছবি যা এই দর্শন মজ্জাগত করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। যে সমাজে আমরা আজকাল বাঁচছি, সেখানে বড্ড কোলাহল। যা চড়া দাগের, তাই বিকোচ্ছে। এটা যেন এক ফাঁদ। যা বিকোচ্ছে, তা চড়া দাগের বলে, সেটার পিছনে ছুটে আমরাও কিছু চড়া দাগের ইনস্টাগ্রাম রিলে হয়তো ডুবে যাচ্ছি। অথচ আমাদের মন পড়ে আছে শান্ত, সূক্ষ্ম কিছু মুহূর্তের কাছে। চড়া দাগের সব কিছু বেশি করে পেয়েও দিনের শেষে কোথাও অতৃপ্তি তাড়া করছে আমাদের। সেই ছটফটানি থেকে বেরোতে গেলে, ‘পুরাতন’ দেখতে হবে।ঢাকের আওয়াজ হয়তো বছরে পাঁচটা দিন ভালো। কিন্তু সারা বছর জীবনের দৃশ্যগুলোর আবহসঙ্গীত কি ঢাকের বাদ্যি তৈরি করতে পারে? তানপুরা বা গিটারের কাছেই ফিরতে হয়। সেই খোঁজে পুরাতন ছবির তিন চরিত্র।

শহরের কোলাহল থেকে দূরে এক বাগান বাড়িতে থাকে মা। এই চরিত্রে শর্মিলা ঠাকুর। যত বয়স হচ্ছে, বলিরেখা যত সমৃদ্ধ করছে তাকে, তত সে ফিরে যাচ্ছে অতীতে। একটা সময় সে অতীতে বাস করতে শুরু করে। ডাক্তারি ভাষা এই অবস্থাকে একভাবে ব্যাখ্যা করে। তবে পরিচালক সুমন ঘোষের চিত্রনাট্যের বুনোট এমন, এই অবস্থা যেন একটা রূপক। যা শুধু এক প্রজন্ম নয়, সব প্রজন্মের উপর আয়না ধরে। ছবিতে মেয়ের চরিত্রে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। কর্পোরেট অফিস যাকে সাফল্যে ভরিয়ে দিচ্ছে। অর্থ, যশ, খ্যাতি দিচ্ছে। কিন্তু মায়ের মন পড়ার সময় দিচ্ছে না। ঋতুপর্ণার বরের চরিত্রে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। বর-বউয়ের সখ্য শুরুর সময় যে ভাব ছিল, এখন সেটা ফিকে। তারাও কি অতীতের সেই প্রেমে পড়ার উত্তেজনাতে ফিরতে চায়? লক্ষণীয়, ইন্দ্রনীলের চরিত্রটিও একটা বিশেষ কারণে অতীত হাতড়াচ্ছে।

ছবির প্রধান তিন চরিত্র অতীতের যে উষ্ণতা খুঁজছে, সেটা মিলে যাওয়ার কারণে কীভাবে বর্তমানে বাঁচার স্বাদ ফিরে পাবে তারা, তা নিয়েই ছবিটা। আমাদের চারপাশে বয়স্ক মানুষদের ঘিরে দুই প্রজন্মের প্রধান যে টানাপোড়েন, তার আধারে সুমন যে বার্তা দিয়েছেন ছবিতে, তা পাথেয় করে জীবনে অনেকটা এগিয়ে যাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস করি। শর্মিলা-ঋতুপর্ণার কিছু দৃশ্য আজীবন ভোলা যাবে না। যেমন ‘উনিশে এপ্রিল’ ভুলতে পারি না। যেমন ‘উত্‍সব’ ভুলতে পারি না।

ছবির ‘নায়ক’ শর্মিলা। তিনি মনের দিক থেকে অত্যন্ত আধুনিক। সেই ছাপ রাখলেন বাড়তি মেকআপ ছাড়া চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলে। ঋতুপর্ণা ভালো অভিনেত্রী। শর্মিলার পাশে তিনি উজ্জ্বল। ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তর কাজ মুগ্ধ করেছে। একফোঁটা বেশি বা কম নয়, ইন্দ্রনীলের মাপবোধ ছবির সম্পদ। বৃষ্টি রায়, একাবলী খান্না বা শুভ্রজিত্‍ দত্ত, সকলেই ভালো। বৃষ্টি চোখের মাসকারা অবশ্য কম হতে পারত। ছবিতে বাক্সবন্দি হয়ে আছে কিছু। সে রহস্যের জট কতটা ছাড়ল তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেল।

এই ছবি অতীত সম্পর্কে স্বীকারোক্তির মুখে দাঁড় করায় চরিত্রগুলোকে। আমাদের সকলের জীবনেই এমন অনেক স্মৃতি থাকে, যা গলায় বিঁধে থাকে। ছবির এই ভাবনার সঙ্গেও ভীষণভাবে একাত্মবোধ করবেন দর্শকরা। ছবি যে জায়গায় শেষ হয়, সেটা দেখে সুমনের মাপবোধের প্রশংসা করতে হয়। সূক্ষ্ম হওয়ার বার্তা দেয় যে ছবি, সেখানে পরিচালক যে সংযম, সূক্ষ্মতার ছাপ রাখলেন, তা বড্ড দরকারি ছিল। ছবির চিত্রগ্রহণ নজরকাড়া। অন্য মাত্রা পেয়েছে ছবিটি আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্তর সম্পাদনায়।

যা কিছু পুরোনো, তা দুমড়ে ভেঙে না ফেলে, সেই ভিতের উপর কীভাবে নতুন নির্মাণ জীবনকে সুন্দর করে, তার পাঠ পড়াতে সক্ষম ছবিটা। এমন ছবির প্রযোজক হওয়ার জন্য ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত-র ঠিক কী পাওনা জানা নেই। বরং বলা যায়, বাংলা ছবির দর্শককে ঋণে জড়িয়ে নিলেন নায়িকা।