Exclusive: ‘রেগে থাকবেন, কাউকে ছেড়ে কথা বলবেন না’, কুণাল মুখ খুলতেই মন্তব্য সৃজিতের
এই বিতর্ক কেবল পুজো ঘিরেই আলোচনায় উঠে এসেছে এমনটা নয়। চলতি বছর ১৫ অগাস্ট ছবি মুক্তি ঘিরেও একই সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল বাংলা ছবিকে। যা ঘিরে নন্দনে তড়িঘড়ি ডাকা হয়েছিল বৈঠকও। প্রেক্ষাগৃহে বাংলা ছবির শো বাড়ানোর দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়, দেব, প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা, প্রযোজক নিশপাল সিং রানে, পরিচালক-অভিনেতা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় আর পরিচালক অভিনেতা সৃজিত মুখোপাধ্যায়।

চলতি বছর পুজোর বক্স অফিসে মুক্তি পেতে চলেছে একযোগে চারটি ছবি–‘রক্তবীজ ২’, ‘দেবী চৌধুরাণী’, ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’ এবং ‘রঘু ডাকাত’। তবে মুক্তির আগেই এবার সিনেমাহলে শো পাওয়া ঘিরে টলিপাড়ায় নয়া বিতর্ক। ১৬ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার রাজনীতিবিদ কুণাল ঘোষের এক পোস্ট সেই জল্পনায় ঢালল ঘি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি দাবি করলেন, চলতি বছর চার ছবির মধ্যে সিনেমাহল-দখল লড়াইয়ে অরাজনৈতিকভাবে এগিয়ে এক ছবি। আর তা ঘিরেই দিনভর জোর আলোচনা।
কী লিখলেন কুণাল ঘোষ?
“টলিউডে চুক্তিভঙ্গের ইঙ্গিত। বাংলার সিনেমার স্বার্থে ঠিক হয়েছিল পুজোয় আসা সবক’টি ছবি প্রথমে সমান সুযোগ পাবে। তারপর দর্শকের সাড়া অনুযায়ী বা ব্যবসা অনুযায়ী হল মালিকরা সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু, যা খবর, ‘প্রভাবশালী’ একটি ছবি বাড়তি শো পাচ্ছে একাধিক হলে শুরু থেকেই। ‘রক্তবীজ ২’র মতো প্রথম পর্ব সুপারহিট হওয়া ছবিকেও কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গোড়া থেকে। এটা কাম্য নয়। শুরুটা সবাই সমান সুযোগ পাক। তারপর দর্শকের বিচার। সেটা না হলে এত বৈঠকের মানে কী? যাঁরা বৈঠক করেছিলেন, তাঁরা এখন কী করছেন? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে নজর দিন। হল মালিকরাও বিষয়টায় নিরপেক্ষতা রাখুন। চারটি সিনেমা, রক্তবীজ ২, রঘু ডাকাত, দেবী চৌধুরানী, যত কাণ্ড কলকাতাতেই সমান সুযোগ পাক আত্মপ্রকাশে, তারপর দর্শকের বিচারে দৌড় চলুক। একটা ছবি নেপথ্য প্রভাবে শুরুর দিন থেকে বাড়তি শো পাবে, এসব হলে তার প্রতিবাদও হবে।”
এখানেই শেষ নয়, শেষে তিনি স্পষ্ট করে দিলেন, এটি তাঁর সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পোস্ট। বাংলা ছবির একজন দর্শক হিসেবে। সেন্সর বোর্ড ও ইমপার প্রাক্তন সদস্য হিসেবেও। এরপরই বিষয়টা নজরে আসে প্রযোজক রাণা সরকারের। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পাল্টা জবাব দিতে হাজির।
পাল্টা রাণা সরকার তুললেন একাধিক প্রশ্ন
“দেব বিরোধী কেন কুণাল ঘোষ ? রঘু ডাকাতের পিছনে লাগছেন কেন কুণাল ঘোষ ? বাংলা সিনেমা নিয়ে এখন এত কথা কেন বলেন কুণাল ঘোষ ? কুণাল ঘোষের পিছনে টলিউডের কোন প্রোডাকশন হাউস ? ২০২৬ বিধানসভা ভোটের আগে কুণাল ঘোষের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বিষয়ে কথা বলা কি কোনও দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি ? ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির লোক হিসেবে না, একজন সাধারণ রাজনৈতিক সচেতন বাঙালি হিসেবে আমার এই প্রশ্ন।”
এদিন সকাল থেকে রাণা সরকার ও কুণাল ঘোষের এই কাজিয়া কারও নজর এড়ায়নি। আর সেই প্রসঙ্গে TV9 বাংলার পক্ষ পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, প্রেক্ষাগৃহে শো দখল লড়াই প্রসঙ্গে তিনি বললেন, “রেগে থাকবেন। কাউকে ছেড়ে কথা বলবেন না।” নাহ, কুণাল ঘোষ প্রসঙ্গে নয়, বরং বাংলা ছবি নিয়ে এই তর্জাকে বেশ সমর্থন করলেন পরিচালক। গ্রহণ করলেন পজিটিভ ভাবেই। কারণ তাঁর লক্ষ্যে বাংলা ছবি ঘিরে সাধারণের আলোচনাই মূল। তাতে আদপে লাভ বাংলা ছবিরই।
কী বললেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়?
“এই প্রতিযোগিতাটা ২০১০ সাল থেকেই চলছে। বিশেষ করে চলছে ২০১৪-র পর থেকে। ততদিন পর্যন্ত পুজোয় এতটা ভিড় ছিল না। কিন্তু এই চারটে দিন এতটা লোভনীয় হয়ে যাওয়ার পর প্রযোজকরা এত বেশি এই সময়টাতেই লগ্নি করে থাকে, আর তাতে এত বেশি ফেরত আসে, যে স্বাভাবিকভাবেই অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী একটা ভিড় জমছে। এখন আমরা কিছু নিয়ম ঠিক করেছি, ইন্ডাস্ট্রির সকলে মিলে। একটু সহযোগিতা মাথায় রেখে বিষয়গুলো ঠিক করব। যাতে বিষয়টা পক্ষপাতদুষ্ট না হয়। আবার এটাও মাথায় রাখতে হবে, ডিস্ট্রিবিউটররা পুরোনো ট্র্যাক রেকর্ড দেখেই শো নির্ধারণ করবেন। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। এটাই হয়ে এসেছে, এটাই হবে। তবে এটা নিয়ে রাগারাগিটা বন্ধ করবেন না। আমি চাই এটা চলুক। কারণ তাতে বাংলা ছবি নিয়ে আলোচনা বাড়ে। তাতে বাংলা ছবির ভালই হয়। ফেসবুকে গরম-গরম রাগারাগি, এতে আদপে লাভ বাংলা ছবির। কাজেই রেগে থাকবেন। কাউকে ছেড়ে কথা বলবেন না।”
প্রসঙ্গত, এই বিতর্ক কেবল পুজো ঘিরেই আলোচনায় উঠে এসেছে এমনটা নয়। চলতি বছর ১৫ অগাস্ট ছবি মুক্তি ঘিরেও একই সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল বাংলা ছবিকে। যা ঘিরে নন্দনে তড়িঘড়ি ডাকা হয়েছিল বৈঠকও। প্রেক্ষাগৃহে বাংলা ছবির প্রাইম টাইম শো বাড়ানোর দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়, দেব, প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা, প্রযোজক নিশপাল সিং রানে, পরিচালক-অভিনেতা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় আর পরিচালক অভিনেতা সৃজিত মুখোপাধ্যায়। সেই মর্মেই বৈঠক। যে আলোচনায় উঠে এসেছিল একাধিক বিষয়। যার মধ্যে অন্যতম হল, বাংলা ছবির শোয়ের সংখ্যা। বাংলা ছবিকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
মাস পোহাতেই পুজোর মুক্তি ঘিরে লড়াই?
এবার সেই ঝড় কাটতে না কাটতেই পুজোর মুক্তিতে নয়া গুঞ্জন। শোনা যাচ্ছে মুক্তি পেতে চলা প্রতিটা ছবি নাকি সমান গুরুত্ব পাচ্ছে না প্রেক্ষাগৃহে। সেই বিতর্কেই ঘি ঢালেন রাজনীতিবিদ কুণাল ঘোষ। মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর করা এক পোস্ট ঘিরে তৈরি হয় নয়া বিতর্ক।
এই প্রসঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির অভিনেতাদের কী মত? খোঁজ নিল TV 9 বাংলা
চলতি বছর পুজোর ছবি মুক্তির তালিকায় রয়েছে অভিনেতা আবীর চট্টোপাধ্যায়ের ছবি। এই প্রসঙ্গে তাঁর মত– যে ক’টা ছবি মুক্তি পাচ্ছে, তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবেই। তা নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা পর্যালোচনা সবকিছু চলবে। কারও একটু মন খারাপ হবে, কারও একটু রাগ হবে। তবে এই যে ‘কম্পিটিশন’, এটা ভাল প্রতিযোগিতা, এটা শত্রুতা নয়। আর আমাদের মনে হয়, এটাও পাশাপাশি ভাবতে হবে, শুধু যদি আমরা ছুটি নির্ভর হয়ে উঠি, তা হলে একটু মুশকিল হবে। চেষ্টা করে যেতে হবে বছরের অন্যান্য সময়ও যেন মানুষ ছবি দেখেন। আমাদের সকলের উদ্দেশ্য বাংলা ছবি মানুষ বেশি করে দেখুন।”
একই প্রসঙ্গে মুখ খুললেন অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরী, তাঁর কথায়, “আমি বরাবরই বলে এসেছি যে আমাদের তো ছোট ইন্ডাস্ট্রি, সেখানে সবাই মিলে বসে যদি এটা আমরা ঠিক করে নিতে পারি, তা হলে সকলেরই মঙ্গল। পুজোতে আমরা নিজেদের জায়গাটা মজবুত করে ফেলেছি। দেখা যাচ্ছে হিন্দি ছবি আমাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারছে না।এমনও হতে পারে চারটের বদলে তিনটে ছবি নিয়ে এলাম আমরা। কোন তিনটে ছবি আসবে সেটা নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিলেই ভালো।”
